আয়োজন: সংসদে বাজেট পেশের আগে নথি ভর্তি বস্তার সারি। শনিবার নয়াদিল্লিতে। এপি
অর্থমন্ত্রীর দীর্ঘতম বক্তৃতাতেও মন গলেনি বাজারের। শেয়ারে লগ্নিকারীরা এক রকম প্রত্যাখ্যানই করেছেন নির্মলা সীতারামনের বাজেটকে। শনিবার বিশেষ লেনদেনের দিনে বাজেট শেষে সেনসেক্স দেখেছে এক দশকের বৃহত্তম পতন। প্রায় ৯৮৮ পয়েন্ট পড়ে সূচক ফের ঢুকে পড়েছে ৩৯ হাজারের ঘরে। দাঁড়িয়েছে ৩৯,৭৩৫.৫৩ অঙ্কে। যে সূচক ৪২ হাজারের দিকে এগোচ্ছিল। দু’বার লেনদেনের মাঝপথে তা ছুঁয়েও এসেছে। শনিবার ১২ হাজার ভেঙে নিফ্টি-ও থিতু হয় ১১,৬৬২ অঙ্কে।
অনেকে বলছেন এমন বাজেটে বাজারের পতন প্রত্যাশিতই ছিল। তবে লগ্নিকারীরা কিছুটা উদ্বিগ্ন। যদিও একটা কথা না-বললে নয়, শেয়ার বাজারে লগ্নির পথ চওড়া হয়েছে এতে। শেষ তিনটি কাজের দিনে সেনসেক্স কমবেশি ১৫০০ পয়েন্ট নামায় সুযোগ এসেছে কম দামে ভাল শেয়ার পকেটে পোরার। বাজেটের আগের দু’দিন বাজার পড়ার কারণ অবশ্য ছিল চিনের করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক।
দেখে নেওয়া যাক বাজেট নিয়ে বাজারের অসন্তোষের কারণগুলি—
শিল্পে প্রাণ ফেরানোর ব্যাপারে বাজেটে কোনও স্পষ্ট দিশা নেই।
রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে জাতীয় উৎপাদনের ৩.৮% করা। এতে সরকারের ঋণ বাড়বে। ফলে বাড়তে পারে সুদের হার।
ঋণ বাবদ আয় ধরা হয়েছে ২০%। সুদ বাবদ খরচ ধরা হয়েছে ১৮%, যখন প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বরাদ্দ মাত্র ৮%।
মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চোখে পড়েনি। অথচ তা মাথা না-নামালে সুদ কমার সম্ভাবনা থাকবে না।
ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে আয়ের স্তর এবং করের হারে পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। যা তুলে ধরা হয়েছে চলতি আয়কর হারের বিকল্প হিসেবে। বলা হয়েছে, এতে মানুষের লাভ হবে। তবে নতুন কর কাঠামোয় ঢুকতে হলে ছাড়তে হবে বহু করছাড়। এর ধাক্কা কিন্তু লাগতে পারে শেয়ার বাজার এবং মিউচুয়াল ফান্ডে। যেমন, করদাতা নতুন হারে কর দিলে ৮০ সি ধারায় ছাড় বাতিল তাঁর জন্য। এতে লগ্নি কমবে কর সাশ্রয়কারী ইকুইটি-নির্ভর ইএলএসএস প্রকল্পে। ফলে এই পথে লগ্নিতে ভাটা দেখা দেবে শেয়ার বাজারেও।
আয়করের নতুন হার নিয়ে জমাট বাঁধা ধোঁয়াশা। বিভিন্ন জনপ্রিয় ছাড় বাদ দিলে দেখা যাচ্ছে, যাঁদের ১৫ লক্ষ টাকা বা তার বেশি আয়, তাঁদের অনেকেরই ক্ষতি হবে বিকল্প বাছলে।
ভাবা হয়, সংস্থাগুলিকে ডিভিডেন্ড বণ্টন কর (ডিডিটি) থেকে রেহাই দেওয়ায় আনন্দে আপ্লুত হবেন লগ্নিকারীরা। আদতে হয়েছে উল্টোটা। ডিডিটি, সারচার্জ এবং সেস নিয়ে সংস্থাগুলি এখন সরকারকে দেয় মোট ডিভিডেন্ডের ২০.৩৫%। এই কর তুলে নেওয়ায় সব সংস্থা যে সেই অনুপাতে ডিভিডেন্ড বাড়াবে, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। অন্য দিকে, এ বার থেকে ডিভিডেন্ডের উপর কর দিতে হবে সংস্থার শেয়ারহোল্ডারদের। যাঁরা ২৫% এবং ৩০% করের আওতায় পড়েন, তাঁদের তো ডাহা লোকসান!
গাড়ি ও আনুষঙ্গিক শিল্পের উপর অনেকটা নির্ভর করে অর্থনীতি। আশা ছিল, এই শিল্পে প্রাণ ফেরানোর চেষ্টা থাকবে বাজেটে। কিন্তু তা দেখা যায়নি।
অর্থাৎ, বাজেটে বাজারের অসন্তুষ্ট হওয়ার বহু কারণই প্রতিফলিত হয়েছে সূচকের তাৎক্ষণিক পতনে। তবে এলআইসি বিলগ্নির সিদ্ধান্ত বাজারের সমর্থন পেতে পারে। অনেক বেসরকারি বিমা সংস্থা বাজারে নথিবদ্ধ হলেও, দেশের বৃহত্তম জীবন বিমা সংস্থা এখনও ১০০% সরকারের মালিকানাধীন। এলআইসির কিছু শেয়ার বেচে সরকার বাজার থেকে মোটা টাকা তুলতে পারবে বলে লগ্নিকারীদের অনুমান। কর্মী ও পলিসিহোল্ডাররা ক্ষুব্ধ এই সিদ্ধান্তে। কিন্তু বাজার মনে করে, নথিবদ্ধ হলেও এই বিমা সংস্থার নিয়ন্ত্রণ থাকবে সরকারের হাতেই। বরং এতে কর্তৃপক্ষের দায়বদ্ধতা বাড়বে, আসবে পরিচালন ব্যবস্থায় আরও স্বচ্ছতা।
বাজেট বিশ্লেষণ এখনও বহাল। প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে আজ বাজার খুললে। বহাল সংস্থার আর্থিক ফল প্রকাশ। গত সপ্তাহে ভাল ফল উপহার দিয়েছে বজাজ ফিনান্স, আইটিসি, ইন্ডিয়ান অয়েল, টাটা মোটরস ইত্যাদি।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy