Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Central Government

শ্রমের বাজারের তথ্যে ঘাটতি, প্রশ্নের মুখে কেন্দ্র

এক্সএলআরআই-জামশেদপুরের অর্থনীতির অধ্যাপক কে আর শ্যাম সুন্দরের মতে, পর্যাপ্ত তথ্য ঘেঁটে শ্রম নীতি তৈরির চল এ দেশে বরাবরই কম।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

ইন্দ্রজিৎ অধিকারী 
শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০২০ ০৫:৫১
Share: Save:

করোনার কামড় সারিয়ে কাজের বাজারকে ফের চাঙ্গা করতে যে আর্থিক নীতি জরুরি, তা তৈরির জন্য সবার আগে প্রয়োজন শ্রমিক এবং শ্রমের বাজার সম্পর্কে নির্ভুল তথ্য। সম্প্রতি বিশ্ব পরিসংখ্যান দিবসে এ কথা স্পষ্ট বলেছেন আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ডিরেক্টর জেনারেল গায় রাইডার। তথ্যের গুরুত্বের কথা কবুল করেছেন শ্রমমন্ত্রী সন্তোষ গঙ্গোয়ারও। কিন্তু অর্থনীতিবিদদের একাংশের অভিযোগ, কাজের বাজার সম্পর্কে অল্প সময় অন্তর পর্যাপ্ত নিখুঁত তথ্য আজও এ দেশে মেলে না।

এক্সএলআরআই-জামশেদপুরের অর্থনীতির অধ্যাপক কে আর শ্যাম সুন্দরের মতে, পর্যাপ্ত তথ্য ঘেঁটে শ্রম নীতি তৈরির চল এ দেশে বরাবরই কম। করোনার আক্রমণে বিধ্বস্ত অর্থনীতি ও কাজের বাজার সেই ত্রুটিকেই আতসকাচের নীচে এনে ফেলেছে। বোঝা গিয়েছে যে, কাজের বাজার, বেকারত্বের হার ইত্যাদি সম্পর্কে স্বচ্ছ এবং নির্ভুল তথ্য সংগ্রহ আর তার ভিত্তিতে তৈরি পরিসংখ্যান প্রকাশের কাজ প্রত্যেক মাসে হওয়া জরুরি। নিদেন পক্ষে প্রতি ত্রৈমাসিকে। তাঁর জিজ্ঞাসা, ‘‘সিএমআইই-র মতো বেসরকারি সংস্থা যদি এ বিষয়ে দৈনিক তথ্য পর্যন্ত প্রকাশ করতে পারে, তা হলে কেন্দ্রের পক্ষে অন্তত প্রতি মাসে তা করা সম্ভব নয় কেন?’’

প্রশ্ন উঠছে, অতিমারির আক্রমণের পরে দেশে কাজের বাজার কোথায় দাঁড়িয়ে, বেকারত্বের হার কেমন, নতুন চাকরি তৈরি হচ্ছে কতখানি— এই সমস্ত বিষয়ে যদি সাম্প্রতিকতম তথ্য না-থাকে, তবে কিসের ভিত্তিতে তিন-তিনটি শ্রম বিধি তৈরি করে সংসদে পাশ করাল কেন্দ্র? সরকারি অনুমতি ছাড়া ছাঁটাইয়ের রাস্তাই বা ৩০০ জন পর্যন্ত কর্মীর (ছিল ১০০) সংস্থার ক্ষেত্রে মসৃণ করা হল কোন যুক্তিতে?

ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ-কলকাতার অধ্যাপক শুভনীল চৌধুরীর কথায়, করোনার আক্রমণ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে যে, কাজের বাজারের পরিসংখ্যান প্রকাশিত হওয়া উচিত প্রতি মাসে। তিনি বলেন, ‘‘এই যে করোনায় চাকরি হারানো মানুষের জন্য ১০০ দিনের কাজের পরিধি বাড়াতে হয়েছে কিংবা ঘোষণা করতে হয়েছে প্রধানমন্ত্রী রোজগার অভিযানের মতো প্রকল্প, তার নীল নকশা তৈরি করতে কেন্দ্রের হাতে নির্ভরযোগ্য তথ্য থাকা জরুরি। তা আরও বেশি প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প পরিকল্পনার ক্ষেত্রে।’’ নইলে কাদের কোন প্রকল্পের আওতায় আনা উচিত, কাদের পকেটে যাওয়া উচিত কতখানি সুবিধা— এই ধরনের সিদ্ধান্তে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা নিয়ে দেশ উত্তাল হওয়ার পরেও বাড়ি ফেরার রাস্তায় তাঁদের মৃত্যুর সংখ্যা বা লকডাউনে কাজ হারানোর নির্দিষ্ট তথ্য জানা নেই বলে সংসদের শেষ অধিবেশনে কবুল করেছিল কেন্দ্র। সে কথা মনে করিয়ে ট্রেড ইউনিয়ন সিটুর সাধারণ সম্পাদক তপন সেন বলছেন, ‘‘পর্যাপ্ত তথ্য তো নেই-ই। যেটুকু আছে, তা জনসমক্ষে প্রকাশেরও সদিচ্ছা নেই মোদী সরকারের। নয়তো রেল মন্ত্রক এবং জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের খাতায় মৃত্যুর হিসেব থাকা সত্ত্বেও মৃত পরিযায়ী শ্রমিকদের সম্পর্কে তথ্য না-থাকার কথা তারা বলে কী ভাবে?’’

উঠছে ২০১৭-১৮ সালের বেকারত্বের হিসেবের কথাও। এনএসএসও-র ফাঁস হওয়া রিপোর্টে দেখা গিয়েছিল, নোটবন্দির পরে দেশে বেকারত্বের হার পৌঁছেছে সাড়ে চার দশকের সর্বোচ্চে। প্রথমে পদ্ধতির গরমিল বলে লোকসভা ভোটের আগে তা প্রকাশ করা আটকে দেয় কেন্দ্র। পরে সেই হিসেব মানতে বাধ্য হলেও, ক্রেতা সমীক্ষার তথ্য (কনজ়িউমার সার্ভে ডেটা) আর প্রকাশই করেনি তারা। অথচ দেশে দারিদ্রের হিসেব পাওয়ার ক্ষেত্রে তা গুরুত্বপূর্ণ সূচক।

এরই মধ্যে অবশ্য সামান্য রুপোলি রেখা দেখছেন এনআইপিএফপি-র অধ্যাপক লেখা চক্রবর্তী। ঘন ঘন পরিসংখ্যান প্রকাশের অভাব মেনেও তিনি বলছেন, ‘‘এখন থেকে কাজের বাজারের জন্য টাইম ইউজ় সার্ভে করার কথা অক্টোবরেই ঘোষণা করেছে সরকার। তাতে এমন অনেক তথ্য উঠে আসার কথা, যা এমনিতে থেকে যায় জিডিপির হিসেবের বাইরে।’’

প্রশ্ন যেখানে


• সিএমআইই-র মতো বেসরকারি সংস্থা যদি দৈনিক বেকারত্বের পরিসংখ্যান দিতে পারে, তা হলে কেন্দ্র মাসে অন্তত এক বার পারে না কেন?


• করোনার মতো অবস্থায় মানুষের স্বার্থে নীতিগত কোনও সিদ্ধান্ত নিতে হলে চাকরির বাজার সম্পর্কে তথ্য ছাড়া তা সম্ভব কি?

অন্য বিষয়গুলি:

Central Government Labour Labourer BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy