ঋণ দেওয়া নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে বাণিজ্যিক ব্য়াঙ্কগুলির তরজা।
ঝুঁকি এড়াতে চূড়ান্ত রক্ষণাত্মক হয়েই ব্যাঙ্কগুলি ধার দিচ্ছে না— বৃহস্পতিবার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস এই অভিযোগ তুলতেই ব্যাঙ্কগুলির তরফে ধেয়ে এল পাল্টা তির। তারা এই অভিযোগ তো নস্যাৎ করলই, চাহিদা ফেরাতে না-পারার জন্য কাঠগড়ায় দাঁড় করাল সরকারকেও। আর অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে দিনভর সরগরম রইল ব্যাঙ্কিং মহল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আরবিআই গভর্নর ও ব্যাঙ্ক কর্তাদের মধ্যে এমন তরজা সচরাচর দেখা যায় না।
এ দিন শিল্পের লগ্নি না-বাড়ার জন্য ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কগুলির চূড়ান্ত ঝুঁকি এড়ানোর প্রবণতাকেই দায়ী করেন শক্তিকান্ত। হুঁশিয়ারি দেন, এতে তারা নিজেরাই নিজেদের পথের কাঁটা হচ্ছে। কারণ আয় কমছে। তবে অভিযোগ মানতে নারাজ ব্যাঙ্ক কর্তাদের যুক্তি, বাজারে চাহিদা নেই বলে লগ্নি করছে না সংস্থাগুলি। ফলে ঋণ চাওয়া হচ্ছে কম। তাঁদের বার্তা, চাহিদা বাড়ানো ও অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার দায় সরকারের, ব্যাঙ্কের নয়।
ঋণ প্রতারণা বা অনাদায়ি থাকার ঘটনাগুলির দায়ও এ দিন ব্যাঙ্কগুলির ঘাড়েই চাপান শক্তিকান্ত। বলেন, ঋণ মঞ্জুরের সময় ও তার পরের খোঁজখবর, দু’ক্ষেত্রেই দক্ষ হাতে ঝুঁকি সামলাতে পারেনি বহু ব্যাঙ্ক। ফলে প্রতারণা বেড়েছে। জালিয়াতি রুখতে কার্যকর ব্যবস্থা চালু ও ঝুঁকি আগাম আঁচ করে এগোতে বলেছেন তিনি।
সমস্যা
• ঋণের চাহিদা বাড়িয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে দেড় বছরে ২৫০ বেসিস পয়েন্ট সুদ ছেঁটেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
কিন্তু বাস্তবে ঋণ বৃদ্ধির হার নেমেছে ৬
শতাংশের নীচে।
• গত অর্থবর্ষে ঋণ জালিয়াতি দ্বিগুণ হয়ে ১.৮৫ লক্ষ কোটি টাকা।
• সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, ঝুঁকি এড়াতেই ঋণে বাঁধ ব্যাঙ্কের।
শক্তিকান্তের বার্তা
• ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে বাড়তি রক্ষণাত্মক হলে ব্যাঙ্কেরই আয় কমবে।
• ঝুঁকির দিকগুলি আগাম চিহ্নিত করলে রোখা যাবে জালিয়াতি।
• ব্যাঙ্কের হিসেবের খাতায় চাপ কমাতে পুঁজি সংগ্রহ বহাল রাখা জরুরি।
ব্যাঙ্কের পাল্টা
• রক্ষণাত্মক হওয়ার প্রশ্ন নেই। বাজারে চাহিদা কমাই মূল সমস্যা। যার সমাধান করতে পারে সরকার।
• ঋণের চাহিদা কমার জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কড়া এনপিএ বিধিও দায়ী। দেউলিয়া বিধি ও অতিমারি সমস্যা বাড়িয়েছে।
গভর্নরের এমন মন্তব্যের পরেই এসেছে পাল্টা জবাব। এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের এমডি আদিত্য পুরী বলেছেন, তাঁরা ঝুঁকি নিতে ভয় পান না। বরং ঋণ দেন বুদ্ধি করে। না-হলে পরে আঙুল উঠবে। তাঁদের সুদ বাবদ আয় এপ্রিল-জুনে ২০% বেড়েছে জানিয়ে পুরীর দাবি, ঋণ দেওয়ার বহর যথেষ্ট ভাল। অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের ঋণও ওই সময় ১৬% বেড়েছে জানিয়ে এমডি-সিইও অমিতাভ চৌধুরীর বার্তা, চাহিদা না-বাড়লে কিন্তু এই বৃদ্ধি থমকাবে। চাহিদায় ভাটা ও অনুৎপাদক সম্পদ (এনপিএ) নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কড়া নীতিকে কাঠগড়ায় তুলেছেন পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের এমডি-সিইও মল্লিকার্জুন রাও। ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের এমডি-সিইও রাজকিরণ রাইয়ের বিস্ময়, ‘‘জানি না কেন দোষ দেওয়া হচ্ছে ঝুঁকি এড়াচ্ছি বলে, যখন ভাল প্রকল্পেই শুধু ধার দিচ্ছি। চাহিদাও তো তলানিতে।’’ আর স্টেট ব্যাঙ্ক চেয়ারম্যান রজনীশ কুমারের আঙুল লগ্নির খরা ও অর্থনীতির সঙ্কটের দিকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy