Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Tea Economy

চায়ের কাপে দামের ছেঁকা

চায়ের নেশায় মাতোয়ারা বাঙালি আঁতকে উঠছেন দোকানে তা কিনতে গিয়ে। সে সিটিসি হোক বা দার্জিলিঙের মতো অর্থোডক্স ঘরানার।

খুচরো বাজারেও বেড়েছে চায়ের দাম

খুচরো বাজারেও বেড়েছে চায়ের দাম

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২০ ০৩:০৭
Share: Save:

চায়ের আমেজে ডুব দিতে গেলেই পকেটে ছেঁকা লাগছে বেশ। করোনার সৌজন্যে ঘর যখন অনেকটা সময় দখল করেছে সকলের, ঠিক তখনই চায়ের নেশায় মাতোয়ারা বাঙালি আঁতকে উঠছেন দোকানে তা কিনতে গিয়ে। সে সিটিসি হোক বা দার্জিলিঙের মতো অর্থোডক্স ঘরানার। আর্থিক টানাটানির মধ্যে দাঁড়িয়ে বহু ক্রেতার আক্ষেপ, দিনভর মাঝে-মধ্যেই কাপে চুমুক দেওয়ার অভ্যাসটা অন্তত এখন খানিকটা কাটছাঁট না-করলে আর চলছে না।

গত বছরের থেকে এ বার চায়ের দাম অনেকখানি মাথা তুলেছে। শিল্প সূত্রের খবর, করোনার সংক্রমণ রুখতে দীর্ঘ লকডাউনে বাগান বন্ধ ছিল। ফলে উৎপাদনে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এতটাই যে, লকডাউন শিথিলের পরে উৎপাদন স্বাভাবিক হলেও সেই ঘাটতি এখনও পোষানো সম্ভব হয়নি। ফলে বাজারে চাহিদা অনুযায়ী চা জোগানো সম্ভব হচ্ছে না। সেই ফারাকের জেরেই বেড়েছে দাম। গত বছরের থেকে কেজিতে গড়ে প্রায় ১০০ টাকা।

নিলামে দাম
নিলামের তারিখ দাম দাম

(২০২০) (২০২০) (২০১৯)
১-২ জুলাই ২৬৮.৩৮ ১৭৫.০৫
২২-২৩ জুলাই ২৮৪.৬৫ ১৭৭.১৭
৬-৭ অগস্ট ৩০৯.৫৬ ১৮১.১৩
২৫-২৬ অগস্ট ২৯৬.২৬ ১৬৪.৮২
৯-১০ সেপ্টেম্বর ২৮৬.৩৪ ১৬৩.৮৭
২২-২৩ সেপ্টেম্বর ২৭৫.২২ ১৫৮.১৯


* কেজিতে সিটিসি (লিফ) চায়ের গড় দাম |

* সূত্র: সিটিটিএ

বাজারে চাহিদা মূলত সিটিসি চায়ের। চলতি কথায় যা গুঁড়ো চা বলেই পরিচিত। উৎপাদনের ক্ষেত্রে যেটির অংশীদারি প্রায় ৯০%। দাম বেড়েছে দার্জিলিং-সহ অর্থোডক্স চায়েরও। তবে বাজারে তার পরিমাণ কম। বরং এই চায়ের অধিকাংশ রফতানি হয়। তার উপরে পাইকারি বাজারে সিটিসি চা মূলত নিলামে বিক্রি হলেও, দার্জিলিং চায়ের বেশিরভাগ অংশই বাগানগুলি সরাসরি বিক্রি করে খুচরো ব্যবসায়ীদের। খুব অল্প আসে নিলামে। ক্যালকাটা টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন (সিটিটিএ) সূত্রের খবর, উৎপাদনের ঘাটতি এ বার নিলামের দামে প্রায় গোড়া থেকেই প্রভাব ফেলায় খুচরো বাজারেও বেড়েছে চায়ের দাম। তবে বাজার-দোকানের ব্যবসায়ীদের দাবি, তাঁরা পাইকারি বাজারের দামের পুরো চাপটা খুচরো বাজারের ক্রেতার উপরে চাপাচ্ছেন না।

চা শিল্পের দাবি

• লকডাউনে দীর্ঘ দিন বাগান বন্ধ থাকায় পশ্চিমবঙ্গ ও অসমে চা উৎপাদনে ঘাটতি প্রায় ৩০%।

• চাহিদা-জোগানের ফারাক বাড়ায় নিলামেই দাম গত বছরের থেকে কেজিতে গড়ে প্রায় ১০০ টাকা বেড়েছে। দাম বাড়ছে খুচরো বাজারেও।

• সম্প্রতি জোগান একটু বাড়ায় দাম সামান্য কমলেও, ঘাটতি মেটা কঠিন। ফলে গত বারের থেকে দাম বেশি থাকারই আশঙ্কা।

কলকাতার অন্যতম খুচরো ব্যবসায়ী মহাবোধি টি হাউজ়ের কর্ণধার পার্থসারথি দত্ত জানান, পাইকারি দাম বাড়ায় গত জুন থেকে খোলা বাজারেও স্বাভাবিক ভাবেই চায়ের দাম চড়েছে। লকডাউনের সময় উৎপাদনের বিপুল ঘাটতিই এর জন্য দায়ী। যদিও তাঁর দাবি, ক্রেতার পকেটে সেই আঁচের পুরোটা পড়লে ব্যবসায় ক্ষতি হবে, এই আশঙ্কায় খুচরো ব্যবসায়ীরা নিজেদের লভ্যাংশ কম রাখছেন। ফলে চায়ের দাম যতটা হলে ভাল হত, সেই হারে বাড়াননি তাঁরা।

ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল অরিজিৎ রাহা বলছেন, অসম ও পশ্চিমবঙ্গে এ বারে অগস্ট পর্যন্ত প্রায় ৩০% চা কম তৈরি হয়েছে। তারপর থেকে উৎপাদন প্রায় স্বাভাবিক হলেও, সেই ঘাটতি পূরণ হয়নি। তাই এখন নিলামে দাম সামান্য পড়লেও, সাধারণ মানুষকে অন্তত এই বছর গত বছরের তুলনায় বেশি টাকা দিয়ে চা কিনতে হবে বলেই মনে করছেন তিনি ও পার্থসারথিবাবু।

এই দাম বৃদ্ধি অবশ্য বাগানগুলির পক্ষে কতটা লাভজনক হবে, বছর শেষের আগে তা বলা সম্ভব নয় বলে দাবি অরিজিৎবাবুর। তাঁর যুক্তি, দাম যেমন বেড়েছে, তেমন উৎপাদন অনেকটা কমেছে। ফলে সার্বিক ভাবে আয় বাড়বে কি না, বা লাভ হবে কি না, সে সব এখনই বলার সময় আসেনি।

অন্য বিষয়গুলি:

Tea Economy Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy