—প্রতীকী চিত্র।
এগোনোর জন্য তৈরি বাজার। কয়েক দিন ধরে চলতে থাকা অস্থিরতার পরে বুথ ফেরত সমীক্ষা আজ সূচকের পালে হাওয়া জোগাতে পারে। এনডিএ-র ‘চারশো পার’ স্লোগানের হাওয়ায় চেপে মাত্র কয়েক দিন আগে ৭৫,০০০ পেরিয়ে নজির গড়েছিল সেনসেক্স। এক দিন লেনদেন চলাকালীন ৭৬,০০০-ও পার করে ৩০টি সংস্থার শেয়ার নিয়ে তৈরি এই সূচক। তবে এর পরেই আশঙ্কা গ্রাস করে লগ্নিকারীদের। জল্পনা ছড়ায়, আশার তুলনায় অনেক কম আসন পেতে পারে ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা শাসক দলটি। ফলে শুরু হয় পতন। গত সপ্তাহের প্রথম চার দিনে সেনসেক্স মোট নামে ১৫২৫ পয়েন্ট। পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকে অনিশ্চিত বাজার। উদ্বেগ প্রকট করে তুঙ্গে (২৪.৬০) ওঠে অস্থিরতা সূচক। নাগাড়ে শেয়ার বিক্রি করতে থাকে বিদেশি লগ্নি সংস্থাগুলি।
এমন মুষড়ে পড়া পরিস্থিতিতে সপ্তম দফার নির্বাচন শেষে অপ্রত্যাশিত ভাবে চমকে দিল বুথ ফেরত বিভিন্ন সমীক্ষা। বেশির ভাগেরই দাবি, বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ পেতে চলেছে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা। এই বার্তা বাজার ফের তেতে ওঠার জন্য যথেষ্ট। তবে সমীক্ষা যদি ততটা না মেলে, সূচক হয়তো তেমন উঠবে না। এমনকি, সাময়িক নামতেও পারে। ২৯৫টির বেশি আসন জিতে সরকার গড়ার দাবি ছাড়েনি বিরোধীদের ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চ। মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে স্পষ্ট হতে থাকবে কারা কত আসন নিয়ে ক্ষমতায় আসছে। সেই অনুসারে প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে শেয়ার বাজারে।
এ বার অতীতের কয়েকটি নির্বাচনে চোখ রাখা যাক—
২০১৯: বুথ ফেরত সমীক্ষা প্রকাশের পরে সেনসেক্স বেড়েছিল ১৪২১ পয়েন্ট। এক দিনে বৃদ্ধির হিসাবে তা ছিল ১০ বছরে সব থেকে বেশি। নিফ্টি ওঠে ৩.৭%।
২০১৪: ভোট গণনার দিন সেনসেক্স প্রথম বার পা রেখেছিল ২৫,০০০-এ। শেষে অবশ্য আগের দিনের থেকে মাত্র ২১৬ পয়েন্ট বেড়ে থিতু হয় ২৪,১২১ অঙ্কে।
২০০৯: ভোট গণনা ছিল ১৬ মে, শনিবার। কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ গোষ্ঠী গরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গড়ে। সোমবার প্রবল উচ্ছ্বাস দেখা যায় শেয়ার বাজারে। সূচক অত্যধিক চড়ে যাওয়ায় দু’বার ‘সার্কিট ব্রোকারে’ আটকে যায়। সেনসেক্স সে দিন ২১১১ পয়েন্ট (১৭.৩৪%) লাফিয়েছিল।
২০০৪: সম্পূর্ণ উল্টো ছবি। ১৬ মে ভোট গণনার পরের দিন সেনসেক্স নামে ৬%। পরের দিন আরও ১১%। সে বারও ক্ষমতায় এসেছিল কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট।
এই বছরও ভোটের ফলকে কেন্দ্র করে বাজার আন্দোলিত হবে বটে। তবে বড় মেয়াদে তার নজর ঘুরবে অর্থনীতির দিকেই। চোখ থাকবে বর্ষা এবং বিশ্ব-পরিস্থিতিতেও। দেশের অর্থনীতির ভিত এখন মজবুত। জিডিপি বৃদ্ধির হার গত অর্থবর্ষে ছুঁয়েছে ৮.২%। আগের বছরে তা ছিল ৭%। শুক্রবার বিকেলে সামনে এসেছে পরিসংখ্যান। অন্য সময় হলে, শুধু এই খবরেই বাজার চড়ত। কিন্তু আজ লগ্নিকারীদের শেয়ার কেনাবেচায় বড় প্রভাব থাকবে বুথ ফেরত সমীক্ষারও।
অর্থনীতির দিক দিয়ে ভাল খবর আরও আছে। এপ্রিলে আটটি প্রধান পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার আগের বছরের এপ্রিলের ৪.৬ শতাংশের থেকে বেড়ে পৌঁছেছে ৬.২ শতাংশে। ভবিষ্যৎ নিয়ে আশা জাগিয়ে সরকারের রাজকোষ ঘাটতি লক্ষ্যমাত্রার (৫.৮%) তুলনায় নেমেছে জিডিপির ৫.৬৩ শতাংশে। আশা, চলতি অর্থবর্ষে আরও নামবে। ভাল কর সংগ্রহ এবং রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের থেকে রেকর্ড ডিভিডেন্ড পাওয়ায় ঘাটতির উপর চাপ কমছে। মে মাসে জিএসটি আদায় ১০% বেড়ে হয়েছে ১.৭৩ লক্ষ কোটি টাকা। অল্প হলেও গাড়ি বিক্রি বেড়েছে। তার উপর নির্দিষ্ট সময়ের আগেই কেরলে বর্ষা ঢুকেছে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস দেশ এ বার স্বাভাবিকের থেকে বেশি বৃষ্টি পেতে পারে। খাদ্যপণ্য এবং গ্রামীণ অর্থনীতির জন্য যা সুখবর। মাঝেমধ্যে উঠলেও, বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম রয়েছে ৮০-৮৫ ডলারে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি অনুকূল।
বাস্তবে নির্বাচনী ফল যদি বুথ ফেরত সমীক্ষার সঙ্গে কমবেশি মিলে যায়, তবে গত কয়েক দিনে হারানো ১৫০০ পয়েন্ট সেনসেক্স পুনরুদ্ধার করবে এক-দু’দিনেই। তৈরি হবে উচ্চতার নতুন নজির। তার আগে সকলের চোখ আজকের বাজারে।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy