Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
নোটবন্দি নিয়ে হুঁশিয়ারি ছিল শীর্ষ ব্যাঙ্কেরও

আপত্তি তবু ঘোষণা! আক্রমণ কংগ্রেসের

নোটবন্দি নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ‘আগাম হুঁশিয়ারি’ সামনে আসতেই মোদী সরকারের দিকে ফের আক্রমণ শানাল কংগ্রেস। অভিযোগ তুলল, শীর্ষ ব্যাঙ্কের বৈঠকের খুঁটিনাটি থেকে পরিষ্কার যে, নোট বাতিল নিয়ে গোড়া থেকেই আপত্তি ছিল তাদের।

অগত্যা: নোটবন্দির সময়ে এটিএমের সামনে লম্বা লাইন। ফাইল চিত্র

অগত্যা: নোটবন্দির সময়ে এটিএমের সামনে লম্বা লাইন। ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০১৯ ০১:৩২
Share: Save:

নোটবন্দি নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ‘আগাম হুঁশিয়ারি’ সামনে আসতেই মোদী সরকারের দিকে ফের আক্রমণ শানাল কংগ্রেস। অভিযোগ তুলল, শীর্ষ ব্যাঙ্কের বৈঠকের খুঁটিনাটি থেকে পরিষ্কার যে, নোট বাতিল নিয়ে গোড়া থেকেই আপত্তি ছিল তাদের। তা সত্ত্বেও সরকারের চাপের মুখে ওই সিদ্ধান্ত সমর্থন করতে বাধ্য হয়েছিল তারা। একই সঙ্গে বিরোধী দলটির প্রতিশ্রুতি, ভোটের পরে ক্ষমতায় এলে নোট নাকচের পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে।

নোট বাতিল সম্পর্কে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অবস্থান ঠিক কী ছিল, তথ্যের অধিকার আইনে তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। সেই সূত্রেই হাতে এসেছে শীর্ষ ব্যাঙ্কের কেন্দ্রীয় বোর্ডের ৫৬১তম বৈঠকের খুঁটিনাটি। সেখানে দেখা যাচ্ছে, নোটবন্দি ঘোষণার ঠিক আগে কার্যত শেষ মুহূর্তে হওয়া ওই বৈঠকে পর্ষদ শেষমেশ মোদী সরকারের ওই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু এক গুচ্ছ প্রশ্ন তুলছে তার

যৌক্তিকতা নিয়ে। কেন্দ্রীয় বোর্ড যে বিষয়গুলি নিয়ে সাবধান করেছিল, তার মধ্যে রয়েছে—

• কালো টাকার খুব কম অংশই নগদে থাকে। বরং তা অনেক বেশি ঢুকে থাকে সোনা, বাড়ি-ফ্ল্যাট কেনার মধ্যে।

• জাল নোটের সমস্যা চিন্তার কারণ ঠিকই। কিন্তু তার অঙ্ক (তখন) ৪০০ কোটি টাকার আশেপাশে। বাজারে নগদের মোট অঙ্কের তুলনায় তা নগণ্য।

• সরকারের দাবি, ২০১১-১২ থেকে ২০১৫-১৬ সালের মধ্যে অর্থনীতির বৃদ্ধি যেখানে ৩০%, সেখানে ৫০০ ও ১,০০০ টাকার নোটের সংখ্যা বেড়েছে যথাক্রমে ৭৬.৩৮% এবং ১০৮.৯৮%। কিন্তু নোট বৃদ্ধির ওই হার থেকে মূল্যবৃদ্ধির হার বাদ দিলে দেখা যাবে যে, দুয়ের ফারাক তেমন মারাত্মক নয়।

• হঠাৎ এমন ঘোষণা হলে, এ দেশে আসা পর্যটক, কাজে বাড়ি থেকে দূরে থাকা লোকজন— সকলেরই বিপদে

পড়ার সম্ভাবনা।

• নোটবন্দি প্রশংসাযোগ্য পদক্ষেপ হলেও অন্তত স্বল্প মেয়াদে ধাক্কা খাবে অর্থনীতি। গোত্তা খাবে বৃদ্ধির হার।

সে দিনের বৈঠকের এই খুঁটিনাটি সামনে আসার পরেই মোদী সরকারকে ফের বিঁধেছে কংগ্রেস। এ নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের প্রশ্ন মূলত চারটি। (১) এত আপত্তি থাকা সত্ত্বেও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কী ভাবে নোট বাতিলে সম্মতি দিল? তবে কি সরকারের প্রবল চাপের সামনে মাথা নোয়াতে

হয়েছিল তাদের? (২) ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তৎকালীন গভর্নর উর্জিত পটেল এবং বর্তমান গভর্নর (তৎকালীন আর্থিক বিষয়ক সচিব) শক্তিকান্ত দাস। তাঁদের উপস্থিতিতে ডিরেক্টরদের এত আপত্তি অগ্রাহ্য করে কী ভাবে মিলল সবুজ সংকেত? (৩) সংসদীয় কমিটির সামনে একাধিক বার সরকারকে সমর্থনের কথা বললেও, সেই সময়ে আপত্তির প্রসঙ্গে তোলেননি কেন উর্জিত? (৪) বোর্ডের বৈঠক আর নোটবন্দি ঘোষণার মধ্যে সময়ের ফারাক একেবারেই কম। তবে কি আগেই নেওয়া সিদ্ধান্তে শুধু ‘হ্যাঁ’ বলিয়ে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে?

কংগ্রেসের অভিযোগ, যে সমস্ত বিষয়ে আপত্তির কথা শীর্ষ ব্যাঙ্কের বৈঠকের নথিতে রয়েছে, সেগুলি বার বার সরকারের সামনে তুলেছে তারাও। রাজ্যসভায় দাঁড়িয়ে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ বলেছিলেন, নোটবন্দির জেরে বৃদ্ধি ধাক্কা খাবে অন্তত ২ শতাংশ বিন্দু। তখন তা কানেই তোলা তো দূর, বরং উল্টে কটাক্ষ করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু পরে দেখা গিয়েছে হুবহু তা-ই ঘটেছে।

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট রাহুল গাঁধী তখনই বলেছিলেন, নোটবন্দি আসলে সব থেকে বড় দুর্নীতি। আর এ দিন রমেশের প্রতিশ্রুতি, তাঁরা ক্ষমতায় এলে এ নিয়ে তদন্ত হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Demonitisation Reserve Bank of India RBI Congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy