Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

নোটের গেরোয় সাগরপারের ভারতীয়রা

ফ্ল্যাটের টুকটাক কিছু কাজ করাবেন বলে গত বছরের মাঝামাঝি দেশে এসে ৮৮ হাজার টাকা তুলেছিলেন জ্যোতির্ময় সরকার। কিন্তু স্ত্রীয়ের আচমকা অসুস্থতার খবরে তখন রাতারাতি ফিরে যেতে হয়েছিল মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষককে।

তিয়াষ মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:৩৯
Share: Save:

ফ্ল্যাটের টুকটাক কিছু কাজ করাবেন বলে গত বছরের মাঝামাঝি দেশে এসে ৮৮ হাজার টাকা তুলেছিলেন জ্যোতির্ময় সরকার। কিন্তু স্ত্রীয়ের আচমকা অসুস্থতার খবরে তখন রাতারাতি ফিরে যেতে হয়েছিল মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষককে। সেই ২০০০ সাল থেকে যিনি আমেরিকার ‘ওভারসিজ সিটিজেন অব ইন্ডিয়া’ (ওসিআই)। তোলা টাকা ব্যাঙ্কে জমা করার সময়টুকুও তিনি তখন পাননি। বাধ্য হয়ে ফেলে রেখে গিয়েছিলেন ফ্ল্যাটের আলমারিতেই। এখন পুরনো পাঁচশো-হাজারের নোটে রাখা সেই নগদই রাতের ঘুম কেড়েছে তাঁর। কারণ, বাতিল নোট জমা দেওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে তাঁর মতো ওসিআইদের জন্য।

জ্যোতির্ময়বাবু মনে করেছিলেন, জানুয়ারিতে দেশে এসে ওই টাকা রিজার্ভ ব্যাঙ্কে জমা করবেন। কিন্তু সরকারি ফরমানে সেই সুযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁর মাথায় হাত। পুরো টাকা জলে। তার উপর বাতিল নোট হাতে থাকলে তা ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য করার জন্য সংসদে বিল এনেছে কেন্দ্র। কথা হচ্ছে অন্তত ১০ হাজার টাকা জরিমানা করার। এই পরিস্থিতিতে ওই নগদ নিয়ে আরও হয়রানি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

প্রথমে কথা ছিল, ৩১ ডিসেম্বরের পরে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি বাতিল নোট আর জমা না-নিলেও, ৩১ মার্চ পর্যন্ত রিজার্ভ ব্যাঙ্কে তা জমা দেওয়া যাবে। কিন্তু গত বছরের শেষ দিনে ওয়েবসাইটে দেওয়া বিবৃতিতে শীর্ষ ব্যাঙ্ক জানায়, নোট বদলের সুবিধা আপাতত জারি থাকছে শুধু সেই সব ভারতীয় নাগরিকের জন্য, যাঁরা ৯ নভেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ছিলেন না। সুযোগ পাবেন সেই সমস্ত অনাবাসী ভারতীয়ও, যাঁরা ওই সময়ের মধ্যে দেশে আসেননি। প্রথম ক্ষেত্রে ৩১ মার্চ পর্যন্ত শীর্ষ ব্যাঙ্কের কলকাতা-সহ পাঁচ শাখায় বাতিল নোট বদলের সুযোগ মিলবে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ওই সময়সীমা ৩০ জুন পর্যন্ত। তবে অনাবাসী হিসেবে নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের বাসিন্দা হলে এই সুবিধা মিলবে না।

জ্যোতির্ময়বাবুর সমস্যা হল, না তিনি ভারতীয় নাগরিক, না অনাবাসী (এনআরআই)। তাই ১৬ জানুয়ারি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কলকাতা অফিস ফিরিয়ে দিয়েছে তাঁকে। জানিয়েছে যে, টাকা জমা নেওয়া সম্ভব নয়। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘ভারতে এসে এখানকার মুদ্রা হামেশাই ব্যবহার করতে হয়। পুরনো নোট আমাদের কাছে তো থাকতেই পারে। তা হলে?’’ এই প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে ই-মেলও পাঠিয়েছেন তিনি।

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কর্তারা মানছেন যে, এই হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে অনেক ওসিআইকেই। শীর্ষ ব্যাঙ্কের কলকাতা শাখার এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘প্রতিদিন গড়ে ১৫-২০ জন ওসিআইকে ফেরাতে হচ্ছে। কিন্তু আমাদেরও হাত-পা বাঁধা।’’ অল ইন্ডিয়া রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সমীর ঘোষ বলেন, ‘‘ওসিআইদের টাকা বদলানোর সময়সীমা বাড়াতে কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করব।’’

৮ নভেম্বর নোট বাতিলের পর থেকে অজস্র বার নিয়ম বদলেছে কেন্দ্র ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। যে ভাবে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা সত্ত্বেও রাতারাতি শীর্ষ ব্যাঙ্কে বাতিল নোট জমার সুযোগ বন্ধ করা হয়েছে, প্রবল সমালোচনা হয়েছে তার। তার মধ্যেও সে সময় দেশে না-থাকা ভারতীয় নাগরিক কিংবা অনাবাসীরা নোট জমা করার তবু একটা সুযোগ পাচ্ছেন। ওসিআইদের তা-ও নেই।

জ্যোতির্ময়বাবুদের প্রশ্ন, তবে কি তাঁদের কথা মাথাতেই রাখা হয়নি? না কি ভেবে নেওয়া হয়েছিল যে, ভিন্‌ দেশ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এসে নোট জমা করে যাবেন তাঁরা? তাঁর আক্ষেপ, ‘‘এমন জানলে হয়তো ফ্ল্যাটের দরজা ও আলমারি ভাঙিয়ে টাকা বদলানোর ব্যবস্থা করতাম।’’

সম্প্রতি কেন্দ্রীয় আর্থিক বিষয়ক সচিব দাবি করেছেন, নোট বাতিলের নব্বই দিন পরে পরিস্থিতি এখন প্রায় স্বাভাবিক। নোটের জোগানে তেমন টানাটানি আর নেই। অথচ সরকারি প্রতিশ্রুতিতে আস্থা রেখে এখনও পুরনো নোট নিয়ে নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে জ্যোতির্ময়বাবুদের!

অন্য বিষয়গুলি:

Demonetisation Non Residents Indian
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy