Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

বিশ হাজার কোটির দাওয়াই আবাসনে, ঘোষণা নরেন্দ্র মোদী সরকারের

আজ নরেন্দ্র মোদী সরকার আবাসন ক্ষেত্রের জন্য প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল তৈরির ঘোষণা করল।

সাংবাদিক বৈঠকে নির্মলা। শনিবার দিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

সাংবাদিক বৈঠকে নির্মলা। শনিবার দিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:১৭
Share: Save:

ফ্ল্যাট কেনার জন্য অগ্রিম টাকা দিয়ে বসে রয়েছেন। এ দিকে প্রোমোটার টাকার অভাবে কাজই শেষ করতে পারছেন না! ক্রমশ দেউলিয়া হওয়ার দশা প্রোমোটার, আবাসন নির্মাণকারী সংস্থাগুলির। মাথায় হাত আমজনতারও।

এই সমস্যার সমাধানের চেষ্টায় আজ নরেন্দ্র মোদী সরকার আবাসন ক্ষেত্রের জন্য প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল তৈরির ঘোষণা করল। এর মধ্যে কেন্দ্র দেবে ১০ হাজার কোটি টাকা। বাকি অর্ধেক আসবে এলআইসি, ব্যাঙ্ক ও অন্যান্য সংস্থা থেকে।

অর্থ মন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী, এতে প্রায় ৩.৫ লক্ষ ফ্ল্যাট-বাড়ির মালিক উপকৃত হবেন। তবে যে সব প্রোমোটার বা আবাসন সংস্থা ইতিমধ্যেই দেউলিয়া ঘোষিত হয়েছে, সেখানে ফ্ল্যাট বুকিং করে বসে থাকা মানুষের কোনও লাভ হবে না। সরকারের হিসেব অনুযায়ী, গোটা দেশে এমন অন্তত ৫ লক্ষ ফ্ল্যাট-বাড়ি রয়েছে। কারণ গোটা দেশে কাজ আটকে থাকা আবাসনগুলিতে ফ্ল্যাট-বাড়ির সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৮ লক্ষ। বেসরকারি হিসেবে দেশের সাতটি বড় শহর মিলিয়ে আটকে থাকা ফ্ল্যাটবাড়ির সংখ্যা প্রায় ৫.৫ লক্ষ।

আবাসনে সুবিধা

• আটকে থাকা আবাসন প্রকল্পে সাহায্য করতে ২০,০০০ কোটি টাকার তহবিল

• যে সব সংস্থার অ্যাকাউন্ট অনুৎপাদক সম্পদ নয় এবং যারা জাতীয় কোম্পানি আইন ট্রাইবুনালে যায়নি, তারাই এর সুবিধা পাবে

• উপকৃত হবেন প্রায় ৩.৫ লক্ষ ফ্ল্যাটের ক্রেতা

• সরকারি কর্মীদের বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে নেওয়া অগ্রিমে কমতে চলেছে সুদ

• ওই সুদের হার ১০ বছরের সরকারি ঋণপত্রের প্রকৃত আয়ের (ইল্ড) সঙ্গে যুক্ত করা হবে

• আবাসন শিল্পে বৈদেশিক বাণিজ্য ঋণের শর্ত শিথিল

রফতানির জন্য

• রফতানিকারীদের জন্য কর ও শুল্ক ছাড়ের নতুন প্রকল্প

অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেন, ‘‘মধ্যবিত্তের সাধ্যের মধ্যে থাকা আবাসন প্রকল্পগুলিকে চিহ্নিত করা হবে, যেখানে ৬০ শতাংশ কাজ হয়ে গিয়েছে, কিন্তু নগদের অভাবে বাকি ৪০ শতাংশ কাজ আটকে রয়েছে।’’ বাড়ি তৈরির জন্য অগ্রিম নিলে তাতে সুদের হার কমানোর ব্যবস্থা
হয়েছে। এতে সরকারি চাকুরেরা লাভবান হবেন।

অর্থনীতির ঝিমুনি কাটানোর জন্য আজ তৃতীয় দফায়, একই সঙ্গে আবাসন ও রফতানি ক্ষেত্রকে চাঙ্গা করতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। দুই ক্ষেত্র মিলিয়ে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা সরকারি কোষাগার থেকে ব্যয় হবে। যদিও এর মধ্যে রফতানি ক্ষেত্রের কর ছাড় দিতে সরকার এখনই বছরে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার কোটি টাকা খরচ করছে। মোদী সরকারের লক্ষ্য, আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়ানো। আরও কর্মসংস্থান তৈরি। বাজারকে চাঙ্গা করা। এই তিন মাপকাঠিতেই বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে পড়েছে মোদী সরকার। যার জন্য এর আগে দুই দফায় অর্থমন্ত্রী নানা পদক্ষেপ ঘোষণা করেছেন।

বাজারে কেনাকাটা, লগ্নি, রফতানি, সরকারি খরচ— চার ইঞ্জিনের মধ্যে দেশের অর্থনীতি এখন শুধুমাত্র সরকারি খরচের ভরসায় ছুটছে। তাই রফতানিকে চাঙ্গা করতে আজ রফতানিযোগ্য পণ্যে কর ছাড়ের নতুন প্রকল্প ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। এখনও সরকার এই ধরনের কর ছাড় দিলেও তা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)-র নিয়মানুগ নয়। ২০২০-র ১ জানুয়ারি থেকে এই কর বা শুল্ক ছাড় দিতে গিয়ে সরকারের বছরে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হবে। পুরনো প্রকল্পে বছরে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হত। রফতানির জন্য ঋণের গ্যারান্টি প্রকল্প ও রফতানির জন্য অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ঋণ দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। যার ফলে ছোট-মাঝারি শিল্পের ঋণে সুদের খরচ কমবে। রফতানি বাড়াতে আগামী বছরের মার্চের মধ্যে দেশের চারটি শহরে দুবাইয়ের ধাঁচে ‘মেগা শপিং ফেস্টিভাল’
আয়োজন করা হবে। যা নিয়ে সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘‘ফ্ল্যাট বিক্রি হচ্ছে না, কারণ লোকের হাতে টাকা নেই। তার মধ্যে
‘মেগা শপিং ফেস্টিভাল’ আয়োজন নিষ্ঠুর রসিকতা।’’

নোট বাতিলের পর থেকেই ঝিমিয়ে থাকা আবাসন প্রকল্পের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিলের পাশাপাশি এ বার আবাসন ক্ষেত্রে ঋণদাতা সংস্থাগুলির জন্য বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করা হবে। অর্থ মন্ত্রক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিকে চাপ দিচ্ছে, যাতে তারা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সুদের হার কমায়। আবাসন ক্ষেত্রে নগদের জোগান বাড়ানোর জন্যও ব্যাঙ্কগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কতখানি কাজ এগিয়েছে, তা দেখতে ১৯ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের প্রধানদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন অর্থমন্ত্রী।

আজকের পদক্ষেপকে শিল্পমহল মোটের উপর স্বাগত জানালেও কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মার মন্তব্য, ‘‘অর্থমন্ত্রীর সামগ্রিক অর্থনীতির সম্পর্কে বোধবুদ্ধির অভাব রয়েছে। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সার্বিক প্যাকেজ দরকার ছিল। আজকের ঘোষণা নেহাতই চটকদারি।
টুকরো টুকরো। এতে সরকারের ঔদ্ধত্য এবং পরিস্থিতির গুরুত্ব সম্পর্কে অবজ্ঞা স্পষ্ট।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Nirmala Sitharaman Housing Industry Economy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy