Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Investment

অল্পবিস্তর ঝুঁকিও থাকুক না ঝুলিতে

নিজের সাধ্যমতো লগ্নি করছেন ঠিকই। কিন্তু সেই সঙ্গে ঝুঁকির দরজাটাতেও হয়তো পুরোপুরি খিল এঁটে বসে আছেন। কিন্তু সমস্যা হল, বড় তহবিল গড়তে গেলে ওই খিল খুলতেই হবে। অন্তত বেশি রিটার্ন ঢোকার ব্যবস্থা করে রাখতে। বোঝালেন শৈবাল বিশ্বাসনিজের সাধ্যমতো লগ্নি করছেন ঠিকই। কিন্তু সেই সঙ্গে ঝুঁকির দরজাটাতেও হয়তো পুরোপুরি খিল এঁটে বসে আছেন।

শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২০ ০৭:১৫
Share: Save:

পরিচিতি: সুমন (৩৫) শিল্পী (৩৪) সমৃদ্ধি (৫)

কী করেন: স্বামী হাইস্কুল শিক্ষক। স্ত্রী পড়ান প্রাইমারি স্কুলে থাকেন নিজেদের বাড়িতে

লক্ষ্য: ভবিষ্যতের জন্য নিজের লগ্নি পরিকল্পনা। সন্তানের উচ্চশিক্ষার জন্য সঞ্চয়। আলাদা ফ্ল্যাট কেনা

সুমন ও শিল্পী দু’জনেই চাকরি করেন। বলা চলে সমাজের অন্যতম গুরুদায়িত্ব পালন করেন। স্ত্রী পড়ান প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। আর স্বামী হাইস্কুলে। দু’জনের চোখে অনেক স্বপ্ন। দেখব সেই স্বপ্ন কী ভাবে পূরণ করা সম্ভব।

তবে প্রথমেই বলব, তাঁদের সমস্ত লগ্নি সুরক্ষিত প্রকল্পে। এটা ঠিক যে কষ্ট করে উপার্জন করা টাকা জলে যাক, তা কেউ চান না। কিন্তু সুযোগ ও সাধ্য থাকলে অল্পবিস্তর ঝুঁকি নেওয়া উচিত। সেই পথ একেবারে এড়িয়ে চললে একটু বেশি রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনাও কমে। বরং আমার মতে, ঝুঁকি আর সুরক্ষা— দুইয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য রেখে এগোনো জরুরি। সেই জন্যই তো এত পরিকল্পনা, হিসেব-নিকেশ। যাতে লগ্নির ঠিক প্রকল্পটি বাছা যায়, সাধ্যের মধ্যে থেকে ঝুঁকি নেওয়া যায়, আবার ভবিষ্যতের জন্য সুরক্ষিত এবং বড় তহবিলও তৈরি হয়। তাই লগ্নির একটা দিককে যে ভাবে সুমন ও শিল্পী পুরো বাদ দিয়েছেন, সেটা মনে হয় ঠিক নয়। এ বার চলুন দেখে নিই কী ভাবে পরিকল্পনা করে এগোতে পারেন তাঁরা।

জীবন বিমায় জোর দিন

দু’জনেরই জীবন বিমা আছে। কিন্তু তার অঙ্ক যথেষ্ট নয়। ডাকঘর জীবন বিমা ছাড়া বেশ কিছু এনডাওমেন্ট বা ইউলিপ পলিসিও রয়েছে। এতে বিমার অঙ্কের তুলনায় প্রিমিয়াম অনেকটাই বেশি পড়ে। মেয়াদ শেষে হাতে আসা টাকাও কম। তাই এই পলিসি সারেন্ডার বা পেড-আপ করে বেশি অঙ্কের টার্ম পলিসি নিন। দু’জনেই যেহেতু চাকরি করেন, তাই দু’জনের জন্য পলিসি কিনতে হবে। সুমনের আয় বেশি বলে তাঁর জন্য বেশি টাকার পলিসি কেনার কথা বলব। ক্রিটিক্যাল ইলনেস কভার, অ্যাক্সিডেন্ট রাইডার অবশ্যই নিন।

স্বাস্থ্য বিমার অঙ্ক বাড়ান

করোনা আমাদের দেখিয়ে দিয়েছে যথেষ্ট পরিমাণ স্বাস্থ্য বিমা থাকা কতটা জরুরি। তাই সুমন ও শিল্পীকে বলব ৩ লক্ষ টাকা পলিসি কিন্তু কিছুই নয়। বরং কমপক্ষে তা ৫ লক্ষ করে নিন। সঙ্গে দেখে নিতে হবে তাতে হাসপাতাল এবং বাড়িতে কোভিড-১৯ চিকিৎসার খরচ মিলবে কি না। ভবিষ্যতে অবশ্যই সেই অঙ্ক আরও বাড়াতে হবে।

মেয়ের উচ্চশিক্ষা

মেয়ের বয়স ৫ বছর। অর্থাৎ, উচ্চশিক্ষার তহবিল গড়ার জন্য হাতে রয়েছে ১৩ বছর। এখন বেসরকারি কলেজে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে যদি ২০ লক্ষ টাকা লাগে, তা হলে সেটাই ওই সময়ে গিয়ে দাঁড়াবে ৪২.৬৫ লক্ষে (৬% মূল্যবৃদ্ধই ধরলে)।

এই টাকা জোগাড়ের জন্য সুমনের মিউচুয়াল ফান্ড বা শেয়ারে লগ্নি করা ছাড়া উপায় নেই। তবে চিঠি পড়ে মনে হল তিনি ঝুঁকি নিতে চান না। কিন্তু সেই পথে না-হাঁটলে, এই পরিমাণ অর্থ ১৩ বছরের মধ্যে জোগাড় করা অসম্ভব। আমার মতে, ডাউভার্সিফায়েড ইকুইটি ফান্ডে ১৪,০০০ টাকা করে লগ্নি শুরু করুন। ১০% রিটার্ন ধরলে এ ভাবে জমবে প্রায় ৪৩ লক্ষ টাকা। চাইলে বড় সংস্থার শেয়ারে লগ্নির কথাও ভাবতে পারেন। তবে বুঝে-শুনে শেয়ার বেছে লগ্নি করতে হবে।

অবসরের জন্য

সংসার চালানো, পরিবারকে টাকা দেওয়া সমেত বিভিন্ন খরচ ধরলে মোটামুটি ভাবে সব মিলিয়ে মাসে ৪০,০০০ মতো খরচ হয় দু’জনের। এটা যদি একটু বেশি করে ৫০,০০০ টাকাও ধরি, সে ক্ষেত্রে ২৫ বছর পরে ওই অঙ্ক গিয়ে দাঁড়াবে ২.১৪ লক্ষে। অর্থাৎ, বছরে প্রায় ২৫.৬৮ লক্ষ।

ওই টাকা সেই সময়ে কোনও সুরক্ষিত প্রকল্পে লগ্নি করে পেতে হলে তহবিলের অঙ্ক হতে হবে ৪.২৮ কোটি টাকা (৬% সুদ ধরে)। আমার মতে—

• পিপিএফ এবং পিএফের টাকা অবসরের জন্য থাকুক। বরং পিপিএফে ১৫ বছর মেয়াদ শেষের পরে তা আরও বাড়ানোর কথা ভাবতে পারেন। এতে লগ্নি, সুদ ও মেয়াদ শেষে হাতে আসা টাকার পুরোটাই করমুক্ত। ফলে তা ঝুঁকি এড়িয়ে সঞ্চয়ের ভাল উপায়।

• মিউচুয়াল ফান্ড, বিশেষত ইকুইটি ফান্ডে লগ্নি চালাতে হবে। তবেই মূল্যবৃদ্ধিকে বাগে এনেছে কিছুটা তহবিলের মুখ দেখা যাবে।

• সুযোগ বুঝে কিনতে হবে ভাল সংস্থার শেয়ারও। এ জন্য কিছুটা হলেও এই সংক্রান্ত পড়াশোনা লাগবে। সেটা এখনই করে ফেললে ভাল।

• দীর্ঘ মেয়াদি সরকারি বন্ডে লগ্নির কথা ভাবুন। সম্প্রতি বাজারে এসেছে ৭.১৫% সুদের বন্ড। যার হার প্রতি ছ’মাসে বদলাবে। টাকা ঢালতে পারেন।

• স্বল্প মেয়াদি লক্ষ্যের জন্য তুলনায় সুরক্ষিত স্থায়ী আমানতে টাকা রাখতে পারেন। ইতিমধ্যেই এই খাতে শিল্পীর বেশ কিছু টাকা জমেছে। এ ভাবে কিছুটা করে তহবিল তৈরি করার পরে, আগামী দিনে সেই টাকা অন্য কোথাও লগ্নি করার কথাও ভাবতে পারেন।

• আগামী দিনে যে রকম বেতন বাড়বে অথবা হাতে টাকা আসবে, সেই অনুসারে লগ্নি ও সঞ্চয়ের পথে এগোতে হবে।

স্বপ্নের বাড়ির লক্ষ্যে

মাথার উপরে ছাদের চিন্তা করতে হয় না সুমনদের। তাই আমি বলব, বাদবাকি সমস্ত লক্ষ্য পূরণ হলে, তবেই ফ্ল্যাট কেনার কথা ভাবুন। কারণ, ফ্ল্যাট কেনার মানে শুধু তার টাকা জোগাড়ই নয়, সেটির রক্ষণাবেক্ষণ, বিদ্যুৎ বিল থেকে শুরু করে প্রতি মাসে কিস্তির টাকা দেওয়া— সব কিছু নিয়ম করে করতে হবে। তবে যদি একান্তই এই পথে হাঁটতে চান, সে ক্ষেত্রে এসআইপি বা রেকারিং করতে পারেন। এতে যে টাকা জমবে, তা ডাউনপেমেন্টে কাজে লাগবে। চেষ্টা করতে হবে কম ঋণ নিতে। আশা করব বর্তমান পরিস্থিতিতে সুমন ও শিল্পীকে দেওয়া পরামর্শে তাঁদের কিছুটা সুরাহা হবে।

(অনুরোধ মেনে নাম পরিবর্তিত)

লেখক বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ

(মতামত ব্যক্তিগত)

ছবি: প্রতীকী

অন্য বিষয়গুলি:

Investment CoronaVirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy