Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus Lockdown

মূল্যায়নের মন পাওয়ার ঠেলায় কাটা গেল নম্বর

কোনও দেশকে ঋণ দেওয়া কত ঝুঁকির, তার মূল্যায়ন ক্রেডিট রেটিং। রেটিং ভাল হলে ঝুঁকি কম। সম্ভাবনা ধারে কম সুদ গোনার।

ছবি সংগৃহীত।

ছবি সংগৃহীত।

ইন্দ্রজিৎ অধিকারী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২০ ০৫:১০
Share: Save:

রেটিংকে তুড়ি মেরে ওড়ানোর জো নেই। কিন্তু তাকেই পাখির চোখ করে আর্থিক নীতি তৈরি যে কত বড় ঝুঁকি, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল মুডি’জ়ের মূল্যায়ন ছাঁটাই। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রেটিং ছাঁটাইয়ের ভয়ে কার্যত আইসিইউয়ে ঢুকে পড়া অর্থনীতিকেও সে ভাবে সরকারি ব্যয়ের অক্সিজেন জোগায়নি কেন্দ্র। অথচ দিনের শেষে মূল্যায়নের খাতায় নম্বর কাটা গিয়েছে অর্থনীতির ঝিমুনির কারণেই! বিদেশি লগ্নি টানার ক্ষেত্রেও বাকি শর্ত ভুলে শুধু শ্রম সংস্কারের মন্ত্র জপ একই রকম বুমেরাং হতে পারে বলে দানা বাঁধছে আশঙ্কা।

কোনও দেশকে ঋণ দেওয়া কত ঝুঁকির, তার মূল্যায়ন ক্রেডিট রেটিং। রেটিং ভাল হলে ঝুঁকি কম। সম্ভাবনা ধারে কম সুদ গোনার। ভারতের এই রেটিং কমিয়ে ‘Baa3’ করেছে মূল্যায়ন সংস্থা মুডি’জ়। যা লগ্নিযোগ্য রেটিংয়ের মধ্যে সব থেকে নীচে। অর্থ মন্ত্রক সূত্রে খবর, করোনার ধাক্কা সামলাতে বিদেশে বন্ড ছেড়ে প্রায় ১২ লক্ষ কোটি টাকা তুলতে চায় তারা। লক্ষ্য, রেটিং ঠিক রেখে কম সুদে তা পাওয়া। কিন্তু মূল্যায়ন ছাঁটাইয়ের পরে হিসেব কষতে হচ্ছে বাড়তি সুদের বোঝার। যদিও কেন্দ্রীয় মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কৃষ্ণমূর্তি সুব্রহ্মণ্যনের দাবি, গত দু’দশকে রেটিং ছাঁটার প্রভাব পড়েনি অর্থনীতিতে। বৃদ্ধির হার প্রায় ৪% হলে সমস্যা হবে না সুদের বোঝা নিয়েও।

সরকারের আয়ের থেকে ব্যয় অনেক বেশি হলে মাত্রা ছাড়ায় রাজকোষ ঘাটতি। তা মেটাতে ধার করতে হয়। আয়ের তুলনায় ধার যত বেশি, তত কঠিন তা ফেরানো। এই যুক্তিতেই বেলাগাম ঘাটতিকে রেটিং ছাঁটাইয়ের রক্তচক্ষু দেখায় মূল্যায়ন সংস্থাগুলি। অনেকে বলছিলেন, এই জন্যই অর্থনীতির এমন সঙ্কটেও তাকে টেনে তুলতে সরকারি ব্যয় বাড়াতে গড়িমসি করছে কেন্দ্র। দুনিয়ার তাবড় অর্থনীতিবিদদের অনেকে বলা সত্ত্বেও টিকে থাকার টাকাটুকু পর্যন্ত দেয়নি দরিদ্রদের অ্যাকাউন্টে।

আরও পড়ুন: রেটিং আরও কমার ভয় উড়িয়ে বরং বাড়ুক ত্রাণ

কিন্তু ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসির (এনআইপিএফপি) অধ্যাপক লেখা চক্রবর্তী মনে করাচ্ছেন, বৃদ্ধি তলানিতে ঠেকা মানে জিডিপি-র মুখ তোলাও বন্ধ। তাতে রাজস্ব আদায় কমবে। টান পড়বে সরকারের আয়ে। ফলে অর্থনীতিকে চাঙ্গা না-করে শুধু খরচে রাশ টেনে ঘাটতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা শক্ত। তাঁর কথায়, “শুধু ঘাটতিতে রাশই যে ভাল রেটিংয়ের একমাত্র শর্ত নয়, এ বার সেই শিক্ষা নিক কেন্দ্র। মনে রাখুক, জিডিপি বাড়লে, তবেই তার অনুপাতে কম হবে ঘাটতি।”

ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ-কলকাতার অধ্যক্ষ অচিন চক্রবর্তীরও আক্ষেপ, রেটিং সংস্থাকে ‘খুশি রাখতে গিয়েই’ এই তীব্র সঙ্কটেও হাত গুটিয়ে থেকেছে কেন্দ্র। ২০ লক্ষ কোটি টাকার ত্রাণ প্রকল্পে সরকারি ব্যয় নগণ্য। সরাসরি নগদ পাননি দরিদ্ররা। লগ্নিকারীদের আস্থা জয়ে রেটিংয়ের গুরুত্ব কতখানি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তিনি। বলছেন, “শেয়ার বা ঋণপত্রে বিদেশি আর্থিক সংস্থার লগ্নি রেটিংয়ের উপরে অনেকটা নির্ভরশীল। কিন্তু কল-কারখানা গড়ে দীর্ঘমেয়াদে ব্যবসা করতে আসা বিদেশি সংস্থা শুধু রেটিং দেখে টাকা ঢালে না।”

আরও পড়ুন: কর্মী বড্ড কম, রাজ্যের হস্তক্ষেপ চাইল চটশিল্প

এনআইপিএফপি-র অধ্যাপক এন আর ভানুমূর্তিও বলছেন, ভবিষ্যতের সম্ভাবনা মেপে টাকা ঢালে সংস্থা। আর রেটিং হয় অর্থনীতির আগের হালের নিক্তি মেপে। তাই মূল্যায়ন টোল খেলেই লগ্নিকারীরা মুখ ফেরাবেন, এ কথা অযৌক্তিক। তাঁর যুক্তি, “২০০৪ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে বৃদ্ধির চড়া হার এবং নিয়ন্ত্রিত ঘাটতি সত্ত্বেও রেটিং বাড়েনি। আবার গত ক’বছরে রেটিং সে ভাবে না-বদলালেও বিদেশি লগ্নি এসেছে।” তাই লগ্নি-অযোগ্য বা ‘জাঙ্ক’ হিসেবে দেগে না-দিলে, শুধু রেটিং লগ্নির পথে বাধা হয় না বলে তাঁর দাবি।

অনেকে বলছেন, একই ভাবে চিন ছাড়তে চাওয়া লগ্নিকে ভারতে টানতে শ্রম সংস্কারকে বাজি করছে কেন্দ্র। অচিনের ভয়, “মজুরির অঙ্ক ব্যবসার খরচের ১৫-২০ শতাংশ। তাই পরিকাঠামো, প্রশাসনে শান না-দিয়ে কর্মী ছাঁটাইয়ের পথ খুলে লগ্নি টানতে চাইলেও ফের একই ভুল করবে কেন্দ্র।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy