ভোলুর জন্ম ২০০২ সালে। গ্রাফিক: সৌভিক দেবনাথ
হাতি মেরে সাথী। রাজেশ খন্না অভিনীত ১৯৭১ সালের সিনেমায় হাতির সঙ্গে বন্ধুত্ব অমর হয়ে রয়েছে। হাতি ভালবাসেন না এমন মানুষের সংখ্যাও সম্ভবত খুবই কম। আর সেই কারণেই বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম সংস্থা ভারতীয় রেল তার ম্যাসকট হিসেবে বেছেছে এক হাতিকেই। সাদা শার্ট, ট্রাউজার্সের সঙ্গে আকাশি কোর্ট আর নেভি ব্লু টাই। মাথায় নীল-সাদা টুপি। হাতে সবুজ রঙের লন্ঠন। এমন দেখতে ভারতীয় রেলের ম্যাসকটের ভাল নাম— ‘ভোলু দ্য এলিফ্যান্ট’। তবে আদরের ডাক ভোলু।
ভোলুর কাহিনি কিন্তু অন্যরকম। ওর জন্ম হয়েছিলে একটা অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে। কিন্তু এক বছরের মাথায় ওর চাকরি পাকা হয়ে যায় ভারতীয় রেলে। শুধু চাকরি পাকা হওয়াই নয়, এখনও পর্যন্ত রেলের যে ঘোষণা তাতে যতদিন ভারতে ট্রেন চলবে, ততদিন সবুজ বাতি দেখিয়ে যাবে ভোলু। না, অবসর নেই ভোলুর।
ভারতের মাটিতে প্রথম ট্রেন চলেছিল ১৮৫৩ সালের ১৬ এপ্রিল। ২০০২ সালটা ছিল ভারতীয় রেলের দেড়শো বছর পূর্তি। সেই উপলক্ষে একটি ম্যাসকট বানানো হয়েছিল। সেই বছরের ১৬ এপ্রিল প্রথম প্রকাশ্যে আসে ভোলুর চেহারা। কর্নাটকের বেঙ্গালুরু সিটি স্টেশনে। সেই সময়ের খবরের কাগজ বলছে, ওই স্টেশনের এক নম্বর প্লাটফর্ম থেকে সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটে কর্নাটক এক্সপ্রেস ছাড়ার সময়ে প্রথম সবুজ বাতি দেখায় ট্রেনের গার্ড সাজা ভোলু। সে দিন ভোলুর আবির্ভাবকে স্মরণীয় করে রাখতে বেঙ্গালুরু সিটি স্টেশনে মিষ্টি আর চকোলেট বিলি করেছিল রেল। ভোলুকে ম্যাসকট হিসেবে আম জনতার সামনে এনেছিলেন দক্ষিণ রেলের বেঙ্গালুরু ডিভিশনের তৎকালীন ম্যানেজার রাকেশ মিশ্র। পরের বছর মানে ২০০৩ সালের ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলে রেলের দেড়শো বছর পূর্তি সমারোহ। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছিল সেই সময়টুকুই রেলের সঙ্গে জুড়ে থাকবেন ভোলু। কিন্তু ভোলুর ভাগ্য ফিরে যায়।
২০০৩ সালের এপ্রিলে ভোলুর চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই রেল জানিয়ে দেয় পাকা তার আসন। কিন্তু হাতিকে কেন রেলের ম্যাসকট হিসেবে বাছা হয়েছিল? জন্মলগ্নেই সে কথা জানিয়েছিল রেল। বলা হয়, হাতি খুবই বিশ্বস্ত প্রাণী। হাতি যুগ যুগ ধরে মানুষ ও পণ্য পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত। আবার আকারে বড় হলেও হাতি সাধারণত হিংস্র হয় না। বন্ধুত্বপূর্ণ এবং সহযোগী মনোভাবের জীব। ম্যাসকট তৈরির সময়ে যেটা মাথায় রাখা হয়েছিল সেটা ভোলুর চেহারার সঙ্গে মেলে। ভারতীয় রেল যেমন বৃহৎ, তেমনই দরদি এমন ইমেজ তৈরি করাই ছিল ভাবনার মূলে। রেলমন্ত্রকের চাহিদা মতো ভোলুকে রূপ দেওয়া হয়। সাজানোর দায়িত্ব নেয় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ডিজাইনের বেঙ্গালুরু শাখা। ভোলুর হাতের সুবজ আলোর অর্থ— ‘গতি’, যা রেলের সঙ্গে সম্পর্কিত। আর রেলের ভাষায় ভোলুর বর্ণনা দিতে বলা হয়, ‘নৈতিক, দায়িত্বশীল, একনিষ্ঠ এবং আনন্দিত।’ সবুজ আলো দেখিয়ে ভোলু আসলে রেলযাত্রীদের সুরক্ষিত সুখের সফর কামনা করে। আরও একটা সম্মান পেয়েছে ভোলু। ২০০৩ সালে ওর ছবি দেওয়া ২ টাকার কয়েন প্রকাশ করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy