গত শুক্রবার মোদী সরকারের দ্বিতীয় দফার প্রথম বাজেট ঘোষণা হতেই মুষড়ে পড়ছিল শেয়ার বাজার।
সকালের দিকে সেনসেক্স ৪০ হাজার পার করেছিল ঠিকই। কিন্তু অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বাজেট বক্তৃতা শুরুর পরেই তা নামতে থাকে। লেনদেনের মাঝামাঝি সময়ে প্রায় ৪৫০ পয়েন্ট পড়ে যায়। শেষে আগের দিনের তুলনায় ৩৯৪.৬৭ পয়েন্ট হারিয়ে সূচকটি থিতু হয় ৩৯,৫১৩.৩৯ অঙ্কে। টানা চার দিন ওঠার পরে এসেছিল এই ধাক্কা। প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকার সম্পদ হারান লগ্নিকারীরা। ১৩৫.৬০ পয়েন্ট খুইয়ে নিফ্টি-ও নামে ১১,৮১১.১৫ অঙ্কে।
বাজেটে অর্থমন্ত্রীর যে সমস্ত প্রস্তাবে মেঘ ঘনিয়েছে লগ্নিকারীদের মনে, তার মধ্যে অন্যতম কিছু হল—
• ৪০০ কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যবসা করা সংস্থার ক্ষেত্রে কর্পোরেট করের হার ৩০% থেকে ২৫ শতাংশে নামানো। অথচ নথিবদ্ধ বেশির ভাগ ভাল সংস্থার ব্যবসাই এর থেকে অনেক বেশি। তারা সুবিধা থেকে বাদ পড়ায় হতাশ।
• বাজার থেকে সংস্থার নিজেদের শেয়ার কিনে ফেরানোর (বাই ব্যাক) উপরে ২০% কর বসানো। সম্প্রতি কিছু সংস্থা বেশি ডিভিডেন্ড না দিয়ে লাভের মোটা অংশ বাই ব্যাকের পথে শেয়ারহোল্ডারদের ঘরে পৌঁছে দিচ্ছিল। এতে সরকার বঞ্চিত হচ্ছিল ডিভিডেন্ড বণ্টন কর থেকে। সেই প্রবণতা বন্ধেরই উদ্যোগ এটি।
• জনগণের হাতে বাধ্যতামূলক ভাবে ন্যূনতম শেয়ার রাখার অনুপাত ২৫% থেকে বাড়িয়ে ৩০% করার প্রস্তাব। এটা হলে বাজারে শেয়ারের জোগান বাড়বে। আশঙ্কা, তা দাম বাড়ার পরিপন্থী হতে পারে।
• করে উৎপাদন শুল্ক ও সেস মিলিয়ে পেট্রল ও ডিজেলের দাম লিটারে ২ টাকা করে বাড়া। লগ্নিকারিদের দাবি, এই পদক্ষেপ আঘাত হানতে পারে এমনিতেই ঝিমিয়ে পড়া গাড়ি শিল্পে। প্রভাব পড়তে পারে জিনিসপত্রের দামে। মাথা তুলতে পারে মূল্যবৃদ্ধি। যা সুদ কমানোর পরিপন্থী হতে পারে।
• ২ কোটি টাকার বেশি আয়সম্পন্ন ব্যক্তিদের আয়করে সারচার্জ। বাজারে বড় মাপের লগ্নিকারীরা এতে অসন্তুষ্ট।
• নতুন করে কর বসায় দাম বৃদ্ধি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের। যা ধাক্কা দিতে পারে সংশ্লিষ্ট শিল্পকে এবং এর প্রভাব পড়তে পারে ওই পণ্য উৎপাদনকারী সংস্থার শেয়ারে।
অবশ্য নির্মলার প্রথম বাজেটে রয়েছে কিছু সদর্থক বার্তাও। এ বার তার কয়েকটির উপরে চোখ রাখব—
• ৪৫ লক্ষ টাকা বা তার কম দামের বাড়ি কিনলে সাড়ে তিন লক্ষ টাকা পর্যন্ত সুদে আয়করে ছাড়। মধ্যবিত্ত ক্রেতার সুরাহার পাশাপাশি উপকৃত হবে গৃহনির্মাণ ও গৃহঋণ সংস্থাগুলিও।
• বৈদ্যুতিক গাড়ি কেনার ঋণের উপর ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সুদ করমুক্ত হওয়ায় চাহিদা বাড়বে এই গাড়ির।
• চলতি অর্থবর্ষে বিলগ্নিকরণের অঙ্ক ১,০৫,০০০ কোটি টাকায় বাঁধা। এতে শেয়ার বাজারে লভ্য হবে অধিক মাত্রায় সরকারি সংস্থার শেয়ার।
• বিমান সংস্থায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি বাড়িয়ে ৪৯% করা। এতে রুগ্ণ এয়ার ইন্ডিয়ার অংশীদারি বিক্রি সহজ হবে সরকারের পক্ষে। কিংফিশার ও জেট বন্ধ হওয়ার পরে বিমান পরিবহণে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে, তা ভরতে এ বার ভারতের আকাশে দেখা যেতে পারে বিদেশি বিমান সংস্থাগুলিকে।
• বিদেশি পোর্টফোলিও লগ্নিকারীদের জন্য সহজ হবে কেওয়াইসি পদ্ধতি। আশা, এতে বিদেশি লগ্নি বৃদ্ধির পথ সুগম হবে। ওই লগ্নি বাড়লে চাঙ্গা থাকবে শেয়ার বাজার। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ইটিএফ-এ করছাড়ের প্রস্তাবও করদাতাকে টানবে ইকুইটির বাজারে।
• রেল এবং পরিকাঠামো শিল্পে বিপুল বরাদ্দ চাহিদা বাড়াবে ইস্পাত, সিমেন্ট-সহ নানা পণ্যের। এই লগ্নির মাধ্যমে বাড়বে টাকার জোগান।
অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, বাজেটে বাজারের জন্য ভাল ও মন্দ, দুই-ই আছে। আজ থেকে শুরু করে গোটা সপ্তাহটা ধরে চলবে তার চুলচেরা বিশ্লেষণ। যার প্রভাবও আমরা দেখতে পাব বাজারে। আসলে বাজেট ঘোষণার দিন বাজারের প্রতিক্রিয়া বাজেটের প্রকৃত প্রতিফলন না-ও হতে পারে। অতীতে অনেক বারই বাজারের আচরণ পাল্টেছে সেটির খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ হওয়ার পর। এ বার সেটা হবে কিনা তা পরিষ্কার হবে কয়েক দিনের মধ্যেই। এর পরে বাজারের নজর ফের ঘুরবে বর্ষা, চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিক ফলাফল, চিন-মার্কিন শুল্কযুদ্ধ ইত্যাদির মতো বিষয়ে।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy