ঋণ নিয়ে সমস্যা পিছু ছাড়ছে না বিজয় মাল্যের। ভারতে ঋণের টাকা ফেরত না-দেওয়া নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। এ বার বিদেশেও মাল্যের মদ প্রস্তুতকারক সংস্থা কিংগ্ফিশার বিয়ার ইউরোপকে (কেবিইএল) ধার দেওয়া থেকে পিছু হটার কথা জানিয়েছে ঋণদাতা রয়্যাল ব্যাঙ্ক অব স্কটল্যান্ড কমার্শিয়াল সার্ভিসেস (আরবিএস)।
পাশাপাশি, শনিবারই বিশেষ আদালতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) অভিযোগ করেছিল, আইডিবিআই ব্যাঙ্ক থেকে কিংগ্ফিশার এয়ারলাইন্সের নাম করে নেওয়া ৯৫০ কোটি টাকা ঋণের প্রায় অর্ধেক (৪৩০ কোটি টাকা) দিয়ে বিদেশে সম্পত্তি কিনেছেন মাল্য। রবিবার সেই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছে মাল্যের ইউবি গোষ্ঠী। তাদের দাবি, আইডিবিআই ব্যাঙ্কের দেওয়া ঋণের সব টাকাই বিমান সংস্থাটির বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই সব বিদেশি লেনদেনের তথ্যও তারা জমা দেবে বলে দাবি করেছে ইউবি গোষ্ঠী। একই সঙ্গে মাল্যের নামে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির যে-আর্জি ইডি করেছে, তারও বিরোধিতা করেছে সংস্থাটি।
মার্কিন মুলুকে মাল্যের সংস্থা মেন্ডোসিনো ব্রুয়িং কোম্পানি সম্প্রতি সেখানকার শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রককে জানিয়েছে, তাদের শাখা কেবিইএলের সঙ্গে সব রকম সম্পর্ক ভাঙতে চিঠি দিয়েছে আরবিএস। গত বছরের শেষে আসা প্রথম চিঠি অনুসারে ২০১৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকেই সংস্থার ঋণ বন্ধের ইঙ্গিত দেয় ব্যাঙ্কটি। জানায়, অন্যান্য লেনদেন বন্ধের ইচ্ছের কথাও। পরে সেই সময়সীমা বাড়িয়ে করা হয় ২৯ এপ্রিল। শেষ পর্যন্ত গত ২৯ মার্চ এক চিঠিতে সময়সীমা আরও বাড়িয়ে ৩১ মে করা হয়েছে। অর্থাৎ সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে ওই দিনের পরে আরবিএসের থেকে আর ঋণ পাবে না কেবিইএল। গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, সংস্থাটির থেকে ৫ কোটি টাকারও বেশি পায় আরবিএস। সংস্থা আরও জানিয়েছে, চেয়ারম্যান হিসেবে মাল্যকে গত বছর ১.৭১ কোটি টাকা বেতন দিয়েছে তারা। যার অর্ধেকের বেশি দেওয়া হয়েছে ব্রিটেনের বাইরে বিভিন্ন দেশে সংস্থার বিয়ার ব্র্যান্ডগুলিকে বিপণনের জন্য।
উল্লেখ্য, মাল্যের ইউবি গোষ্ঠীর শাখা সংস্থা মেন্ডোসিনোর হাতেই মার্কিন মুলুকে কিংগ্ফিশার বিয়ার তৈরি ও বিক্রির দায়িত্ব রয়েছে। আমেরিকা বাদে অন্যান্য দেশে তাদের ব্যবসা চালায় মেন্ডোসিনোর ব্রিটিশ শাখা ইউনাইটেড ব্রুয়ারিজ ইন্টারন্যাশনাল ইউকে এবং তাদের শাখা কেবিইএল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আরবিএসের এই সিদ্ধান্তের প্রভাব পড়তে পারে মাল্যের মদ ব্যবসার উপর। কারণ, ইতিমধ্যেই ধার শোধ দিতে না-পারায় মার্কিন মুলুকে ঋণখেলাপি তকমা দেওয়ার নোটিস পেয়েছে আর্থিক সঙ্কটে জেরবার মেন্ডোসিনো। সংস্থার দায়ের পরিমাণ ছাড়িয়েছে সম্পদকে। আগামী ১২ মাস কাজ চালানোর মতো কার্যকরী মূলধনও নেই ধুঁকতে থাকা সংস্থার হাতে। টাকা জোগাতে মূল সংস্থা ইউবি গোষ্ঠীর কাছে সাহায্য চেয়েছে তারা। ধার পেতে কথা চালাচ্ছে অন্যান্য ঋণদাতা ব্যাঙ্কের সঙ্গেও। ফলে আরবিএসের সিদ্ধান্তে অবস্থা আরও জটিল হল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সে কথা জানে সংস্থাও। টাকা জোগাড় করতে না-পারলে, সম্পদ বিক্রির মতো সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে বলে মনে করছে মেন্ডোসিনো।
প্রসঙ্গত, ভারতের বাইরে বিদেশের বিভিন্ন দেশে ব্যবসা চালানোর জন্য আলাদা সংস্থা রয়েছে মাল্যের। এর মধ্যে আমেরিকায় কিংগ্ফিশার ব্র্যান্ড-সহ বিভিন্ন বিয়ার উৎপাদন ও বিক্রির দায়িত্ব সামলায় মেন্ডোসিনো নিজে। তাদের প্রধান দুই শেয়ারহোল্ডার ইউনাইডেট ব্রুয়ারিজ আমেরিকা ও ইনভার্সিওনেস। এদের পরিচালন সংস্থা হিসেবে কাজ করে ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে নথিভুক্ত রিগবি ইন্টারন্যাশনাল কর্প। এই রিগবি ইন্টারন্যাশনাল হল মাল্যের ইউনাইটেড ব্রুয়ারিজ হোল্ডিংসের শাখা। জটিল শেয়ার বণ্টনের মাধ্যমে মেন্ডোসিনোর ৬৮ শতাংশের বেশি মালিকানাই রয়েছে বিজয় মাল্যের হাতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy