নির্মলা সীতারামন। —ফাইল চিত্র
সংসার খরচ কমিয়ে ফেলেছেন মধ্যবিত্তেরা। ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তাঁদের সঞ্চয়ের পরিমাণও কমেছে। মধ্যবিত্তের এই বিতৃষ্ণাই অর্থনীতির ঝিমুনির প্রধান কারণ বলে মনে করছেন মোদী সরকারের আর্থিক উপদেষ্টারা।
সংসার খরচ, সঞ্চয় কমেছে কেন? প্রথম কারণ, আয় কমা বা প্রত্যাশিত হারে না-বাড়া। দ্বিতীয় কারণ, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা।
অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে মধ্যবিত্তদের এই বিতৃষ্ণা কী ভাবে কাটানো যায়, বাজেটে তার রাস্তা খুঁজছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। অর্থ মন্ত্রক এমন ব্যবস্থা নিতে চাইছে, যাতে এক দিকে মধ্যবিত্তের হাতে খানিকটা বাড়তি টাকা থাকে এবং পাশাপাশি তাঁরা সঞ্চয়ে উৎসাহী হন। মন্ত্রকের কর্তাদের মতে, হাতে বাড়তি টাকা থাকলে মধ্যবিত্তেরা কেনাকাটা বাড়াবেন বলে আশা করা যায়। তাতে বাজারের স্বাস্থ্য ফিরবে। আর সঞ্চয় বাড়লে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি শিল্পে ঋণ দেওয়ার জন্য বাড়তি তহবিল পাবে। সরকার পরিকাঠামো খাতে ১০০ লক্ষ কোটি টাকা খরচ করার কথা ঘোষণা করেছে। সঞ্চয় বাড়লে সেই টাকা জোগানোও সহজ হবে।
মধ্যবিত্তের হাতে বাড়তি টাকা দেওয়া যাবে কী ভাবে? অর্থ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, আয়করের কাঠামোয় বদলের কথা ভাবা হচ্ছে। প্রত্যক্ষ কর বিধি সংক্রান্ত টাস্ক ফোর্স সুপারিশ করেছে, ২.৫ লক্ষ টাকা থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে কর ১০ শতাংশ করা হোক। এখন ২.৫ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকা আয়ে ৫ শতাংশ হারে কর দিতে হলেও ৫ থেকে ১০ লক্ষ টাকা আয়ে ২০ শতাংশ হারে কর দিতে হয়। টাস্ক ফোর্সের সুপারিশ মানলে আয়করের বোঝা অনেকটা কমবে। এ ছাড়া, সেস-সারচার্জ তুলে দেওয়ার কথা চলছে। এখন আয়করের উপরে ৪% শিক্ষা সেস দিতে হয়। ৫০ লক্ষ টাকার বেশি আয়ে সারচার্জ ১০%।
সঞ্চয়ে উৎসাহিত করতে কী ভাবনাচিন্তা চলছে? অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, এখন বছরে ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়ে আয়কর ছাড় মেলে। এর সঙ্গে জাতীয় সঞ্চয়পত্র বা এনএসসি-তে ৫০ হাজার টাকা রাখলে অতিরিক্ত ছাড় দেওয়া হতে পারে। পিপিএফ বা পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ডে এখন বছরে সর্বোচ্চ ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জমা করা যায়। এই খাতে জমার ঊর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে ২.৫ লক্ষ টাকা করা হতে পারে। নতুন বাড়ি কেনার ক্ষেত্রেও বাড়তি কর ছাড়ের ব্যবস্থা হতে পারে।
অর্থ মন্ত্রকের এক আর্থিক উপদেষ্টা বলেন, ‘‘১৯৯১-এ আর্থিক উদারীকরণের পরে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার এক ধাক্কায় বেড়ে যাওয়ার পিছনে মূল কারণ ছিল, বিরাট সংখ্যক নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণির আবির্ভাব। কিন্তু এখন তারাই গাড়ি থেকে সংসারের জিনিসপত্র, এমনকি অন্তর্বাস কেনাও কমিয়ে দিয়েছে। গ্রাম ও শহর, দুই জায়গাতেই এই লক্ষণ স্পষ্ট।’’
জাতীয় পরিসংখ্যান দফতর (এনএসও)-র সমীক্ষা বলছে, ২০১৭-১৮ সালে আমজনতার সংসার-খরচ কমেছে। এমনকি পড়াশোনার খরচেও কাটছাঁট করছেন তাঁরা। গত চার দশকে এমনটা ঘটেনি। সরকার সেই সমীক্ষা খারিজ করলেও বেসরকারি সংস্থার রিপোর্টেও একই ছবি ফুটে উঠেছে। অন্য দিকে, মোদী জমানায় পারিবারিক সঞ্চয়ের হার ২০১৭-১৮-য় ১৭ শতাংশে নেমে এসেছে। যা মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার আগের বছরেই ২৩ শতাংশের কোঠায় ছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy