Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Savings

শুরু করুন ধীর পায়ে

আট সদস্যের সংসার। পরিবারে একাই রোজগেরে। খরচ সামলাতে গিয়ে সঞ্চয় আর করে ওঠা হয়নি। তাই সেই ভিতটাই আগে তৈরি করা জরুরি। পরামর্শ দিচ্ছেন শৈবাল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২০ ০৭:০৪
Share: Save:

পরিচিতি: সুমন্ত্র (৩২)

কী করেন: প্রাথমিক শিক্ষক। মা-বাবার সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। পরিবারের সদস্য আট জন

লক্ষ্য: এ বছরের শেষে বিয়ে। জীবন ও স্বাস্থ্য বিমা। সন্তানের শিক্ষার খরচ। অবসরের জন্য আর্থিক তহবিল তৈরি

লেখার শুরুতে সুমন্ত্রকে তারিফ না-জানিয়ে পারছি না। তিনি সীমিত রোজগার এবং অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আট জনের পরিবারের খরচ টেনে চলেছেন। তাঁর পরিশ্রম বৃথা যাবে না। পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্যেরাও নিশ্চয়ই এক দিন নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারবেন। পরিবারের ভিত শক্তপোক্ত হবে। আর তারই পাশাপাশি সুমন্ত্ররও পেশাগত জীবনে উন্নতি হবে আরও। পূরণ হবে সব স্বপ্নই।

এ বার আসা যাক আর্থিক পরামর্শের বিষয়ে। সুমন্ত্র নিজের এবং পরিবারের সম্পর্কে জানালেও, অনেক তথ্যই জানাননি। যেমন তিনি আদৌ কোনও টাকা-পয়সা জমাতে পেরেছেন কি না। বা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে নগদ কী রকম রয়েছে। যা-ই হোক, যখন জানাননি তখন ধরে নিচ্ছি সে ভাবে কোনও সঞ্চয় নেই। অথবা থাকলেও, সেই অঙ্ক খুবই কম। অর্থাৎ, আমাদের শুরু থেকেই শুরু করতে হবে। কাজটা মোটেই অসম্ভব নয়। তার জন্য দরকার ধৈর্য এবং হিসেব কষে এগোনো। এই সমস্ত গুণই সুমন্ত্রর রয়েছে। যিনি অল্প রোজগারের মধ্যেও এত জনের সংসার বছরের পর বছর টেনে চলেছেন তিনি হিসেবি তো বটেই, তাঁর সেই প্রয়োজনীয় ধৈর্যটাও আছে। শুধু দরকার ভবিষ্যতে আর্থিক পরিকল্পনাটা একটু সাজিয়ে দেওয়া। এ বার ধাপে ধাপে তা নিয়ে আলোচনা করা যাক। তার আগে একটা কথা, সুমন্ত্রকে যে পরামর্শগুলি দেব সেগুলি আরও বিস্তারিত জানার প্রয়োজন হলে যে কোনও লগ্নি পরামর্শদাতার সঙ্গেও আলোচনা করতে পারেন।

শুরুতেই বলব, সুমন্ত্রকে কয়েকটি খাতে ধীরে ধীরে টাকা রাখা শুরু করতে হবে। একটু কষ্ট করে হলেও। কত টাকা রাখতে হবে সেটা আমি নির্দিষ্ট করে বলছি না। কারণ ওঁর কিছু আর্থিক সীমাবদ্ধতা আছে। পরিবারের ন্যূনতম খরচ সামলে কী পরিমাণে টাকা রাখবেন, সেটা উনি নিজেই

ঠিক করবেন। তবে ক্ষমতা অনুযায়ী সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই জমানোটা বাড়াতে হবে।

• প্রথমেই বলে রাখা উচিত, সময়টা তো ভাল নয়! অতিমারির ধাক্কায় রোজগার কমছে, অথচ জিনিসপত্রের দামের দৌড় থামার লক্ষণ নেই। তাই এখন কয়েকটা মাস খরচ-খরচা করতে হবে খানিক টিপে টিপে। তাতে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কিছুটা টাকা জমবে। যা ভবিষ্যতে যে কোনও আপৎকালীন দরকারে কাজে লাগতে পারে।

• এ বছরের শেষের দিকে সুমন্ত্রর বিয়ে করার পরিকল্পনা রয়েছে। তাঁকে আগাম শুভেচ্ছা। কিন্তু সেই সঙ্গে পরামর্শ থাকবে অনুষ্ঠানের বহর এবং খরচটাও যেন যতটা সম্ভব সীমিত হয়। এমনিতেই করোনার আবহে খুব বেশি অতিথিকে নিমন্ত্রণ করায় নানা বিধিনিষেধ চেপেছে। তার উপরে আমি মনে করি বিয়ের দিনের অনুষ্ঠানের চেয়ে বিবাহিত জীবনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তবে ছোট করে হলেও বিয়ের একটা খরচ তো আছেই। সেই হিসেবটা এখন থেকেই কষা শুরু করুন। আর সেই খরচের তহবিল তৈরির জন্য যতটা সম্ভব টাকা রাখুন একটি লিকুইড ফান্ডে।

• বিয়ের পরে পরিবারের প্রতি দায়বদ্ধতা আরও বাড়বে। থাকবে পরিবারকে সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব। তার জন্য বিয়ের পরে সুমন্ত্রের উচিত অন্তত ২৫ লক্ষ টাকার একটি জীবন বিমার টার্ম পলিসি কেনা। খরচ বেশি নয়। বছরে প্রিমিয়াম দাঁড়াতে পারে পাঁচ-ছ’হাজার টাকা।

• সুমন্ত্রের মা অসুস্থ। অসুখবিসুখ হলে কী রকম খরচ হতে পারে সে ধারণা তাঁর হয়েছে। আর চিকিৎসার খরচ তো দিন দিন বেড়েই চলেছে। সেটা বুঝতে পেরেছেন বলে সুমন্ত্র নিজেই স্বাস্থ্য বিমার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছেন। অতএব সেটা কিনতে হবে। বিয়ের পরে সুমন্ত্র এবং তাঁর স্ত্রীয়ের উচিত অন্তত ৫ লক্ষ টাকার একটি ফ্লোটিং পলিসি কেনা। তবে তার আগে কয়েকটি বিষয় আগে থেকে জেনে রাখা দরকার।

ক) সংস্থাটির বিমার ‘সেটলমেন্ট রেশিয়ো’ কত? সেটা ৯৫ শতাংশের কম না-হলেই ভাল।

খ) ‘নো ক্লেম বোনাসের’ পদ্ধতি কী এবং কত?

গ) সন্তানের জন্মের সময়ের চিকিৎসার খরচ দেওয়া হয় কি?

ঘ) নেটওয়ার্ক হাসপাতাল।

ঙ) বিভিন্ন খাতে খরচের ‘সাব-লিমিট’ আছে কি?

• সুমন্ত্রর নিশ্চয়ই ব্যাঙ্কে অন্তত একটি সেভিংস অ্যাকাউন্ট রয়েছে। যেখানে তাঁর বেতন জমা পড়ে এবং তার থেকে পরিবারের খরচ চালান। আমার পরামর্শ, এর পাশাপাশি উনি এক বছর মেয়াদের একটি রেকারিং অ্যাকাউন্ট খুলুন। যাতে স্বল্পমেয়াদের খরচগুলির সংস্থান সেখান থেকে করা যায়।

যেমন, প্রত্যেক পরিবারের দুর্গাপুজোর সময়ে উপহার কেনার কিছু না কিছু খরচ থাকে। একটু আগে বিমার কথা বলছিলাম। তার বার্ষিক প্রিমিয়ামও রয়েছে। এই ধরনের নির্দিষ্ট খরচগুলির হিসেব কষুন। তার উপর ভিত্তি করেই মাসিক কিস্তির রেকারিং অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন।

বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে হাতে থোক টাকা আসবে। সংশ্লিষ্ট খরচগুলি মেটাবেন সেখান থেকেই। সেভিংস অ্যাকাউন্টে নিয়মিত হাত পড়লে বাড়তি খরচ হয়ে যেতে পারে। যে কথা সুমন্ত্র নিজেই বলেছেন। এই অ্যাকাউন্ট তিনি ব্যাঙ্ক বা পোস্ট অফিস যেখানে খুশি খুলতে পারেন।

• একটু সময় নিয়ে হলেও দীর্ঘমেয়াদের জন্য আরও দু’টি পদক্ষেপ করা উচিত সুমন্ত্রের। ১) পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খোলা। নিয়মিত চেষ্টা করুন বাড়তি টাকা সেখানে জমাতে। সে যত কমই হোক না কেন। ২) ভাল ডাইভার্সিফায়েড ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ড বাছাই করে অন্তত একটি এসআইপি শুরু করা। পরে ক্ষমতা অনুযায়ী এসআইপির সংখ্যা বাড়াতে পারেন। এবং আরও বেশি টাকা রাখতে পারেন পিপিএফে। পরবর্তীকালে দেখবেন সেই তহবিলের একটা অংশই সন্তানের শিক্ষার খরচ মেটাতে কাজে লাগবে। কন্যাসন্তান হলে স্থানীয় পোস্ট অফিসে সুকন্যা সমৃদ্ধি অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন।

এই প্রসঙ্গে আরও একটা কথা। শেয়ার বাজারের উত্থান-পতনের সঙ্গে আপনার এসআইপির ইউনিটের দাম এবং তহবিলও বাড়বে-কমবে। তাতে ঘাবড়াবেন না। দীর্ঘমেয়াদে লাভই হবে। আর ওই টাকা দিয়ে বড় কোনও খরচ মেটানোর পরিকল্পনা থাকলে মোটামুটি মাস ছয়েক আগে সেই পরিমাণ টাকা তুলে নেবেন। তাতে ঝুঁকি কমবে।

• এই সমস্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করার পথে সুমন্ত্রর সবচেয়ে বড় বাধা হল পারিবারিক খরচ। সেটা আমরা বুঝি। এর সমাধানের সবচেয়ে সহজ উপায় হল প্রত্যেক মাসের গোড়াতেই লগ্নি-সঞ্চয়ের টাকা সরিয়ে রাখা। বাকি টাকা থেকে সংসারের খরচ চালানো। কোন খাতে কত টাকা রাখা উচিত তা আমরা বলে দিচ্ছি না। অল্প টাকা দিয়ে হলেও প্রকল্পগুলি শুরু করা জরুরি।

• ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বা কোনও একটি লিকুইড ফান্ডে অন্তত তিন মাসের টাকা জমিয়ে রাখতে হবে। যাতে আপৎকালীন খরচে সমস্যা না-হয়।

• আপনাদের বাড়ি আছে। নতুন বাড়ি করার কথা এখনই ভাবার দরকার নেই। আপাতত সঞ্চয়ের ভিতটা শক্ত করা জরুরি।

সুমন্ত্রকে অনুরোধ করব, যে সমস্ত পদক্ষেপের কথা বললাম সেগুলি ধাপে ধাপে শুরু করুন। আপনার স্বপ্ন নিশ্চয়ই সফল হবে। শুভেচ্ছা রইল।

লেখক বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ

(মতামত ব্যক্তিগত)

অন্য বিষয়গুলি:

Savings Money Family
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy