প্রতীকী চিত্র।
দেশের বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিতে ছোট, মাঝারি ও বড় লকারের বার্ষিক ভাড়া মোটামুটি ২০০০ টাকা থেকে ৮০০০ টাকার মধ্যে (জিএসটি বাদে)। কিন্তু এই অর্থের বিনিময়ে লকারে গচ্ছিত সম্পত্তির সুরক্ষার কতটা দায়িত্ব নিচ্ছে ব্যাঙ্কগুলি? এই প্রশ্ন উঠছিল অনেক দিন ধরেই। গ্রাহকদের এই দাবি, ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের বিভিন্ন পরিবর্তন ও আধুনিক ব্যাঙ্কিং প্রযুক্তি-সহ বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখে এ বার বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ করল রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। লকারের বিষয়ে সংশোধিত বিধির নির্দেশিকা জারি করে সেখানে স্পষ্ট করা হল ব্যাঙ্কের দায়বদ্ধতা। জানানো হল, অগ্নিকাণ্ড, চুরি-ডাকাতি কিংবা কর্মীর প্রতারণার ফলে লকার থেকে গ্রাহকের সম্পত্তি খোয়া গেলে ব্যাঙ্কের দায়বদ্ধতা লকারের বার্ষিক ভাড়ার ১০০ গুণের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। লকার এবং সেই চত্বরের নিরাপত্তার দায়িত্বও ব্যাঙ্ক অস্বীকার করতে পারবে না। তবে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সম্পত্তির ক্ষতি হলে দায়ী হবে না ব্যাঙ্ক। জনৈক অমিতাভ দাশগুপ্ত বনাম ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের মামলায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশও মানা হয়েছে বিধি তৈরিতে।
আগামী ১ জানুয়ারি থেকে সংশোধিত বিধি কার্যকর হবে। নতুনের পাশাপাশি পুরনো গ্রাহকদেরও এর আওতায় আনা হবে। শীর্ষ ব্যাঙ্ক বলেছে, ব্যাঙ্ক মালিকদের সংগঠন ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কস অ্যাসোসিয়েশন (আইবিএ) লকার সংক্রান্ত একটি আদর্শ চুক্তি তৈরি করবে। যা অনুসরণ করতে হবে সমস্ত ব্যাঙ্ককে।
লকার-বিধি সংশোধন
• ব্যাঙ্কের লকার সংক্রান্ত বিধি সংশোধন করেছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক।
• চালু হবে ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে।
• নতুনের পাশাপাশি পুরনো গ্রাহকদের জন্যও এই বিধি কার্যকর হবে।
• একটি মডেল লকার চুক্তি তৈরি করবে আইবিএ। তা সমস্ত ব্যাঙ্ককে গ্রহণ করতে হবে।
গুরুত্ব যেখানে
• অগ্নিকাণ্ড, চুরি-ছিনতাই-ডাকাতি, বাড়ি ভেঙে পড়া, ব্যাঙ্ক কর্মীর প্রতারণায় লকারের সম্পত্তি খোয়া গেলে, ব্যাঙ্কের দায়বদ্ধতা বার্ষিক লকার ভাড়ার ১০০ গুণে সীমাবদ্ধ থাকবে।
• তবে ভূমিকম্প, বন্যার মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা গ্রাহকের ভুলে সম্পত্তির ক্ষতি হলে ব্যাঙ্কের কাঁধে দায় চাপবে না। যদিও লকার ব্যবস্থার দেখভাল এবং ওই চত্বরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে তাদের।
• গ্রাহক যাতে লকারে বেআইনি বা ক্ষতিকারক বস্তু রাখতে না-পারেন, তার জন্য একটি ধারা যোগ হবে সংশোধিত বিধিতে।
• প্রতিটি শাখার খালি লকার এবং অপেক্ষামান গ্রাহকের তালিকা তৈরি করে কোর ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় রাখতে হবে। যাতে লকার বণ্টনে স্বচ্ছতা বাড়ে।
• লকারের ভাড়া নিশ্চিত করতে তার তিন গুণ মূল্যের মেয়াদি আমানত করানোর অনুমতি রয়েছে ব্যাঙ্কগুলির। গ্রাহক টানা তিন বছর ভাড়া না-দিলে প্রয়োজনে বিধি মেনে লকার খুলতে পারে ব্যাঙ্ক।
রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠছে, সংশোধিত বিধি অনুযায়ী ব্যাঙ্কের দায়বদ্ধতার অঙ্ক আদতে কতটা? একটি ছোট লকারের বার্ষিক ভাড়া ২০০০ টাকা হলে বিধি অনুযায়ী দায়ের ঊর্ধ্বসীমা ২ লক্ষ টাকা। বড় লকারের ক্ষেত্রে তা ৮ লক্ষ। বহু গ্রাহকই এর চেয়ে বেশি মূল্যের গয়না বা সম্পত্তি রাখেন লকারে। ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের একাংশ অবশ্য আগেও বলেছে, লকারের ভাড়ার বিষয়ে ব্যাঙ্ক ও গ্রাহকের মধ্যে চুক্তি হয় ঠিকই, কিন্তু গ্রাহক সেই লকারের কী কী রাখছেন তা ব্যাঙ্ক জানতে চায় না। বস্তুত, কোনও বেআইনি বা ক্ষতিকর বস্তু যাতে গ্রাহক লকারে না-রাখেন তার জন্যও একটি ধারা যুক্ত করা হচ্ছে সংশোধিত বিধিতে।
গত ফেব্রুয়ারিতে কলকাতার এক ব্যক্তির ব্যাঙ্কের লকার থেকে জিনিস খোয়া যাওয়ার মামলায় সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, আগামী দিনে দু’টি চাবির (একটি মাস্টার কি ব্যাঙ্কের কাছে থাকে। অন্যটি থাকে গ্রাহকের কাছে। এক সঙ্গে দু’টি চাবি ব্যবহার করে লকার খোলা যায়) বদলে বৈদ্যুতিন লকার ব্যবস্থা চালু হলে তার জন্য সম্পত্তির নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। বৈদ্যুতিন প্রযুক্তি হাতিয়ে যাতে কেউ জিনিস চুরি করতে না-পারে, তা দেখতে হবে। সেই সময়েই লকার পরিচালনার ব্যাপারে ব্যাঙ্কের দায় এবং দায়িত্ব নিয়ে ছ’মাসের মধ্যে নির্দেশিকা জারি করতে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ককে নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy