দিন দশেক আগে দার্জিলিঙের চা বাগানগুলিতে পুজোর বোনাস নিয়ে কলকাতায় শ্রম দফতরের ডাকা ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ভেস্তে গিয়েছিল। তার পর থেকেই বাগানে নাগাড়ে বিক্ষোভ বহাল শ্রমিক সংগঠনের। ধীর গতিতে কাজের পাশাপাশি গেট মিটিং চালাচ্ছে ইউনিয়নগুলি। চলেছে অনশন কর্মসূচি। উৎপাদন হলেও পাহাড়ের কোনও কারখানা থেকে চা বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। রফাসূত্রের খোঁজে বোনাস নিয়ে ফের ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হওয়ার কথা ছিল ১৭ অক্টোবর। এই অবস্থায় আজ, শুক্রবারই তড়িঘড়ি সেই বৈঠক ডাকল শ্রম দফতর। মালিক পক্ষ ও সাতটি শ্রমিক ইউনিয়ন, সকলেই বৈঠকে যোগ দেবে।
তবে এ বারও শেষ পর্যন্ত বৈঠক কতটা সফল হবে কি না, তা নিয়ে বাগানের একাংশের মনে উঁকি দিচ্ছে প্রশ্ন। কারণ শ্রমিক নেতা ও বাগান মালিকেরা নিজেদের অবস্থানে এখনও অনড়। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, আজও রফাসূত্র না মিললে তৈরি হতে পারে অচলাবস্থা। যা উস্কে দিচ্ছে গত ২০১৭ সালে বাগানে টানা ১০৮ দিন ধর্মঘটের স্মৃতি। এর জেরে সে বার ব্যাপক ধাক্কা খেয়েছিল চা শিল্প।
বাগান কর্তৃপক্ষের সংগঠন এর আগে ১৫% হারে বোনাস দেওয়ার কথা বললেও, ইউনিয়নগুলির দাবি ছিল ২০%। পরে মালিকপক্ষ ১২% অগ্রিম বোনাস দেওয়ার কথা জানায়। বৃহস্পতিবার সাতটি চা শ্রমিক সংগঠনের যৌথ কমিটির নেতারা জানান, শুক্রবারের বৈঠকে ২০% বোনাসের দাবি থেকে একচুলও সরবেন না তাঁরা। এ দিন দার্জিলিঙে জরুরি বৈঠকের পরে সিপিএম নেতা সমন পাঠক বলেন, ‘‘আমরা বৈঠকে যাচ্ছি। তবে ২০ শতাংশের থেকে কম হারে কোনও ভাবেই বোনাস চুক্তি হবে না। মালিকেরা তা না মানলে সর্বশক্তি দিয়ে আন্দোলন হবে। সে জন্য মালিকেরাই দায়ী থাকবেন।’’
বোনাস বৃত্তান্ত
• দার্জিলিঙের ৮৭টি চা বাগানে প্রায় ৮০ হাজার শ্রমিক।
• বোনাস নিয়ে অগস্ট থেকে পাঁচটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে কোনও রফাসূত্র মেলেনি।
• ৩০ সেপ্টেম্বর শ্রম দফতরের ত্রিপাক্ষিক বৈঠকও ভেস্তে যায়।
• সাত শ্রমিক ইউনিয়নের যৌথ মঞ্চের দাবি ২০% বোনাস।
• ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পরে মালিকপক্ষ ১২% হারে অগ্রিম বোনাস দেওয়ার কথা জানায়।
• নিজেদের দাবিতে অনড় ইউনিয়নগুলি অনশন আন্দোলনে নামে
• গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিনয় তামাং এখনও অনশনে।
• আন্দোলনের জেরে বাগানে উৎপাদন ব্যাহত।
• বাগানে তৈরি চা-ও বাইরে বের করতে দেওয়া হচ্ছে না
• আজ, শুক্রবার কলকাতায় ফের ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের ডাক।
• মালিক ও ইউনিয়ন, দু’পক্ষই বৈঠকে যোগ দেবে বলে জানিয়েছে।
উল্টো দিকে, দার্জিলিং টি অ্যাসোসিয়েশনের মুখ্য উপদেষ্টা সন্দীপ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, আগের বৈঠকে রফাসূত্র না মিললেও সাময়িক ভাবে ১২% হারে যে আগাম বোনাস দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন তাঁরা, ৮-৯টি বাগানে সেই অর্থ দেওয়া হয়েছে। এ দিন সন্দীপবাবুর বলেন, ‘‘আমরা বৈঠকে যাব। পুজোর জন্য বাগান কয়েক দিন বন্ধ ছিল। আজ থেকে ফের তা খুলবে।’’
সমন অবশ্য শ্রমিকদের আগাম বোনাস নেওয়ার কথা মানতে চাননি। তাঁদের পাল্টা দাবি, দু’একটি বাগানে মালিকপক্ষ সেই চেষ্টা করলেও, তা সফল হয়নি। তবে আন্দোলন-কর্মসূচির জেরে বাগানের কাজে কিছুটা দেরি হওয়ার কথা মানছেন তিনি।
প্রথা অনুযায়ী, চা বাগানে মালিকপক্ষ ও ইউনিয়নগুলি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বোনাস স্থির করে। চা শিল্প সূত্রের খবর, গত ৩০ অগস্ট থেকে পাঁচ দফা দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে রফাসূত্র না মেলায় কলকাতায় নব মহাকরণে শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের উপস্থিতিতে ওই ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকা হয়েছিল। সেটি ভেস্তে যাওয়ার পর থেকে সব ইউনিয়ন রিলে অনশন চালায়। পরে পুজোর জন্য তা সাময়িক স্থগিত রাখলেও, গেট মিটিংয়ের মতো অন্য কর্মসূচিতে ছেদ পড়েনি। এ ছাড়া, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতা বিনয় তামাং আলাদা ভাবে এখনও অনশন চালাচ্ছেন। এ দিন সেই অনশন মঞ্চে হাজির হয়ে বিনয়ের আন্দোলনকে সমর্থন জানান বিভিন্ন দলের নেতারা। সমন পাঠক ছাড়াও ছিলেন তৃণমূল সাংসদ শান্তা ছেত্রী, জাপ নেতা অমর লামা, ইন্ডিয়ান ডেমোক্রেটিক রিপাবলিকান ফ্রন্টের সভাপতি সঞ্জয় ঠাকুরি প্রমুখ। সমন বলেন, ‘‘শ্রমিক স্বার্থে সকলে ঐক্যবদ্ধ ভাবে আন্দোলন করতে চাই।’’ শান্তা বলেন, ‘‘মালিকেরা ইচ্ছে করে সমস্যা তৈরি করেছেন। শ্রমিকদের দাবি মেনে ওঁদের পাহাড়ের সুস্থ পরিবেশ ফেরানো উচিত।’’
শ্রমিক নেতারা আগেই ঘোষণা করেছিলেন, অনশন প্রত্যাহার করলেও কারখানায় তৈরি চা তাঁরা বাইরে যেতে দেবেন না। তাই পাহাড়ের কোনও কারখানা থেকেই চা বাইরে যাচ্ছে না। ফলে সমস্যায় পড়েছেন বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা। সূত্রের খবর, শ্রমিকদের দাবি মেনে নিয়ে দ্রুত সমস্যা মেটাতে চাইছেন মালিকদের একাংশ। যদিও বৈঠকের আগে বোনাস নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি তাঁদের সংগঠনের কোনও নেতা। দার্জিলিঙে এ ভাবে এক সঙ্গে সব ইউনিয়নের আন্দোলন এই প্রথম বলে দাবি তাঁর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy