Advertisement
১২ জানুয়ারি ২০২৫

বাজার তাকিয়ে ঋণনীতির দিকে

২০১৫-’১৬ ম্যাচের খেলা এখন একদম শেষ ওভারে। আর মাত্র চারটি বল বাকি। যতটা সম্ভব রান তুলতে হবে এই শেষ ক’টি বলে। পাশাপাশি পরিকল্পনা শুরু করে দিতে হবে পরের ম্যাচটির (২০১৬-’১৭) জন্যও। কর দিতে হবে এবং কর বাঁচাতে হবে এই ক’দিনের মধ্যেই।

অমিতাভ গুহ সরকার
শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৬ ০৩:১৯
Share: Save:

২০১৫-’১৬ ম্যাচের খেলা এখন একদম শেষ ওভারে। আর মাত্র চারটি বল বাকি। যতটা সম্ভব রান তুলতে হবে এই শেষ ক’টি বলে। পাশাপাশি পরিকল্পনা শুরু করে দিতে হবে পরের ম্যাচটির (২০১৬-’১৭) জন্যও। কর দিতে হবে এবং কর বাঁচাতে হবে এই ক’দিনের মধ্যেই। একই সঙ্গে মাথায় রাখতে হবে ১ এপ্রিল থেকে ডাকঘরে সুদ কমার কথা। নতুন অর্থবর্ষের চারটি দিন যেতে না যেতেই আবার সুদ কমতে পারে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিতেও। ৫ এপ্রিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ঋণনীতি পর্যালোচনা করবে। ওই দিন রঘুরাম রাজন যে রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমাবেন, তা শিল্পমহল এবং শেয়ার বাজার এক রকম ধরেই রেখেছে। আর এই কারণেই বাজার চাঙ্গা গত কয়েক দিন ধরে।

বেল এ বার পাকলেও পাকতে পারে। কিন্তু তাতে ‘কাকেদের’ কী? সুদ আরও নামলে তার উপর বেশ খানিকটা নির্ভর করে থাকা মানুষদের সমস্যা যে ঘনীভূত হবে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। রেপো রেট ছাঁটা হলে ঋণের উপর সুদ কমবে। পাশাপাশি সুদ কমবে ব্যাঙ্ক জমার উপরেও। এই কথা মাথায় রেখে আগামী অর্থবর্ষের পরিকল্পনা ছকতে হবে। যাঁদের ফ্ল্যাট ও গাড়ি কেনার পরিকল্পনা মাথায় আছে, তাঁদের জন্য অবশ্য সুদ কমা একটি সুখবর। তবে মোটের উপর মধ্যবিত্তদের জন্য যে কঠিন দিন আসছে, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। যাঁদের উঁচু সুদে লম্বা মেয়াদের জন্য টাকা জমা করা হয়ে ওঠেনি, তাঁদের এখন জেটলি-রাজনের ‘বাউন্সার’ সামলানো ছাড়া পথ নেই। কম সুদের জমানায় ফিরে যাওয়ার বার্তা জেটলি বারবারই দিচ্ছেন। রাজনকে পাশে পেয়ে গেলে এ কাজ সহজ হবে।

সুদ কমার ইঙ্গিতে শিল্প এবং শেয়ার বাজার বেজায় খুশি। ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমার প্রতিফলন এরই মধ্যে পড়েছে শেয়ার সূচকে। অর্থাৎ রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমলে হয়তো আমরা সূচকে বড় উত্থান দেখব না। তবে সুদ ছাঁটাই অবশ্যই প্রাণবন্ত রাখবে সূচককে। আর যদি অপ্রত্যাশিত ভাবে ৫০ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমে, তবে সেনসেক্স নিফটি সাময়িক লাগামছাড়া হয়ে উঠতে পারে। সুদ কথাটা ছোট হলেও গোটা সমাজের উপর এর প্রভাব কিন্তু বিরাট। এর সামান্য পরিবর্তনও নাড়া দেয় প্রায় সবাইকেই। দেখে নেব এক নজরে।

(১) রেপো রেট কমলে সুদ কমবে বাড়ি ও গাড়ি কেনার ঋণে। গৃহঋণে এ বারের বাজেটে অতিরিক্ত ছাড় দেওয়া হয়েছে। সুদ কমলে ফ্ল্যাট ও গাড়ি কেনা মধ্যবিত্তের কাছে সহজ হবে। চাহিদা বাড়বে এই দুই শিল্পে। পাশাপাশি উপকৃত হবে সিমেন্ট, ইস্পাত, রং, ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রাংশ ইত্যাদি শিল্প। ফলে বাড়বে কর্মসংস্থান। ঋণে সুদ কমলে এ ভাবেই উপকৃত হয় সমাজ।

(২) রেপো রেট কমলে সুদ কমবে শিল্পঋণেও। ফলে কমবে শিল্পের উৎপাদন খরচ। এতে পণ্যমূল্য কমার পথ চওড়া হবে। পণ্যের চাহিদা বাড়লে শিল্পে মন্থরতা দূর হবে। নতুন প্রকল্প তৈরির সম্ভাবনা উজ্জ্বল হবে। বাড়বে কর্মসংস্থান। উপকৃত হবে সমাজ।

(৩) সুদ কমা শেয়ার বাজারের পক্ষে সদর্থক। অনেক দিন ঝিমিয়ে থাকার পর সুদ কমবে এই আশায় বাজার আবার উঠতে শুরু করেছে। বাজার চাঙ্গা থাকলে শিল্পের পক্ষে মূলধন সংগ্রহ সহজ হয়। সংস্থাগুলি নতুন প্রকল্প হাতে নিতে সাহস পায়। সরকারের পক্ষে বিলগ্নিকরণ সহজ হয়। শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের লগ্নিকারীদের দুশ্চিন্তা কমে। অর্থাৎ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে শেয়ার বাজারের উত্থান ছুঁয়ে যায় বহু মানুষকেই।

(৪) রেপো রেট কমানো হলে ঋণের পাশাপাশি সুদ কমে জমায়। জমার উপর সুদ কমলে আগে ইস্যু করা বন্ডের বাজারদর বেড়ে ওঠে। এতে উপকৃত হন বন্ড ফান্ড এবং ডেট ফান্ডের লগ্নিকারীরা।

(৫) ব্যাঙ্ক এবং ডাকঘরে সুদ কমলে বেশি এবং করমুক্ত আয়ের আশায় শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করবেন অল্পবিস্তর ঝুঁকি নিতে পিছপা নন এমন বহু মানুষ। শেয়ার বাজারে বেশি মানুষের যোগদান করা
অবশ্যই সদর্থক।

(৬) বাড়ি গাড়ি ঋণে সুদ কমলে যাঁরা নিরুত্তাপ, শেয়ার বাজারের ওঠা-পড়া নিয়ে যাঁদের কিছু এসে-যায় না, জিডিপি বাড়া-কমা নিয়ে যাঁদের মাথাব্যথা নেই— এমন অসংখ্য সুদনির্ভর মানুষের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে, যখন তাঁরা শোনেন সুদ আরও কমতে পারে। অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণদের বেশি চিন্তা চিকিৎসা-খরচ বৃদ্ধি, খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও পাশাপাশি সুদ বাবদ আয় ক্রমাগত কমে আসা ইত্যাদি নিয়ে। যাঁরা বেশ কয়েক বছর আগে অবসর নিয়েছেন, তাঁরা এখন মেয়াদ শেষে পুরনো জমা নতুন করে রাখতে গেলে সুদ বাবদ আয় অনেকটাই কমে আসবে। প্রবীণ হওয়ায় তাঁদের প্রাপ্তি ০.২৫ থেকে ০.৫% অতিরিক্ত সুদ। অন্য দিকে গত এক বছরে ব্যাঙ্কে সুদ কমেছে ১ থেকে ১.২৫%। আরও কমতে পারে ৫ এপ্রিলের পর। ১ এপ্রিল থেকে ডাকঘর প্রবীণ নাগরিক প্রকল্পে সুদ ৭০ বেসিস পয়েন্ট কমে হবে ৮.৬%।

সুদের হার কমবে ডাকঘর মাসিক আয় প্রকল্পেও। দেশের অর্থনীতি যে পথে এগোচ্ছে, তাতে অনেকে জিডিপি-সেনসেক্স নিয়ে উল্লসিত হলেও একই সমাজের অন্য আর এক অংশ ভবিষ্যতের কথা ভেবে ভয় কুঁকড়ে যাচ্ছেন। পশ্চিমের উন্নত দেশগুলিতে প্রচলিত কম সুদের উদাহরণ দেওয়া হচ্ছে বটে, তবে মনে রাখতে হবে, সে-সব দেশে সাধারণ মানুষের জন্য যে সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা আছে, তার এক ভগ্নাংশও আমাদের দেশে নেই।

অন্য বিষয়গুলি:

share market loan policy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy