বছর বারোর মধ্যেই বিকশিত, অর্থাৎ উন্নত ভারত গড়ে ফেলার বার্তা দিচ্ছে মোদী সরকার। এ বার তাদের চরম অস্বস্তিতে ফেলল ভরতীয়দের আর্থিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা রিপোর্ট। বৃহস্পতিবার বিরোধী শিবিরের তুলে ধরা সেই রিপোর্টে চাঁছাছোলা ভাষায় বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে ৯০% ভারতীয়েরই বাড়তি খরচ-খরচা করার ক্ষমতা নেই। তবে সেটাই যে চাহিদা আরও কমতে থাকার একমাত্র কারণ, তা নয়। অন্যগুলি হল, আর্থিক সঞ্চয় কমে যাওয়া এবং বেশির ভাগ মানুষ কিংবা পরিবারের ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়া।
স্বাভাবিক ভাবেই মোদী সরকারের বিরুদ্ধে অর্থনীতি নিয়ে নতুন করে আক্রমণ শানানোর এমন সুযোগ হাতছাড়া করেনি বিরোধী শিবির। বহু পরিবারের ধারে জড়িয়ে পড়া নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে কংগ্রেসের দাবি, এর প্রধান কারণ প্রকৃত আয় বৃদ্ধি না হওয়া। অথচ সরকার সমস্যাটা স্বীকারই করেনি। দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের মন্তব্য, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সংস্করণে বিকশিত ভারত সাধারণ মানুষের পকেট ফাঁকা করে কোটিপতিদের সিন্দুক ভরছে।
বস্তুত লগ্নিকারী সংস্থা বাম ভে়ঞ্চার্সের সম্প্রতি প্রকাশিত ‘ইন্দাস ভ্যালি বার্ষিক রিপোর্ট, ২০২৫’ নতুন করে অর্থনীতি নিয়ে আশঙ্কা উস্কে দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, দেশের সব থেকে বিত্তবান ১০% মানুষই (প্রায় ১৩-১৪ কোটি) মূলত চাহিদা এবং আর্থিক বৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি। যাঁদের সম্পদ বেড়েই চলেছে। তবে তাঁদের সংখ্যা বাড়ছে না। আরও প্রায় ৩০ কোটি উন্নতির পথে। সম্পদ বাড়তে থাকায় তাঁরা ‘উঠতি ধনী’। সাম্প্রতিক কালে বেশি খরচ করতেও শুরু করেছেন, তবে সতর্ক ভাবে। সমীক্ষা বলছে, এ দেশে তাই ক্রেতার অভাবে কম দামি পণ্য বা পরিষেবা কিংবা সাধ্যের মধ্যে থাকা ফ্ল্যাট-বাড়ি তৈরি কমছে। প্রায় সব সংস্থা বিত্তবানদের কেনার মতো দামি পণ্য বা পরিষেবায় জোর দিচ্ছে।
কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশের মতে, ভারতীয় অর্থনীতি কোভিডের দুর্দশা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল মুলত ঋণে ভর করেই। সংস্থার বদলে সাধারণ মানুষের ধার করা বেড়ে যায়। বর্তমানে যার সুদও চড়া। ফলে বেশির ভাগ মধ্যবিত্ত পরিবার ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শমীকা রবির অবশ্য মত, সমীক্ষার তথ্য যাচাই করা প্রয়োজন। গত ১০ বছরে বরং সব থেকে গরিব ২০% মানুষের সম্পদের মালিকানা বিপুল বেড়েছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)