রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। —ফাইল চিত্র।
বাজার ধরেই নিয়েছিল এই দফায় সুদ বাড়ছে না। তবে বাস্তবে যখন অনুমান মিলে গেল, তখন তেমন উল্লসিত হল না। বরং গোঁত্তা খেয়ে কিছুটা পড়ে গেল মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সতর্কবার্তার জেরে। বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ঋণনীতির দিন এক সময় সেনসেক্স আগের নজির ছাপিয়ে গিয়ে উঠেছিল ৬৩,২৮৪ অঙ্কে। কিন্তু দিনের শেষে আগের দিনের থেকে ২৯৪ পয়েন্ট খুইয়ে থিতু হয় ৬২,৮৪৯ অঙ্কে।
পর পর দু’মাস (মার্চ, এপ্রিল) নেমে খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধি ৪.৭ শতাংশে ঠেকায়, এ বারও রেপো রেটে (যে হারে আরবিআই সুদ দেয় ব্যাঙ্কগুলিকে) হাত দেয়নি রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। এই নিয়ে টানা দু’বার। ফলে তা রয়ে গিয়েছে ৬.৫ শতাংশে। সকলেই মোটামুটি নিশ্চিত, গাড়ি-বাড়ি ঋণে আপাতত আর সুদের হার বাড়বে না। মে মাসে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার কত ছিল, তা প্রকাশিত হবে আজ। অনেকেই আশা করছেন, তা আরও কমে চলে আসতে পারে ৪ শতাংশের কাছাকাছি। যা রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের বেঁধে দেওয়া উপরে-নীচে ২ থেকে ৬ শতাংশ সহনসীমার মাঝামাঝি। কিন্তু যদি মাথা তোলে? তেমন পরিস্থিতিতে যে সুদ আরও বাড়তে পারে, সেই ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছে আরবিআই।
তবে মূল্যবৃদ্ধি সত্যিই ৪ শতাংশের আরও কাছে নামলে বহু দিন পরে শুরু হবে সুদ কমার চর্চা। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস অবশ্য স্পষ্ট বলেছেন, তাদের লক্ষ্য মূল্যবৃদ্ধিকে ৪ শতাংশের নীচে নামানো। ওই হারের শুধু সহনসীমার মধ্যে থাকাটাই যথেষ্ট নয়। তার উপর সামনে দুর্বল বিশ্ব বাজার ও বৃষ্টির ঝুঁকিও আছে। আবহাওয়ার উপরে এল নিনোর সম্ভাব্য প্রভাব চিন্তা বাড়িয়েছে। এই সব মাথায় রেখে শীর্ষ ব্যাঙ্ক সাবধানে এগোতে চায়। বিশেষত এ বছর যেহেতু চড়া গরমে অনেক জায়গায় ফসল পুড়েছে। খাদ্যপণ্যের উপরে এর কী প্রভাব পড়ে, তা-ই এখন দেখার।
মূল্যবৃদ্ধির হার ফের মাথা না তুললে বছরের শেষ দিকে আরবিআই সুদ কমাতে পারে বলে আশা। সেটা হলে বৃদ্ধির চাকায় গতি আসবে। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের অনুমান, এ বছর এপ্রিল থেকে জুনে মূল্যবৃদ্ধির গড় হার থাকবে ৪.৬% এবং গোটা অর্থবর্ষে ৫.১ শতাংশের আশেপাশে। অর্থাৎ ২-৬ শতাংশ সহনসীমার মধ্যে। কিন্তু ৪ শতাংশের নীচে নামানোর লক্ষ্যের থেকে উঁচুতে। অন্য দিকে, ওই তিন মাসে তাদের আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৮% আর গোটা বছরে ৬.৫%। তার মানে, ভাল বর্ষা হলে অর্থনীতির পালে হাওয়া থাকবে বলে আশা করা যায়।
অর্থনীতি সম্পর্কে অন্যান্য খবরও বাজারের জন্য ভাল। যেমন— পরিষেবা ক্ষেত্রের পিএমআই সূচক (এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল ইন্ডিয়া সার্ভিসেস পিএমআই বিজ়নেস অ্যাক্টিভিটি ইন্ডেক্স) এপ্রিলের ৬২-র তুলনায় মে মাসে কমলেও, দাঁড়িয়েছে ৬১.২। উচ্চতার নিরিখে প্রায় ১৩ বছরের মধ্যে দ্বিতীয়। পিএমআই সূচকের ৫০-এর উপরে থাকার অর্থ সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বৃদ্ধি, নীচে থাকলে সঙ্কোচন। মে মাসে যাত্রিবাহী গাড়ির খুচরো বিক্রি বেড়েছে ১০% এবং বাণিজ্যিক যানের ৭%।
ভাল খবর আছে ব্যাঙ্ক গ্রাহকদের জন্যেও। কেওয়াইসি সংক্রান্ত তথ্য নবীকরণ না হওয়ার অছিলায় সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে লেনদেন বন্ধ করা যাবে না, এই মর্মে সুপারিশ করেছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের নিয়োগ করা বিশেষ কমিটি। সুপারিশটি গৃহীত হলে অনেক ভোগান্তি থেকে বাঁচবেন ব্যাঙ্কের গ্রাহকেরা। কমিটির আরও প্রস্তাব, দেশের সমস্ত ব্যাঙ্কের প্রতিটি গ্রাহকের তথ্য একটি কেন্দ্রীয় তথ্য ভান্ডারে রাখা হোক। এটা বাস্তবায়িত হলে কাউকে বিভিন্ন ব্যাঙ্কে বার বার কেওয়াইসি দাখিল করতে হবে না।
টানা দু’মাস লগ্নি কমেছে শেয়ার ভিত্তিক মিউচুয়াল ফান্ডে। মে মাসে নিট লগ্নির অঙ্ক ৩২৪০ কোটি টাকা। মার্চ ও এপ্রিলে ছিল যথাক্রমে ২০,৫৩৪ কোটি ও ৬৪৮০ কোটি টাকা। শেয়ার বাজার তেতে ওঠায় অনেক লগ্নিকারী ইউনিট বিক্রি করে লাভ ঘরে তুলছেন বলেই, লগ্নি কমে আসছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এসআইপি-র পথে বিনিয়োগের পরিমাণ গড়েছে নজির। মে মাসে সেখানে লগ্নির অঙ্ক এই প্রথম ১৪,৭৪৯ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy