ফাইল চিত্র
করোনা মোকাবিলায় সপ্তাহ জুড়ে একের পর এক ক্ষেত্রে উৎসাহ প্রকল্প ঘোষণা করছে মোদী সরকার। যার আওতায় শনিবার কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলগুলিতে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলির বেসরকারিকরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তাঁর দাবি, বণ্টন ক্ষেত্রে বেসরকারিকরণের ফলে গ্রাহকরা যেমন অনেক বেশি উন্নত পরিষেবা পাবেন, তেমনই বিদ্যুৎ বণ্টন ব্যবস্থায় পরিচালনাগত ও আর্থিক দক্ষতাও বৃদ্ধি পাবে। সারা দেশেই বণ্টন ক্ষেত্রে এই বেসরকারিকরণ ব্যবস্থাটি অনুকরণ যোগ্য মডেল হতে পারে বলে তাঁর দাবি। সেই সঙ্গে বিদ্যুতে মাসুল নীতিও যে কেন্দ্র খুব শীঘ্রই নিয়ে আসবে তা-ও এ দিন জানিয়েছেন নির্মলা।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলগুলিতে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলিতে যখন বেসরকারিকরণের ব্যবস্থা শুরু হয়েই গেল, তখন রাজ্যগুলির উপরেও কী এ বার চাপ দেওয়া শুরু করবে মোদী সরকার? বিশেষজ্ঞদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, এত তোড়জোড় করে ঘোষণায় বিদ্যুৎ নিয়ে অর্থমন্ত্রী আর নতুন কথাই বা কী জানালেন?
রাজ্যের বিদ্যুৎ বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, বিদ্যুৎ ক্ষেত্র নিয়ে যা কিছু আজ অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, তার বেশিরভাগটাই পুরনো ও কেন্দ্রের অনেক দিনের ভাবনা। বণ্টন ক্ষেত্রে বেসরকারি লগ্নি টানার উদ্যোগের পাশপাশি পরিষেবা খারাপ হলে জরিমানার দাওয়াই, লোডশেডিং করা যাবে না, স্মার্ট প্রিপেড মিটার লাগানো বা গ্রাহকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি ভর্তুকির টাকা দেওয়ার কথা বলেছে কেন্দ্র। কিন্তু সেগুলি নিয়ে তারা অনেক দিন আগে থেকেই আলোচনা করা শুরু করেছে।
পরিকল্পনা
• বিদ্যুৎ বণ্টনে আরও সংস্কারের উদ্যোগ। যার আওতায় বেসরকারিকরণ করা হবে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বণ্টন সংস্থাগুলির।
• বিনিয়োগ টানতে আগামী দিনে রাজ্যেও একই পদক্ষেপের ভাবনা।
• কেন্দ্রের যুক্তি, এতে দক্ষতা বাড়বে বিদ্যুৎ পরিষেবায়।
• বণ্টন সংস্থার বেসরকারিকরণ প্রক্রিয়ায় সংস্থাগুলিকে অংশগ্রহণের আর্জি জানিয়েছে তারা।
• এ ছাড়াও ঘোষণা বলছে, দেশে তৈরি হবে বিদ্যুতের নতুন মাসুল নীতি।
• বণ্টন সংস্থার ক্ষতির
ভাগ গ্রাহকদের উপরে চাপানো যাবে না।
• পরিষেবা খারাপ হলে গুনতে হবে জরিমানা।
• যথেষ্ট বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। লোডশেডিং হলেও
বসবে জরিমানা।
• বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সংবহন প্রকল্প তৈরির জন্যও সংস্থা বাছাই করতে হবে প্রতিযোগিতামূলক ভাবে।
• ঠিক সময়ে বকেয়া মেটাতে হবে উৎপাদক সংস্থাগুলিকে।
মোদী সরকারের এ দিনের ঘোষণাকে তোপ দেগে রাজ্যের বিদ্যুৎ মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের নীতিই হচ্ছে সংস্কারের নামে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ১০০ ভাগ পুঁজিবাদ ব্যবস্থাকে কায়েম করা। তাঁর যুক্তি, বিদ্যুৎ এমন একটি পরিষেবা, যা শহরের স্বচ্ছল পরিবারগুলির পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলের আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা লক্ষ-লক্ষ মানুষদের ঘরেও পৌঁছে দিতে হয় রাজ্যগুলিকে। এর সঙ্গে কৃষি, সেচ-সহ অনেক কিছু জড়িয়ে রয়েছে। মন্ত্রীর স্পষ্ট বক্তব্য, সাধারণ মানুষের স্বার্থেই পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুৎ বণ্টন ক্ষেত্রে বেসরকারিকরণের এই মডেল কোনও দিনই ভাবনায় আসবে না।
প্রাক্তন বিদ্যুৎ কর্তাদের দাবি, কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল বলে বণ্টন ক্ষেত্রে বেসরকারিকরণের পদক্ষেপ প্রশাসনিক দিক থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে যতটা সহজ, রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে তা কখনই হবে না। কারণ এ ক্ষেত্রে রাজ্যগুলিকেই নিজেদের বণ্টন সংস্থাগুলির বেসরকারিকরণ করতে হবে। যা কোনও রাজ্যই করতে চাইবে না।
অনেকে আবার মতে, কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলগুলিতে কেন্দ্রের এই বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্তে বেসরকারি সংস্থাগুলিই কতখানি আগ্রহ দেখাবে, তা নিয়েই যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে! কারণ সব থেকে বড় অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীরে আইন-শৃঙ্খলার এখনও যা অবস্থা, তাতে কোনও সংস্থা চট করে যেতে চাইবে না। পুদুচেরি, চণ্ডীগঢ় একটু বড় জায়গা হলেও, লক্ষদ্বীপ, দমন-দিউ বা দাদরা নগরহাভেলির মতো বাকি অঞ্চলগুলি আবার এতই ছোট যে, বিদ্যুৎ ব্যবসার দিক থেকে বেসরকারি সংস্থাগুলির কাছে তা কতখানি লোভনীয় হবে সে নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
এ দিকে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী আর কে সিংহ শুক্রবারই শিল্প মহলের প্রতিনিধিদের সংশোধিত বিদ্যুৎ মাসুল নীতি শীঘ্রই ঘোষণা করার কথা জানিয়েছিলেন। তাঁর দাবি, নতুন নীতিতে গ্রাহকদের সুবিধার পাশাপাশি শিল্পোন্নয়ন ও বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা বজায় রাখাই হবে সরকারের লক্ষ্য। মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেলেই এক মাসের মধ্যে নতুন নীতি জানানো হবে।
উল্লেখ্য, দেশের বিদ্যুৎ বণ্টন ব্যবস্থায় বেসরকারিকরণের ভাবনা কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকের বহু দিনের। মুম্বই, দিল্লির মতো বেশ কিছু বড় শহরে এর আগে বিদ্যুৎ বণ্টন ক্ষেত্রে বেসরকারিকরণ করা হয়েছে।
অন্য দিকে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলির আর্থিক চাপ কমাতে পিএফসি এবং আরইসি-র মাধ্যমে ৯০,০০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার যে আর্থিক প্রকল্পের কথা অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে রাজ্যগুলিকে চিঠি দিয়েছে বিদ্যুৎ মন্ত্রক। যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী সংস্থাগুলিকে স্থায়ী খরচ হিসেবে বণ্টন সংস্থাগুলিকে যে টাকা দিতে হয় তাতে ২০%-২৫% ছাড় দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy