মুদ্রা ব্যাঙ্কের উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী। বুধবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
বড় শিল্পপতিরা যখন ক্রমশই অধৈর্য হয়ে পড়ছেন, তখন আজ ছোট শিল্পোদ্যোগী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, হকার, দোকানদারদের মন জয়ের চেষ্টায় নামলেন নরেন্দ্র মোদী।
ফেব্রুয়ারির শেষদিনে কেন্দ্রীয় বাজেটে ঘোষণা করা হয়েছিল, যাঁদের ঋণ দেওয়ার কেউ নেই, তাঁদের ধার দেওয়ার জন্য পৃথক মুদ্রা ব্যাঙ্ক তৈরি হবে। আজ আনুষ্ঠানিক ভাবে সেই ব্যাঙ্ক চালু করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মনে করিয়ে দিলেন, ঘোষণার ৫০ দিনের মধ্যে ব্যাঙ্কের উদ্বোধন সম্ভব হল।
অনেকের মনেই প্রশ্ন উঠেছে, তাঁর সরকার সম্পর্কে ক্রমশ অধৈর্য হয়ে পড়া বড় শিল্পপতিদেরই কি আজ বার্তা দিতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী? কারণ নরেন্দ্র মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার দশ মাস পরে শিল্পমহলে ধীরে হলেও হতাশা ছড়াচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, মুখে যত কথা বলা হচ্ছে, কাজে তা দেখা যাচ্ছে না। অধিকাংশ শিল্পপতিই সরকারকে আরও সময় দিতে তৈরি থাকলেও, দীপক পারেখ, কিরণ মজুমদার শ’র মতো কয়েক জন হতাশা প্রকাশ করেছেন। যে তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন হর্ষ মারিওয়ালা। মারিকো-র চেয়ারম্যান মন্তব্য করেছেন, ‘‘প্রতিশ্রুতি ও তা পূরণের ক্ষেত্রে মোদী সরকার জেল্লা হারাচ্ছে। এ বার দ্রুত এগোনো দরকার।’’
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আজ মোদী ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগী, ছোট ব্যবসায়ীদের ঋণ দেওয়ার জন্য ব্যাঙ্ক চালু করতে গিয়ে বলেছেন, ‘‘যত বড় বড় শিল্প সংস্থার নাম শোনেন রোজ, সেই সব প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে মাত্র ১ লক্ষ ২৫ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হয়। অথচ ছোট শিল্প বা ব্যবসায় ১২ কোটি লোকের রোজগার হয়।’’ মোদীর যুক্তি: হকার, রিক্সাচালক, ছোট ব্যবসায়ী, সেলুনের মালিক থেকে ছোট কারখানার মালিকদের এখনও সেই মহাজনদের উপরেই নির্ভর করতে হয়। ফলে চড়া সুদে ধার নিতে হয় তাঁদের। এই ধরনের ৫ কোটি ৭৫ লক্ষ মানুষ নিজেদের রোজগারের ব্যবস্থা করেছেন। সব মিলিয়ে ১১ লক্ষ কোটি টাকার পুঁজিতে তাঁরা কাজ করেন, ১২ কোটি মানুষের কর্মসংস্থানেরও বন্দোবস্ত করেন। কিন্তু এত মানুষের কর্মসংস্থানের পরেও এঁদের প্রায় কোনও ব্যাঙ্কই ঋণ দেয় না। ৫ কোটি ৭৫ লক্ষ উদ্যোগীর মাত্র ৪ শতাংশ ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পান। বাকিদের ভরসা সেই মহাজন। এঁদের জন্যই মুদ্রা (মাইক্রো ইউনিটস ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিফাইনান্স এজেন্সি) কাজ করবে।
অরুণ জেটলি জানিয়েছেন, প্রাথমিক ভাবে সিডবি-র শাখা হিসেবে কাজ করলেও পরে একে পৃথক ব্যাঙ্কের মর্যাদা দেওয়া হবে। এ জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার তহবিল তৈরি হবে। ক্রেডিট গ্যারান্টির জন্য আরও ৬ হাজার কোটি টাকার তহবিল থাকবে। ৫০ হাজার টাকা থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে পারবে এই সংস্থা। অন্য ক্ষুদ্র-ঋণ সংস্থাকেও ধার দিয়ে সাহায্য করবে। তাদের নিয়ন্ত্রণের ভারও মুদ্রা-র উপরেই ছেড়ে দেওয়া হবে। ক্ষুদ্র-ঋণ সংস্থাগুলি যাতে চড়া সুদে ধার দিয়ে ছোট ব্যবসায়ীদের ঋণের বোঝা না-বাড়ায়, সে দিকে নজর রাখবে মুদ্রা।
যে প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্র-ঋণ সংস্থাগুলিকে অর্থ জোগাবে, সেটিই তাদের নিয়ন্ত্রণ করবে, এ’টি কতখানি যুক্তিযুক্ত, তা নিয়ে অবশ্য অর্থনীতিবিদদের মধ্যে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে কথা উঠেছে, নাবার্ড বা সিডবি-র মতো সংস্থাগুলির কাজের ব্যাপ্তি আরও না-বাড়িয়ে নতুন সংস্থা তৈরির কী প্রয়োজন পড়ল। প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘ঋণের বন্দোবস্ত করার ফলে শিক্ষিত তরুণদের মনোবল বাড়বে। কারণ তাঁদের সামনে নতুন শিল্পোদ্যোগী বা ব্যবসায়ী হয়ে ওঠার আরও বেশি সুযোগ আসবে। এখন যাঁরা ছোট মাপের ব্যবসা বা কারখানা চালাচ্ছেন, তাঁরাও নিজেদের ব্যবসা বাড়িয়ে নিতে পারবেন।’’
অর্থ মন্ত্রকের আর্থিক পরিষেবা সচিব হাসমুখ আঢ়িয়া জানান, জিজি মেমনকে মুদ্রা-র সিইও পদে নিযুক্ত করা হয়েছে। মেমন এর আগে নাবার্ডের চিফ জেনারেল ম্যানেজার ছিলেন। অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, অর্থনীতির ২০ শতাংশ জুড়ে রয়েছেন ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোগী ও ছোট ব্যবসায়ীরা। রফতানির ৪০ শতাংশও আসে এই ক্ষেত্র থেকে। তাই অর্থনীতির হাল শোধরাতে এই ক্ষেত্রের উন্নতি দরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy