Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

সংঘাত কমানোর অস্ত্র হাতে কাজও, দাওয়াই দিলেন অর্থনীতিবিদেরা

আইএমএফের রিপোর্ট অনুযায়ী, এ সবের পাশাপাশি পশ্চিম এশিয়া এবং উত্তর আফ্রিকার বেশ কিছু দেশে সামাজিক অস্থিরতার কারণ থমকে যাওয়া বৃদ্ধি আর বেকারত্বের চড়া হার। 

উদ্বেগ: চাকরির আকাল।  ভিড় কর্মপ্রার্থীদের। ফাইল চিত্র

উদ্বেগ: চাকরির আকাল। ভিড় কর্মপ্রার্থীদের। ফাইল চিত্র

ইন্দ্রজিৎ অধিকারী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৯ ০২:৫৮
Share: Save:

বেকারত্ব আর ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতির ‘বিষাক্ত মিশেল’ সামাজিক সংঘাত তৈরির ইন্ধন জোগাচ্ছে পশ্চিম এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে। দানা বাঁধছে প্রতিবাদ। সোমবার এমনই ছবি উঠে এসেছে আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের (আইএমএফ) রিপোর্টে। যা দেখে অর্থনীতিবিদদের একাংশ বলছেন, ভারতের সঙ্গে ওই আরবি মুলুকের অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক তুলনা টানা যায় না ঠিকই। কিন্তু অর্থনীতিতে ধস নাগাড়ে কাজ কাড়তে শুরু করলে, সামাজিক অস্থিরতা বাড়ে। অসাম্য ক্রমাগত বাড়লে, তাল মিলিয়ে ঊর্ধ্বমুখী হয় অপরাধ প্রবণতা। তাই সেই সম্ভাবনাকে অঙ্কুরেই বিনাশ করতে বৃদ্ধির চাকায় গতি ফেরানোর পাশাপাশি কেন্দ্রকে অনেক বেশি কাজের সুযোগ তৈরির বন্দোবস্ত করতে পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা।

লন্ডন স্কুল অব ইকনমিক্সের অধ্যাপক মৈত্রীশ ঘটক বলেন, ‘‘সহজবোধ্য কারণেই থমকে যাওয়া অর্থনীতিতে সামাজিক সংঘাত বাড়ে। যত জনকে খাবার জোগানো সম্ভব, তার থেকে অনেক বেশি জন খাবারের লাইনে দাঁড়ালে, শেষমেশ তা না-পাওয়ার আশঙ্কায় সেখানে ঝগড়াঝাঁটি লাগা খুবই সম্ভব। ঠিক তেমনটাই ঘটে বাজারে থাকা চাকরির তুলনায় চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা বেশি হলে।’’ তাঁর মতে, তখন বিষয়টি হয়ে দাঁড়ায় অনেকটা শূন্য অঙ্কের খেলা বা ‘জিরো সাম গেমের’ মতো। যেখানে সকলে ভাবতে শুরু করেন যে, অন্য কেউ তা পাচ্ছেন তাঁর নিজের না-পাওয়ার বিনিময়ে। তখন সবাই মিলে সংগঠিত হয়ে চাকরি কেন কম, সেই প্রশ্ন না-তুলে বরং কী কী অজুহাতে অন্যদের তুলনায় নিজের দাবিকে অগ্রাধিকার দেওয়া যায়, সেই ফাঁক খোঁজার চেষ্টা করেন। তা সে অভিবাসী বা অন্য রাজ্যের মানুষকে বহিরাগত হিসেবে দেখাই হোক, বা জাতি, ধর্ম ইত্যাদির দাবিতে ভেদাভেদ করে সংখ্যাগুরু গোষ্ঠীর চাহিদাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার দাবি।

মার্কিন-চিন বাণিজ্য যুদ্ধ, বিশ্ব বাজারে তেলের দরে ওঠা-নামা, ব্রিটেনের ইউরোপ ছাড়া (ব্রেক্সিট) নিয়ে টানাপড়েন তো আছেই। আইএমএফের রিপোর্ট অনুযায়ী, এ সবের পাশাপাশি পশ্চিম এশিয়া এবং উত্তর আফ্রিকার বেশ কিছু দেশে সামাজিক অস্থিরতার কারণ থমকে যাওয়া বৃদ্ধি আর বেকারত্বের চড়া হার।

ভারতের অর্থনীতি ঝিমিয়ে পড়লেও, বৃদ্ধি এখনও ওই সমস্ত দেশের তুলনায় বেশি। তুলনীয় নয় রাজনৈতিক পরিস্থিতিও। কিন্তু তবু বেকারত্বের কামড় টের পাচ্ছেন মানুষ। শুধু গাড়ি শিল্পেই কাজ খুইয়েছেন কয়েক লক্ষ কর্মী। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম আগেই বলেছিলেন, এই কাজের অভাবই উস্কে দিতে পারে অপরাধ প্রবণতাকে। যদিও সরকারের দাবি, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তারা।

অনেক অর্থনীতিবিদ বলছেন, ভারত যে আর্থ-রাজনৈতিক বিন্দুতে দাঁড়িয়ে, তাতে ক্ষোভের বিস্ফোরণে বিপ্লবের সম্ভাবনা নেই। কিন্তু সেই সম্ভাবনাকে আরও দূরে ঠেলে দিতে পারে কাজের সুযোগ তৈরি করা পোক্ত অর্থনীতি। কারণ তাঁদের মতে, যে কোনও দেশে জনসংখ্যার বড় অংশের কম বয়সি হওয়া যেমন অর্থনীতির পক্ষে সুবিধাজনক, তেমনই তা বুমেরাং হতে পারে তাঁদের কাজ না থাকলে। অর্থনীতিতে চাহিদা না থাকলে, বিক্রিবাটা হয় না। ব্যবসায় ভাটা পড়ে। চাহিদা না থাকায় নিয়োগ বাড়াতে চায় না সংস্থাও। ফলে কাজের সুযোগে টান পড়ে। তখন সমাজে সংঘাত না হলেও, অন্তত সমস্যা তৈরির সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসির অধ্যাপক লেখা চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘শুধু অর্থনৈতিক কারণে সব সময় সামাজিক সংঘাত তৈরি হয় না। সেই সমস্যার জন্ম দেয় রাজনৈতিক পরিমণ্ডলও। সাধারণ মানুষ যেমন চড়া বৃদ্ধির মুখ দেখা অর্থনীতি কিংবা চাকরি চান, তেমনই রাজনীতিকদের কাছে চান দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ প্রশাসন।’’

আইএসআই-কলকাতার অর্থনীতির প্রাক্তন অধ্যাপক দীপঙ্কর দাশগুপ্তের মতে, শুধু বেহাল অর্থনীতি সামাজিক সংঘাত তৈরি করে, এমন নয়। তাঁর প্রশ্ন, বড় মাপের বিপ্লব ১৯৩০ বা ২০০৮-এর মন্দার সময়েও দেখা গিয়েছে কি? অসাম্য সমাজে অস্থিরতা তৈরি করে বলে মানলেও, সামাজিক বিপ্লবের পিছনে ‘রাজনীতির কেরামতিই’ বেশি দেখছেন তিনি।

অন্য বিষয়গুলি:

Conflict Unemployment Job
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy