গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
দেশের বেশ কয়েক জন কোটিপতি শিল্পপতির কাছে কার্যত দুঃস্বপ্নের বছর হয়ে উঠেছিল ২০১৯। ব্যাঙ্ক বা কোনও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অথবা অন্য কোনও সংস্থা থেকে নেওয়া বিশাল অঙ্কের ঋণ বা তার উপর সুদ মেটাতে না পারায় তাঁদের কেউ জেলে যাওয়া থেকে অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছেন। কেউ দেউলিয়া হয়ে গিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন। কেউ বা তড়িঘড়ি ঋণ বা সুদের বকেয়া টাকা মেটাতে গিয়ে নিজের বা সংস্থার সম্পত্তি বেচে দিয়েছেন। বন্ধ করে দিতে হয়েছে অনেক সংস্থা।
তালিকায় প্রথম যে নামটি রয়েছে, তিনি এশিয়ার সবচেয়ে ধনী শিল্পপতি মুকেশ অম্বানীর ভাই। অনিল অম্বানী। ‘রিলায়্যান্স কমিউনিকেশন্স (আর-কম)’-এর চেয়ারম্যান। ‘এরিকসন-এবি’র ভারতীয় ইউনিটের কাছ থেকে ৭ কোটি ৭০ লক্ষ ডলার ঋণ নিয়েছিলেন অনিল, তাঁর সংস্থার জন্য। ব্যক্তিগত ভাবে ‘গ্যারান্টার’ও হয়েছিলেন। সেই ঋণ মেটানো তো দূরের কথা, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বকেয়া সুদেরও অনেকটাই মেটাতে পারেননি অনিল। সুপ্রিম কোর্ট অনিলকে ওই ঋণ পরিশোধের নির্দেশ দেয়। মার্চের মধ্যে পরিশোধ করতে না পারলে অনিলকে জেলে যেতে হবে বলেও জানায় শীর্ষ আদালত।
৬০ বছর বয়সী অনিলকে শেষ মুহূর্তে বাঁচান তাঁর দাদা শিল্পপতি মুকেশ অম্বানী। জামিনের বিপুল অঙ্কের অর্থ দিয়ে।
তার পর আর-কমের ব্যবসারও ক্ষয়ক্ষতি হয় প্রচুর পরিমাণে। তাঁর আর একটি অলাভজনক সংস্থা ‘রিলায়্যান্স নেভাল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড’ও ভুগতে শুরু করে বিপুল অর্থাভাবে। ঋণ পরিশোধ করতে অনিলের আর একটি সংস্থা ‘রিলায়্যান্স ক্যাপিটাল লিমিটেড’কে সম্পত্তি বেচতে হয়। এক চিনা শিল্পসংস্থার কাছ থেকে নেওয়া বিপুল অঙ্কের ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় লন্ডনের একটি আদালতে অনিলের বিরুদ্ধে দায়ের হয়েছে একটি মামলাও।
বিপুল ঋণের বোঝায় নুইয়ে পড়ে গত বছরের জুলাইয়ে নদীতে ডুবে আত্মঘাতী হন ভারতের বৃহত্তম কফি চেন ‘কাফে কফি ডে’-র কর্নধার ভি জি সিদ্ধার্থ। মৃত্যুর আগে তিনি একটি চিঠিও লিখে যান। তাতে লেখেন, যে সংস্থাগুলির কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিলেন, তারা যে ভাবে ক্রমাগত চাপ দিচ্ছে, যে ভাবে হেনস্থা করছেন আয়কর দফতরের অফিসাররা, তাতে বেঁচে থাকার আশা শেষ হয়ে গিয়েছে।
৬০ বছর বয়সী সিদ্ধার্থ শেষ চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘‘আজ আমি সর্বস্বান্ত হয়ে গিয়েছি।’’
আর এক কোটিপতি যিনি গত বছর প্রায় দেউলিয়া হয়ে গিয়েছেন ঋণ মেটাতে গিয়ে, তাঁর নাম নরেশ গয়াল। রেলটিকিটের এজেন্ট হিসাবে কর্মজীবন শুরু করে ভারতের বৃহত্তম বেসরকারি বিমান সংস্থা ‘জেট এয়ারওয়েজ’-এর চেয়ারম্যান হয়েছিলেন নরেশ। ব্যাঙ্কগুলি তড়িঘড়ি ঋণ মেটানোর চাপ দিতে থাকায় গত বছরের গোড়ার দিকে সংস্থার চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে দেন নরেশ। প্রচুর লোকসান হয় জেট এয়ারওয়েজের। গত এপ্রিলে সব উড়ান বন্ধ করে দেয় নরেশের জেট এয়ারওয়েজ। মাসদু’য়েক পর সংস্থাটিকে দেউলিয়া ঘোষণা করতে হয়।
কেন্দ্রীয় সরকার তাঁর সংস্থার বিরুদ্ধে ২৬০ কোটি ডলার অর্থ তছরূপের অভিযোগের তদন্ত শুরু করায় নরেশকে ভারত ছাড়তে নিষেধ করে আদালত।
গত বছরে একই ভাবে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছেন ‘ইয়েস ব্যাঙ্ক’-এর প্রতিষ্ঠাতা রানা কপূরও। গত জানুয়ারির শেষাশেষি তাঁর পদ থেকে ইস্তফা দেন ৬২ বছর বয়সী রানা। গত অক্টোবরে তাঁর যাবতীয় শেয়ারও বেচে দেন ঋণের বোঝা হাল্কা করতে।
এই তালিকায় নাম রয়েছে ‘জি এন্টারটেনমেন্ট এন্টারপ্রাইজেস লিমিটেড’-এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুভাষ চন্দ্রেরও। ৬৯ বছর বয়সী সুভাষ চন্দ্র সংস্থার চেয়ারম্যান পদে ইস্তফা দেন। গত নভেম্বর থেকে তাঁর শেয়ার বেচে ঋণ মেটাতে শুরু করেন সুভাষ চন্দ্র।
বকেয়া বিপুল অঙ্কের ঋণ মেটাতে গিয়ে গত বছর দেউলিয়া হয়ে যেতে হয়েছে ‘অবন্ত গ্রুপ’-এর প্রতিষ্ঠাতা, চেয়ারম্যান গৌতম থাপারকেও। দেউলিয়া হয়ে যেতে হয়েছে আরও দুই কোটিপতি মালভিন্দর ও শিবিন্দর সিংহকেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy