Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

কয়েক জনের হাতে এত ক্ষমতা ভাল নয়, বললেন রাজন

রাজনের অভিযোগ, ব্যবসার পরিবেশ তৈরি করা থেকে শুরু করে জমি অধিগ্রহণ, শ্রম আইনের মতো নানা বিষয়ে সংস্কারের কাজ এখনও পর্যন্ত অসমাপ্তই রয়েছে।

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন।

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:৫৪
Share: Save:

ভারতে অর্থনীতির ধুঁকতে থাকা স্বাস্থ্য নিয়ে ফের তোপ দাগলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন। মোদী সরকারের ভুলগুলো চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে গিয়ে কখনও বিঁধলেন তাদের নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যক্তি ও প্রধানমন্ত্রীর দফতরের হাতে সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করে রাখার স্বভাবকে। কখনও কাঠগড়ায় তুললেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের অর্থনীতির সমস্যা গভীর হওয়ার কথা অস্বীকার করার চেষ্টাকে। সরব হলেন অর্থনীতি নিয়ে ঘরে-বাইরে ঝড় তোলা প্রতিটি সমস্যা ও বার্তাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাগিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধেও। সঙ্গে বৃদ্ধির হারে মন্দার লক্ষণ এই মুহূর্তে স্পষ্ট জানিয়ে অর্থনীতির অসুখ আরও গভীর হওয়া নিয়ে দিলেন হুঁশিয়ারি। রাজন প্রশ্ন তুলেছেন সংস্কারের পথে কেন্দ্রের ‘বিস্ময়কর ভাবে গুটিয়ে থাকা’ নিয়েও।

রাজনের অভিযোগ, ব্যবসার পরিবেশ তৈরি করা থেকে শুরু করে জমি অধিগ্রহণ, শ্রম আইনের মতো নানা বিষয়ে সংস্কারের কাজ এখনও পর্যন্ত অসমাপ্তই রয়েছে।

এক পত্রিকায় রাজনের এই লেখা নিয়ে ফের সরগরম দেশ। ঠিক যে ভাবে আগে বারবার মুখ খুলতে দেখা গিয়েছে তাঁকে, সে ভাবে সেখানেও তাঁর কলমে ফের চাঁছাছোলা ভাষায় সরকারের প্রতিটি ভুলের কাটাছেঁড়া করেছেন তিনি। দাবি করেছেন, মোদী সরকার ক্ষমতায় এসেছিল ছোট প্রশাসন, কিন্তু দক্ষ প্রশাসনিক পরিচালনা আনার বার্তা দিয়ে। অথচ সেই বার্তাটি মাঝেমধ্যে বুঝতে ভুল করছে তারাই। যে কারণে সাধারণ মানুষ ও বেসরকারি ক্ষেত্রের হাত থেকে দক্ষ ভাবে কাজ করার অধিকারটাই কেড়ে নেওয়া হয়েছে।

প্রাক্তন গভর্নরের দাবি, ‘‘আগের জমানায় হয়তো জোট সরকার কিছুটা অগোছালো ছিল। কিন্তু ধারাবাহিক ভাবে নিয়ন্ত্রণ আলগা করে অর্থনীতির উদারিকরণের রাস্তায় হেঁটেছিল তারা।অথচ এখন ক্ষমতার চূড়ান্ত কেন্দ্রীকরণ, মন্ত্রীদের হাতে পূর্ণ ক্ষমতা না-থাকা ও এগিয়ে চলার সঠিক দৃষ্টিভঙ্গির অভাব মিলেমিশে এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যে, সেখানে সংস্কারের চেষ্টা তখনই গতি পায় যখন প্রধানমন্ত্রীর দফতর তাকে পাখির চোখ করে।’’

অসুখ সারাতে প্রেসক্রিপশন

• একেবারে শুরুতে সমস্যা কতখানি গভীর স্বীকার করুক মোদী সরকার।
• ঘরে-বাইরে প্রতিটি সমালোচককে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাগিয়ে দেওয়া বন্ধ হোক।
• বন্ধ হোক অর্থনীতির এই সমস্যাকে সাময়িক ভাবা।
• খারাপ খবর ও কেন্দ্র অস্বস্তিতে পড়ে, এমন সমীক্ষা ধামাচাপা দেওয়ার অভ্যাস বদলানো দরকার।
• সিদ্ধান্ত গ্রহণের পাশাপাশি নতুন ভাবনা-চিন্তা এবং পরিকল্পনা করার ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হাতে গোনা কিছু ব্যক্তি ও প্রধানমন্ত্রীর দফতরের হাতে কেন্দ্রীভূত না রেখে ছড়িয়ে দেওয়া জরুরি।
• সে জন্য আরও বেশি ক্ষমতা দেওয়া হোক বিভিন্ন ক্ষেত্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীদের।
• কেন্দ্রীয় করের থেকে রাজ্যগুলির ভাগ না-কমিয়ে বরং ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের পথে হাত ধরা হোক রাজ্যগুলিরও।
• কর্তৃত্বপূর্ণ পারিবারিক ব্যবসাগুলিকে যেন বিক্রি করে না-দেওয়া হয়।
• প্রতিযোগিতার পরিবেশ চাঙ্গা করতে ও দেশীয় সংস্থার দক্ষতা বাড়াতে যুক্তিসঙ্গত ভাবে যোগ দিতে হবে অবাধ বাণিজ্য চুক্তিতে।
• সংস্কার আনতে হবে জমি অধিগ্রহণ সহজ করতে। সুষ্ঠু শ্রম আইন ও স্থিতিশীল কর ব্যবস্থা তৈরির লক্ষ্যেও।
• দেউলিয়া বিধির আওতায় দ্রুত ঋণ খেলাপি আবাসন সংস্থার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হওয়া চাই।
• বিদ্যুতের ঠিক দাম ধার্য হওয়া, টেলিকম ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার পরিবেশ বহাল রাখা ও চাষিদের জন্য সহজে কাঁচামাল ও অর্থের বন্দোবস্ত করা দরকার।
• সাধারণ রোজগেরেদের ব্যক্তিগত আয়করের হার না-কমিয়ে, কেন্দ্রের বরং উচিত মনরেগার মতো কেন্দ্রীয় প্রকল্প মারফত গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া।

রাজন বলেছেন, এই ধরনের কেন্দ্রীভূত আচরণ দলের রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মসূচির সঙ্গে ভাল খাপ খায়। কারণ সেগুলি গুছিয়ে তৈরি করা থাকে এবং সংশ্লিষ্ট প্রত্যেক ব্যক্তির সে ব্যাপারে যথেষ্ট পারদর্শিতা থাকে। কিন্তু আর্থিক সংস্কারের বৃত্তে তা খাটে না, কারণ অর্থনীতি কী ভাবে কাজ করবে সেই ধারণা থাকে না অনেকেরই। শ্লথ অর্থনীতি সম্পর্কে কলম ধরে স্রেফ কেন্দ্রের সমালোচনা করেই ক্ষান্ত হননি তিনি, তুলে ধরেছেন অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তোলার একাধিক দাওয়াইও।

অন্য বিষয়গুলি:

Raghuram Rajan Economy Narendra Modi NDA UPA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy