ফেব্রুয়ারির শেষ দিনে রক্তাক্ত বাজার। প্রায় দু’শতাংশ পড়ল সেনসেক্স এবং নিফটির সূচক। ফলে বিপুল টাকা হারিয়ে মাথায় হাত পড়েছে লগ্নিকারীদের। পরিস্থিতি যা, তাতে দ্রুত অবস্থার উন্নতি হওয়ার কোনও আশা দেননি আর্থিক বিশ্লেষকেরা। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সর্বোচ্চ সীমায় ওঠে সেনসেক্স ও নিফটি। সেখান থেকে বাজার নেমেছে প্রায় ১৬ শতাংশ।
শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি ৭৩,১৯৮.১০ পয়েন্টে বন্ধ হয় বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ (বিএসই)। এই বাজারের সূচক তথা সেনসেক্স নেমেছে ১,৪১৪.৩৩ পয়েন্ট। অর্থাৎ, এতে ১.৯০ শতাংশের পতন দেখা গিয়েছে। সকালে ৭৪,২০১.৭৭ পয়েন্টে খোলে বাজার। দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭৪,২৮২.৪৩ পয়েন্ট উঠেছিল সেনসেক্স।
আরও পড়ুন:
একই ছবি দেখা গিয়েছে ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জেও (এনএসই)। এ দিন এই বাজার খোলে ২২,৪৩৩.৪০ পয়েন্টে। দিনশেষে ২২,১২৪.৭০ পয়েন্টে পৌঁছে থেমেছে নিফটি। অর্থাৎ এনএসইতে শেয়ার সূচকের পতন হয়েছে ৪২০.৩৫ পয়েন্ট। শতাংশের নিরিখে যেটা ১.৮৬। দিনের মধ্যে অবশ্য সর্বোচ্চ ২২,৪৫০ পয়েন্টে উঠেছিল এনএসইর সূচক।
ব্রোকারেজ ফার্মগুলির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে সেনসেক্স এবং নিফটি সাড়ে পাঁচ শতাংশ করে হ্রাস পেয়েছে। এই নিয়ে টানা পাঁচ মাস নিম্নমুখী রইল বাজার, যা অত্যন্ত বিরল। ১৯৯৬ সালের পর আর কখনও এ ভাবে টানা পাঁচ দিন নিম্নমুখী থাকেনি নিফটি ও সেনসেক্স। এক কথায় ২৯ বছর পর টানা পাঁচ মাসের পতন প্রত্যক্ষ করল বাজার।
বাজার বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, বিএসইতে ছোট পুঁজি এবং মাঝারি পুঁজির সংস্থাগুলির শেয়ারের দাম কমেছে গড়ে দু’শতাংশ। তথ্যপ্রযুক্তি এবং আর্থিক সংস্থাগুলির স্টকে সর্বাধিক লগ্নি রয়েছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের। তাঁরা টাকা তুলে নেওয়ায় হু-হু করে নেমেছে এনএসইর সূচক। নিফটি ৫০-র লগ্নিকারীদের লোকসানের একে অন্যতম প্রধান কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
এ দিন নিফটিতে সব থেকে বেশি লোকসান হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার শেয়ারে লগ্নিকারীদের। নিফটি আইটির সূচক নেমেছে ৪.২ শতাংশ। নিফটি অটো এবং নিফটি মিডিয়া নিম্নমুখী থেকেছে যথাক্রমে ৩.৯ এবং ৩.৫ শতাংশ। এ ছাড়া নিফটিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শেয়ারের ২.৮ শতাংশ, ভোগ্যপণ্য সংস্থাগুলির স্টকের ২.৬ শতাংশ এবং স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সংস্থার শেয়ারের দাম কমেছে ২.২ শতাংশ। নিফটি রিয়্যালটি এবং নিফটি ব্যাঙ্কের সূচক যথাক্রমে ১.৪ এবং ০.৮ শতাংশ নিম্নমুখী থেকেছে।
শেয়ার বাজারের এ হেন পতনের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতিকেই দায়ী করেছেন আর্থিক বিশেষজ্ঞেরা। সেই কারণেই ভারতীয় বাজার থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন বিদেশি লগ্নিকারীরা। এপ্রিলে পারম্পরিক শুল্ক নীতি চালু করতে পারেন ট্রাম্প। ফলে আগামী মাসেও বাজার রক্তাক্ত থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।
(বিশেষ দ্রষ্টব্য: শেয়ার বাজারে লগ্নি বাজারগত ঝুঁকিসাপেক্ষ। আর তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনেই স্টকে বিনিয়োগ করুন। এতে আর্থিক ভাবে লোকসান হলে আনন্দবাজার অনলাইন কর্তৃপক্ষ কোনও ভাবেই দায়ী নয়।)