প্রতীকী ছবি।
করোনাও পরশ-পাথর!
যে অতিমারির আক্রমণে সারা বিশ্বে মৃত্যুমিছিল, তার ‘হেঁয়ালি সমাধানের ইঙ্গিতেই’ যেন সোনা ফলছে শেয়ার বাজারে। এর ওষুধ, বিশেষত প্রতিষেধক বার করে যে সমস্ত সংস্থা তার বাজার ধরতে পারবে, তাদের জন্য ‘জ্যাকপট’ কার্যত বাঁধা। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, সেই লক্ষ্যে প্রাথমিক এক-দু’ধাপ পেরনোর খবরটুকু চাউর হওয়াও অন্তত কিছু দিনের জন্য তাদের আগুনে শেয়ার দর নিশ্চিত করার পক্ষে যথেষ্ট।
বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ থেকে ব্রোকারেজ সংস্থা— সকলেরই দাবি, শুধু এই বিভিন্ন ধাপ পেরনোর সূত্রেই এখন বেশ কিছু দিন ধরে হাতবদল হচ্ছে এবং হবে ওই সমস্ত ওষুধ সংস্থার বিপুল সংখ্যক শেয়ার। মোটা মুনাফা পকেটে পুরতে কোটি-কোটি টাকা সেখানে ঢালছে ও ঢালবে বিভিন্ন বিদেশি আর্থিক লগ্নি সংস্থা। পিছিয়ে নেই মিউচুয়াল ফান্ডগুলি। ওই ওষুধ-পরীক্ষার সাফল্য বা ব্যর্থতার উপরে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির শেয়ার দরের ওঠা-নামা তো নির্ভর করবেই, সার্বিক ভাবে তা হবে বিশ্বের প্রায় সমস্ত বাজারের চালিকা শক্তি। কারণ, অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানো অনেকখানি নির্ভরশীল এই রোগকে কব্জা করার উপরেও। বস্তুত, করোনা প্রতিষেধক তৈরির আশাতেই বৃহস্পতিবার ৪২৯.২৫ পয়েন্ট ওঠে সেনসেক্স। নিফ্টি বেড়েছে ১২১.৬৫ অঙ্ক। চড়েছে বিশ্ব বাজারও।
আরও পড়ুন: চিন ভ্যাকসিন পরীক্ষা চায়, ‘আগ্রহী’ ঢাকা
উদাহরণ হাতের সামনেই। ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ গবেষণায় তৈরি অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার করোনা-প্রতিষেধক প্রথম হার্ডল ডিঙিয়ে এখন দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষায়। পুরো পরীক্ষা সফল হলে, এক ভারতীয় সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে শুধু উন্নয়নশীল দুনিয়ার জন্যই অন্তত ১০০ কোটি প্রতিষেধক তৈরি করবে তারা। শুধু এই খবরে তিন মাসের মধ্যে তাদের ভারতীয় শাখার শেয়ার দর বেড়েছে ৩৭.৩৯%! ২৯ ফেব্রুয়ারি যেখানে তার শেয়ার দর ২৫৭৮ টাকা ছিল, সেখানে ২ জুলাই তা পৌঁছেছে ৩৫৪২ টাকায় (বিস্তারিত সারণিতে)। মাসে শেয়ার হাতবদলের সংখ্যাও ৯.৩১ লক্ষ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৭.৮১ লক্ষ। একই ছবি করোনা নিরাময়ের দৌড়ে থাকা ফাইজ়ারের ক্ষেত্রে। দর লাফ দেওয়ার সময়ের ফারাক মূলত প্রাথমিক সাফল্যের খবর সামনে আসার সময়ের পার্থক্যের ভিত্তিতে।
একই ঘটনার সাক্ষী মার্কিন শেয়ার বাজারও। রিজেনেরনের বাতের চিকিৎসার ওষুধ করোনা উপশমে কাজে লাগতে পারার ঘোষণার দৌলতে তাদের শেয়ার আগুন। প্রতিষেধকের দৌড়ে প্রাথমিক সাফল্যের সুখবর ছ’মাসের মধ্যে ৩.২১ ডলার থেকে ১৯.৭৩ ডলারে পৌঁছে দিয়েছে ইনোভিয়োর মতো ছোট সংস্থার শেয়ারকেও। মানে, বৃদ্ধি ৫১৪%! করোনা নিরাময়ের গবেষণার দৌড়ে এগিয়ে যাওয়া কিংবা পিছিয়ে পড়ার আঁচ পোহাতে হচ্ছে জাইলিড, মডার্না, নোভাভ্যাক্স, জনসন অ্যান্ড জনসন, গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইনের মতো বিভিন্ন সংস্থাকে।
আরও পড়ুন: কালি থেকে হাতশুদ্ধি, নতুন লড়াই সুলেখার
ব্রোকারেজ সংস্থা ডেকো সিকিউরিটিজের ডিরেক্টর অদিতি নন্দীর কথায়, ‘‘যেখানে এক সাফল্যের চাবিতে বিশ্ব জোড়া বাজারে বিক্রির দরজা খুলে যেতে পারে, সেখানে এমন ছবি প্রত্যাশিত। কারা শেষমেশ কত দামে ওষুধ বা প্রতিষেধক বার করতে পারবে, বাজারের কতখানি দখল থাকবে তাদের হাতে, তার ছাপ পড়বে তাদের দীর্ঘমেয়াদি শেয়ার দরে। কিন্তু তার আগে পর্যন্ত এই দ্রুত ওঠা-পড়ায় কোটি-কোটি টাকা মুনাফা করার চেষ্টা করবে বিভিন্ন বিদেশি আর্থিক লগ্নি সংস্থা, মিউচুয়াল ফান্ড। এক লপ্তে বিপুল সংখ্যক শেয়ার কেনে যারা। হাতে লগ্নির টাকা থাকার পাশাপাশি সঠিক খবর কানে থাকাও শেয়ার বাজারে মুনাফার মুখ দেখার শর্ত।’’ হিসেবই বলছে, কোনও ফান্ড যদি ফেব্রুয়ারিতে অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার এক লক্ষ শেয়ার কিনে এখন তা বিক্রি করে, তা হলে শুধু তা থেকেই তার লাভ ৯৬ কোটি টাকা!
বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ শৈবাল বিশ্বাসও বলছেন, ‘‘এমনিতেই বাজারে এমন আকছার ঘটে। দাঁও এত বড় হলে, প্রতিযোগিতা আরও মারকাটারি। কিন্তু একই সঙ্গে এ কথা নিশ্চিত যে, অন্তত আগামী কয়েক মাস ভারত-সহ সারা বিশ্বে বাজারের নজর নিবদ্ধ থাকবে ওষুধ সংস্থাগুলির উপরে। কারণ প্রথমত, অর্থনীতি তথা পৃথিবীর ভবিষ্যৎ তাদের সাফল্য-ব্যর্থতার মুখাপেক্ষী। দ্বিতীয়ত, ব্যাঙ্কিং-গাড়ি-আবাসন-সহ অধিকাংশ শিল্পই এখন বিপর্যস্ত। অথচ চাহিদা বাড়ছে প্রায় সব ওষুধের। ফলে তাকেই লগ্নির বাজি ঠাওরাচ্ছেন অনেকে।’’
শেয়ার বাজার দেখাচ্ছে, মেডেল জয় পরের কথা। শুধু দৌড়ে টিকে থাকতে পারাও নেহাত মন্দ নয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy