Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

ভরসা মেলেনি জেটলির আশ্বাসে, মোদীর মন্তব্যে পড়ল সূচক

নোট বাতিল ঘিরে অনিশ্চয়তার কবলেই ছিল শেয়ার বাজার। তার উপর সোমবার ধাক্কা দিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শনিবারের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য।ওই দিন প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মূলধনী বাজারে যাঁরা লেনদেন করছেন, ‘দেশ গড়ায়’ তাঁদের একটি ‘ন্যায্য অবদান’ থাকা চাই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:৪৪
Share: Save:

নোট বাতিল ঘিরে অনিশ্চয়তার কবলেই ছিল শেয়ার বাজার। তার উপর সোমবার ধাক্কা দিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর শনিবারের ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য।

ওই দিন প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মূলধনী বাজারে যাঁরা লেনদেন করছেন, ‘দেশ গড়ায়’ তাঁদের একটি ‘ন্যায্য অবদান’ থাকা চাই। এমনিতেই আতঙ্কে ভুগতে থাকা বাজার এর জেরে ধরেই নেয়, এ বার উঠে যেতে পারে দীর্ঘ মেয়াদি মূলধনী লাভকরে ছাড়। পরিস্থিতি সামাল দিতে রবিবারেই অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি স্পষ্ট করে দেন, তেমন পরিকল্পনা সরকারের নেই। কিন্তু বাজারের পতন আটকানোর জন্য জেটলির আশ্বাস যে-যথেষ্ট ছিল না, সোমবার বাজার খোলার পরেই তা বোঝা গেল।

লেনদেনের শুরু থেকেই হু হু করে পড়তে থাকে শেয়ার দর। এক ধাক্কায় ২৩৩.৬০ পয়েন্ট পড়ে সেনসেক্স ফের নেমে আসে ২৫ হাজারের ঘরে। দিনের শেষে দাঁড়ায় ২৫,৮০৭.১০ অঙ্কে। পাশাপাশি নিফ্‌টি ৭৭.৫০ পয়েন্ট পড়ে থিতু হয় ৭৯০৮.২৫ অঙ্কে, যা গত সাত মাসে সবচেয়ে কম। টাকার দাম অবশ্য এ দিন বেড়েছে। ডলারে টাকার দাম ৮ পয়সা বাড়ার ফলে বিদেশি মুদ্রার বাজার বন্ধের সময়ে প্রতি ডলারের দাম দাঁড়ায় ৬৭.৮৪ টাকা।

নোট-কাণ্ড, আমেরিকায় ফের সুদ বাড়ার সম্ভাবনা, ‘আউটসোর্সিং’ বন্ধ করে দেওয়ার জন্য আমেরিকার ভাবী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্য ইত্যাদির জেরে এমনিতেই আতঙ্কিত শেয়ার বাজার। তার উপর নরেন্দ্র মোদীর ইঙ্গিতে চড়তে থাকে দুশ্চিন্তার পারদ। শনিবার শেয়ার বাজার বন্ধ ছিল। সোমবার এর বিরূপ প্রভাব বাজারে পড়তে পারে, এটা আঁচ করেই অবস্থা সামাল দিতে মাঠে নেমে পড়েন জেটলি। তিনি বলেন, দীর্ঘ মেয়াদি মূলধনী লাভকর বা লং টার্ম ক্যাপিটাল গেইনস ট্যাক্স বসানোর কোনও পরিকল্পনাই কেন্দ্রীয় সরকারের নেই। উল্লেখ্য, শেয়ার কেনার পরে কমপক্ষে এক বছর ধরে রেখে তা বিক্রি করে মুনাফা হলে তার উপর কোনও কর দিতে হয় না লগ্নিকারীদের।

বিশেষজ্ঞ এবং বিএনকে ক্যাপিটাল মার্কেটসের ডিরেক্টর অজিত খান্ডেলওয়াল বলেন, ‘‘অর্থমন্ত্রী ওই দাবি করলেও প্রধানমন্ত্রীর কথাকে উড়িয়ে দিতে পারছেন না লগ্নিকারীরা। বন্ড, স্থাবর সম্পত্তি, অনথিভুক্ত সংস্থার শেয়ার ইত্যাদি কেনার পরে ৩ বছর বাদে বিক্রি করে মুনাফা হলে তবেই মূলধনী লাভে করছাড় পাওয়া যায়। এক মাত্র শেয়ারের ক্ষেত্রেই এক বছর পরে এই ছাড়ের সুবিধা রয়েছে। তাই লগ্নিকারীদের আশঙ্কা, এ বার মোদী শেয়ারের ক্ষেত্রেও তিন বছর ধরে রাখার ওই নিয়ম চালু করতে পারেন।’’ বিদেশি লগ্নিকারীদের টানা শেয়ার বিক্রিও ভারতে সূচকের পতনকে ত্বরান্বিত করছে। তারা গত দু’দিনের লেনদেনে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি শেয়ার বিক্রি করেছে। সোমবার তা ছিল ১০৯৫ কোটি টাকা।

তবে পতন পুরোপুরি রুখতে না-পারলেও জেটলির টনিক বাজারকে ধসের হাত থেকে বাঁচিয়েছে বলে মন্তব্য করেন স্টুয়ার্ট সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান কমল পারেখ। এ দিন অবশ্য আরও দু’টি কারণ সূচকের বড় পতনের মুখে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। প্রথমত, দিনের শেষে পড়তি বাজারে শেয়ার কেনার হিড়িক। দ্বিতীয়ত, আগামী বৃহস্পতিবারই আগাম লেনদেনের সেট্‌লমেন্টের দিন। যে-সব লগ্নিকারী হাতে শেয়ার না-থাকা সত্ত্বেও আগাম লেনদেনে তা বিক্রি করে রেখেছেন, তাঁরা হস্তান্তরের জন্য শেয়ার জোগাড় করতে এ দিন পড়তি বাজারে শেয়ার কিনতে থাকেন। ফলে সূচক কিছুটা উপরে উঠে আসে। বাজার বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এটা না-হলে পতনের বহর আরও বাড়তে পারত।

বিদেশি লগ্নিকারীরা শেয়ার বিক্রি করলেও ভারতীয় আর্থিক সংস্থাগুলি কিন্তু এ দিন ১০৬৫ কোটি টাকার শেয়ার কিনেছে। এটাও বাজারকে বড় মাপের পতন থেকে বাঁচিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আতঙ্ক

• উঠে যেতে পারে মূলধনী লাভে করছাড়

• নোট-কাণ্ডের ছাপ পড়তে পারে বিভিন্ন
সংস্থার আর্থিক ফলে

• আমেরিকায় আর এক দফা সুদ বাড়ার সম্ভাবনা

অন্য বিষয়গুলি:

Sensex
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy