Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Sensex

Share Update: বাজার পড়লে ঝুঁকি সামলাতে পারবেন তো? কোনও আর্থিক সূচকই কিন্তু এই দৌড় মানতে পারছে না

বিশেষজ্ঞরা কিন্তু তাঁদের দুশ্চিন্তার কথা বলতে শুরু করেছেন। সাধারণ লগ্নিকারীদের সাবধানে পা ফেলার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

সুপর্ণ পাঠক
শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৪:৩৮
Share: Save:

সেনসেক্স ৬০ হাজার পেরিয়ে গিয়েছে। খবরটা বাসি। ঝুঁকির চিন্তাটা কিন্তু টাটকা। এর অভিঘাত নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। কেউ কেউ দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। কেউ বা বলছেন দেশের জাতীয় উৎপাদন কোভিডের ছোবল থেকে বেঁচে পাঁচ লক্ষ কোটি ডলার ছোঁয়ার স্বপ্নে হাঁটতে শুরু করতেই সেনসেক্স লাফিয়ে বাড়ছে।

পাঁচ লক্ষ কোটি ডলারের জাতীয় উৎপাদনের লক্ষ্য ছোঁয়ার স্বপ্নের দিকে ঝোঁকা অংশের যুক্তি শেয়ার বাজার দেশের আর্থিক ভবিষ্যৎ নিয়ে আশার আয়না। আগামীতে কী হবে বলে লগ্নিকারীরা মনে করছেন তারই প্রতিফলন হল শেয়ার সূচক। আর আজকের সূচক বলছে মানুষ আশাবাদী। এটাই হল সূচকের দৌড় মেনে নেওয়া পক্ষের বক্তব্য।

উল্টো দিকে থাকা বিশেষজ্ঞরা কিন্তু তাঁদের দুশ্চিন্তার কথা বলতে শুরু করেছেন। সাধারণ লগ্নিকারীদের সাবধানে পা ফেলার পরামর্শ দিচ্ছেন। পাল্লা কিন্তু ভারী হচ্ছে তাঁদের দিকেই। বাফে সূচক থেকে অর্থনীতির নানান সূচকের উল্লেখ করে তাঁরা কিন্তু বলছেন, “সাবধান!”

যাঁরা শেয়ার বাজারে মেঘ জমছে বলে মনে করছেন, তাঁদের যুক্তি হল এই মুহূর্তে আর্থিক সব সূচকই কিন্তু বাজারের এই তেতে ওঠার উল্টো দিকে হাঁটছে। তাঁরা বলছেন গত ছ’বছর ধরে গড় জাতীয় উৎপাদনের বৃদ্ধির হার এক টানা পড়েই চলেছে। এর মানে এই মুহূর্তে ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে উৎসাহে ভাটা।

বাজারে ঋণ নেওয়ার বৃদ্ধির হারেও জোয়ার নেই। যা বিনিয়োগকারীদের ব্যবসায়ে লগ্নির উৎসাহে ভাটার সূচক হিসাবে মেনে নিচ্ছেন তাঁরা। সরকার বাজারে ৯ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি টাকার মতো নগদের জোগান বাড়িয়েছে। অথচ রিভার্স রেপোর (এক কথায় ব্যাঙ্কগুলির শীর্ষ ব্যাঙ্কে গচ্ছিত রাখা টাকা) পথে শীর্ষ ব্যাঙ্ককে ৭ লক্ষ কোটি টাকা ফিরিয়ে দিয়েছে ব্যাঙ্কগুলি (স্টেট ব্যাঙ্কের আর্থিক সমীক্ষা অনুযায়ী)। বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি আমাদের সঞ্চয় থেকে টাকা নিয়ে ঋণ দেয়। ঋণের সুদ তাদের আয়ের অন্যতম উৎস। আর সাধারণ বাজারে ঋণের চাহিদা কম থাকলে ব্যাঙ্কগুলি টাকা নিজেদের কাছে ধরে না রেখে রিজার্ভ ব্যাঙ্কে গচ্ছিত রেখে আয়ের চেষ্টা করে।

বাজারে যদি ন’লক্ষ কোটি টাকা নগদের জোগান বাড়ে, আর সাত লক্ষ কোটি টাকা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে ফিরে যায়, তার মানেই হল বাজারে ঋণের চাহিদায় ভাটা। ঋণের চাহিদায় তো তখনই ভাটা আসে যখন বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে সেই ভাবে উৎসাহ বোধ করেন না। আর তাই যদি হয় তা হলে শেয়ার বাজারের দৌড় আর বিনিয়োগের বাজারের অবস্থানের মধ্যে তো একটা বৈপরীত্য থেকেই যাচ্ছে। তেমনটাই বলে মনে করছেন এই বিশেষজ্ঞের দল।

বাজারের এই হঠাৎ তেতে ওঠাই বা কেন তা বুঝতে পারছেন না অনেকেই। ওয়ারেন বাফে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের গুরু। তাঁর কথায় বাজারে সব শেয়ারের দাম একজোট করে তাকে যদি গড় জাতীয় উৎপাদন দিয়ে ভাগ করা যায় এবং শতাংশের হিসাবে তা যদি ক) হঠাৎ বেড়ে যায় এবং খ) তা ২০০-র দিকে হাঁটতে শুরু করে, তা হলে লগ্নি নিয়ে সাবধান হতে হবে।

ভারতে শেয়ার বাজারে বাফে সূচকের ঐতিহাসিক গড় হল ৭৭ শতাংশ। আর এই সূচকই হঠাৎ লাফিয়ে ১০০ ছাড়িয়ে উপরের দিকে দৌড়তে শুরু করেছে। মাথায় রাখতে হবে শেয়ার বাজারে যত সংস্থা নথিভুক্ত তাঁদের সম্মিলিত উৎপাদন, জাতীয় উৎপাদনের একটা ভগ্নাংশ। ভারতের প্রেক্ষিতে (ভারতে এখনও শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত সংস্থা সব সংস্থার অনুপাতে খুবই কম), এই সূচক ১০০ ছাড়ানো মানেই হল, বাজারে শেয়ারের সম্মিলিত মূল্য জাতীয় উৎপাদনের থেকে শুধু বেশিই নয়, শেয়ারের মূল্যায়নও সংস্থার বাস্তব অবস্থান ও ব্যবসার সুযোগের সঠিক আয়না হিসাবে দেখা কষ্টকর হয়ে উঠছে। আর তাই বাজার একটু বেশিই তেতেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Sensex economy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE