—ফাইল চিত্র।
মুখে বারবার বলতেন। নিজের আত্মজীবনীতেও প্রণব মুখোপাধ্যায় যুক্তি দিয়েছিলেন, ‘‘আমার সিদ্ধান্তের তখন সমালোচনা হয়েছিল, এখনও হয়। দলের বাইরে, ভিতরেও। আমি শুধু ভেবে অবাক হই যে আমার পরের অর্থমন্ত্রীরা কেন একই অবস্থান নিলেন।’’
‘রেট্রস্পেকটিভ ট্যাক্স’ বা ভোডাফোন-হাচিসনের মতো পুরনো ব্যবসায়িক লেনদেনে কর বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রয়াত প্রণব মুখোপাধ্যায়ের এই প্রচ্ছন্ন অহঙ্কারে তাঁর জীবদ্দশায় ধাক্কা লাগেনি। এ বার তাতে ইতি পড়ার পথ তৈরি হল। ২০১২-র বাজেটের সেই বিতর্কিত সিদ্ধান্তের ন’বছর পরে।
ভোডাফোনের থেকে বিদেশে ব্যবসায়িক লেনদেনের উপরে কর আদায় করতে ২০১২ সালের বাজেটে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় ‘রেট্রস্পেকটিভ ট্যাক্স’-এর ঘোষণা করেছিলেন। বাজেটের যে কোনও ঘোষণা সংসদে পাশ হওয়ার পরে কার্যকর হয়। এ ক্ষেত্রে অতীতের ব্যবসায়িক লেনদেনে কর বসানোর পদক্ষেপ হয়। মনমোহন সরকারের অর্থমন্ত্রী হিসেবে প্রণবের সব থেকে বিতর্কিত এবং সমালোচিত সিদ্ধান্ত ছিল এটি। প্রণব নিজেও তা অস্বীকার করেননি।
আত্মজীবনীতে প্রণব জানিয়েছিলেন, খোদ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এবং ইউপিএ চেয়ারপার্সন সনিয়া গাঁধী এর বিরুদ্ধে ছিলেন। সনিয়া নিশ্চিত ছিলেন, এর জেরে বিদেশি লগ্নিতে বাধা পড়বে। মনমোহনের পরে তিনিও তাই এই কর নিয়ে আপত্তি তোলেন। একই ভাবে বিষয়টিতে সংশয় প্রকাশ করেন পি চিদম্বরম, কপিল সিব্বলের মতো ইউপিএ সরকারের মন্ত্রীরা। উল্টো দিকে প্রণবের যুক্তি কী ছিল?
তিনি আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘‘লগ্নিকারীরা কর আইনে স্থিরতা চান। করমুক্ত পরিবেশ কেউ চান না। করের হিসেব করে বিদেশি লগ্নি আসে না। দেশের বাজার, কম খরচে দক্ষ শ্রমিক, ব্যবসা চালানোর কম খরচের উপরে বিদেশি বিনিয়োগ নির্ভর করে। সরকার যদি সিদ্ধান্ত নেয়, দেশি ও বিদেশি সংস্থার কাছ থেকে কর আদায়ের ক্ষেত্রে বৈষম্য হবে না, তাতে বিদেশি লগ্নির তেমন সমস্যা হবে না।’’
২০০৭ সালে হংকং-এর টেলিকম সংস্থা হাচিসন হামপোয়া-র ৬৭% শেয়ার কিনে নেয় ব্রিটিশ টেলিকম সংস্থা ভোডাফোন ইন্টারন্যাশনাল হোল্ডিংস। ওই বছরই ‘ক্যাপিট্যাল গেন ট্যাক্স’ বা মূলধনী লাভের উপর কর বাবদ ৭৯৯০ কোটি টাকা দেওয়ার জন্য ভোডাফোনকে নোটিস ধরায় অর্থ মন্ত্রক। আইনি লড়াইয়ে সুপ্রিম কোর্ট ভোডাফোনের পক্ষে রায় দেয়। সেই রায় নাকচ করতেই বাজেটে কর বসানোর কৌশল নিয়েছিলেন প্রণব।
প্রণবের পরে চিদম্বরম মনমোহন সরকারের অর্থমন্ত্রী হয়েছিলেন। তার পরে মোদী সরকারে অরুণ জেটলি অর্থমন্ত্রী হন। কেউ ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেননি। সেই উদাহরণই তুলে ধরতেন প্রণব। আজ মোদী সরকার তা বাতিলের বিল পেশ করার পরে শিল্পপতি কিরণ মজুমদার শ’-র মন্তব্য, ‘‘এই বিতর্কিত আইন তুলতে উদ্যোগী হওয়ার জন্য মোদী সরকারকে বাহবা দিতে হয়। এটি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy