বৈঠক: ব্যাঙ্ক-কর্তাদের সঙ্গে নির্মলা সীতারামন। হাজির সিবিআইয়ের দুই যুগ্ম অধিকর্তাও (বাঁ দিক থেকে দু’জন)। শনিবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
মনমোহন সিংহ অভিযোগ তুলেছিলেন, শিল্পমহল থেকে ব্যাঙ্ক-কর্তা, সরকারি নীতি নির্ধারক থেকে সাধারণ নাগরিক—মোদী জমানায় সকলেই আতঙ্কে ভুগছেন। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ব্যাঙ্ক-কর্তাদের মধ্যে সেই আতঙ্কের কথা আজ মেনে নিলেন।
ব্যাঙ্ক-কর্তাদের মধ্যে সেই আতঙ্ক কাটাতে অর্থমন্ত্রী আজ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্তাদের সঙ্গে সিবিআই ডিরেক্টর ঋষিকুমার শুক্লকে এক টেবিলে বসিয়ে আলোচনার পর ঘোষণা করেছেন, ব্যাঙ্কের তরফ থেকে অনুরোধ না এলে সিবিআই নিজে থেকে কোনও জালিয়াতি বা প্রতারণার তদন্ত করবে না। নির্মলা বলেন, ‘‘তিনটি সি সম্পর্কে আতঙ্ক ছিল। সিবিআই, সিভিসি এবং সিএজি। তদন্ত সংস্থার হেনস্থার ভয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না বলে উদ্বেগ ছিল। আজ সিবিআই ডিরেক্টরের উপস্থিতিতে ব্যাঙ্কের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। ডিরেক্টর ব্যাঙ্ক কর্তাদের ভুল ধারণাগুলো ধরিয়ে দিয়েছেন। সিবিআই নিজে থেকে ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে না। ব্যাঙ্ক নিজে না সিদ্ধান্ত নিলে সিবিআইয়ের কাছে কোনও মামলা যাচ্ছে না।’’
সিবিআইয়ের ডিরেক্টরের সঙ্গে আজ দুই যুগ্ম অধিকর্তাও হাজির ছিলেন বৈঠকে। ঠিক হয়, সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসাররাও এর পরে ব্যাঙ্কের নিচু তলার অফিসারদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। অর্থমন্ত্রী ইডি, রাজস্ব গোয়েন্দা ও শুল্ক দফতরের সঙ্গেও বৈঠক করবেন।
আরও পড়ুন: শিলিগুড়িতে বাণিজ্য সম্মেলন: দু’হাজার কোটি বিনিয়োগের ডাক
পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কে নীরব মোদী-মেহুল চোকসির প্রতারণা ও সিবিআই-ইডির তদন্তের পরেই ব্যাঙ্ক-কর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ায়। নীরব-কেলেঙ্কারিতে পিএনবি-র উচ্চপদস্থ অফিসাররাও জড়িত ছিলেন। তাঁদের হাল দেখে নতুন ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রেই হোক বা পুরনো ঋণ শোধ করার সহজ ব্যবস্থা করে দিতে ব্যাঙ্ক-কর্তারা সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পাচ্ছেন। এ দিকে, মূল্যায়নকারী সংস্থা ইক্রা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, ব্যাঙ্ক থেকে এতই কম ঋণ দেওয়া হচ্ছে যে চলতি অর্থ বছরে ঋণের বৃদ্ধির হার ৫৮ বছরে সর্বনিম্ন হতে পারে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গতকালই জানিয়েছে, অনাদায়ী ঋণের বোঝা বা এনপিএ আগামী বছরে বাড়তে চলেছে।
এক নজরে
সমস্যা
• পিএনবি-তে নীরব মোদীর জালিয়াতির পর থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যাঙ্ক কর্তাদের ভয়। নতুন ঋণ বিলির সিদ্ধান্ত নিতে গড়িমসি। পুরনো ঋণ শোধ করার সহজ ব্যবস্থা করে দিতেও ভয়
অর্থনীতিতে আশঙ্কা
• ব্যাঙ্ক থেকে ঋণের পরিমাণ বাড়ছে না। চলতি বছরে ঋণের বৃদ্ধির হার গত ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন হতে পারে
• ব্যাঙ্কের অনাদায়ী ঋণ আগামী বছরে বাড়বে
অর্থমন্ত্রী বলেন
• সিবিআই নিজে থেকে তদন্ত করবে না। ব্যাঙ্কের নিজস্ব কমিটি প্রতারণা সন্দেহ করলেই সিবিআইয়ের
কাছে অভিযোগ জানানো হবে
যেখানে প্রশ্ন
• ব্যাঙ্ক ঋণ বিলি করলেও ঋণ নেবে কে? অর্থনীতির ঝিমুনির ফলে তো দামি কেনাকাটা বা শিল্পে নতুন লগ্নিতে কেউ আগ্রহী নন। সেই সমস্যার সমাধান?
• ব্যাঙ্ক কর্তারা মুখরক্ষায় জালিয়াতি বা প্রতারণা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করতে পারেন। বাইরে থেকে কেউ অভিযোগ জানালেও কি সিবিআই হাত গুটিয়ে বসে
অর্থমন্ত্রী আজ বোঝাতে চেয়েছেন, ব্যাঙ্ক-কর্তাদের আতঙ্ক কেটে গেলেই তাঁরা দরাজ হাতে ঋণ বিলি করতে শুরু করবেন। কিন্তু অর্থনীতিবিদদের প্রশ্ন, অর্থনীতির ঝিমুনির ফলে বাজারে কেনাকাটাই নেই। শিল্পমহলও নতুন লগ্নিতে নারাজ। তা হলে ব্যাঙ্ক-কর্তারা হাত খুলে ঋণ দিলেও তা নেবে কারা?
অর্থ সচিব রাজীব কুমারের ব্যাখ্যা, ব্যাঙ্ক নতুন ঋণ দিচ্ছে। পুরনো ঋণও অনেক শোধ হচ্ছে। ফলে নতুন ঋণের দরকার কম পড়ছে। এনপিএ বৃদ্ধির আশঙ্কা জানিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রিপোর্ট নিয়ে অর্থমন্ত্রী জবাব দিয়েছেন, তিনি এখনও রিপোর্ট পড়ে দেখেননি। অর্থ সচিবের যুক্তি, ‘‘গত সেপ্টেম্বরের তুলনায় এ বছরের সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এনপিএ ৮.৯৬ লক্ষ কোটি টাকা থেকে ৭.২৭ লক্ষ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। ২০১৮-১৯-এ ১৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক লোকসানে পড়েছিল। ২০১৯-২০-এর প্রথমার্ধে ১৩টি ব্যাঙ্ক লাভের মুখ দেখেছে।’’
আতঙ্ক কাটাতে অর্থমন্ত্রী জানান, ৩ কোটি টাকার বেশি সন্দেহজনক প্রতারণার ঘটনা আগে ব্যাঙ্কের নিজস্ব কমিটি খতিয়ে দেখবে। তার পর তা রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে জানানো হবে। প্রয়োজনে সিবিআইয়ের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হবে। সিবিআই নিজে থেকে পদক্ষেপ করবে না। ব্যাঙ্ক-বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, ব্যাঙ্কের শীর্ষকর্তারা যদি নিজেদের মুখরক্ষায় জালিয়াতি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন, তা হলে কী হবে? বাইরের কেউ দুর্নীতি বা জালিয়াতির গন্ধ পেয়ে সিবিআইকে অভিযোগ জানালেও তারা কিছুই করবে না? নির্মলার উত্তর, ‘‘বাইরের কেউ অভিযোগ জানাতে এলে তাতে কোনও বাধা থাকছে না।’’
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ বলেছিলেন, মোদী সরকারের নীতির ভিত হল, সকলেই অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে চলছে এবং শিল্পপতি, ব্যাঙ্ক, উদ্যোগপতি, সাধারণ নাগরিক সকলেই ঠকাতে চাইছে—সরকারের এই সন্দেহের ফলেই অবিশ্বাসের আবহ তৈরি হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আজ তা মেনে নিয়েই বলেন, ‘‘সাম্প্রতিক অতীতে ব্যাঙ্কগুলো কিছুটা দুশ্চিন্তার মধ্যে কাটিয়েছে। আতঙ্ক যুক্তিযুক্ত ছিল। ব্যাঙ্ক-কর্তাদের আতঙ্কের ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ধাক্কা লেগেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy