ফাইল চিত্র।
করোনাকালে চটের বস্তা তৈরির জন্য কাঁচা পাটের অভাবের কথা অনেক দিন ধরে বলে আসছিলেন চটকল মালিকেরা। অভিযোগ, সেই কাঁচামালের অভাবেই সম্প্রতি রাজ্যের পাঁচটি চটকল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কাজ হারিয়েছেন প্রায় ২১,৫০০ জন শ্রমিক। ইউনিয়নগুলির বক্তব্য, ভোটের সময়ে চটকলগুলির সমস্যা নিয়ে কোনও রকম মাথাব্যথা নেই কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের। সংশ্লিষ্ট মহলের আশঙ্কা, এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে ভোট মেটার পরে আগামী মাসের গোড়ায় আরও কয়েকটি চটকল বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
পাট শিল্পের সমস্যা নিয়ে রবিবারই বৈঠকে বসেছিল ২১টি ইউনিয়ন। বৈঠকের শেষে প্রতিনিধিরা জানান, রাজ্যে কাঁচাপাটের অভাব মেটানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, জুট কমিশনার এবং শ্রম কমিশনার চিঠি দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানানো হবে, প্রয়োজনে যাতে বাংলাদেশ থেকে কাঁচা পাট আমদানি করা হয়। ব্যবস্থা নেওয়া হয় পাটের দাম বৃদ্ধি ও মজুতের বিরুদ্ধে। জুট কমিশনারের দফতরের অবশ্য বক্তব্য, বেআইনি মজুতের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে। জুট কমিশনার মলয়চন্দন চক্রবর্তী এ দিন বলেছেন, ‘‘কাঁচা পাট বেআইনি ভাবে মজুত করা হচ্ছে কি না, তা নিয়ে অনুসন্ধানের প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।’’
গত তিন সপ্তাহে বন্ধ হয়েছে বজবজ জুট মিল, রিলায়্যান্স জুট মিল, ওয়েলিংটন জুট মিল, ডেলটা জুট মিল এবং হনুমান জুট মিল। এগুলির মধ্যে রিলায়্যান্স জুট মিল বন্ধ হয়েছে রবিবারই। চটকলটি অবশ্য এর আগেও বন্ধ হয়েছিল। হালে খোলার পরে কিছু দিনের মধ্যেই বন্ধ হল সেটি।
করোনাকালে অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রের মতো ভুগেছে পাটের উৎপাদনও। চট শিল্প সূত্রের খবর, ২০২০-২১ অর্থবর্ষে রাজ্যে পাটের উৎপাদন তার আগের বারের তুলনায় ৪০% কম হয়েছে। চটকল মালিকদের সংগঠন ইন্ডিয়ান জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (আইজেএমএ) অভিযোগ, ঠিক এই কারণে কাঁচা পাটের অভাব দেখা দেওয়ায় যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে না বস্তা তৈরির কাঁচামাল। যার ফলে উৎপাদন বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছে বিভিন্ন চটকল। আইজেএমএ-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা হেস্টিংস জুট মিলের কর্ণধার সঞ্জয় কাজারিয়া বলেন, ‘‘আমার আশঙ্কা, আগামী মাসের গোড়ায় আরও গোটা পাঁচেক চটকল কাঁচা পাটের অভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে।’’
কাঁচামালের সমস্যা এত দিনেও না-মেটায় কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছে শ্রমিক সংগঠনগুলি। সিটু অনুমোদিত বেঙ্গল চটকল মজদুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনাদি সাহু এবং আরএসপি-র সাধারণ সম্পাদক অশোক ঘোষের অভিযোগ, ‘‘প্রধানমন্ত্রী এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী-সহ বিভিন্ন মন্ত্রীরা ভোটের তরজাতেই ব্যস্ত। পাট শিল্পের এত বড় সমস্যা নিয়ে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের কোনও হেলদোলই নেই।’’
আইএনটিইউসি অনুমোদিত ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব জুট ওয়ার্কার্সের সেক্রেটারি জেনারেল গণেশ সরকারের আশঙ্কা, কয়েকটি মিল বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি, বহু মিলই সপ্তাহে তিন-চার দিন বন্ধ রাখা কিংবা কম কর্মী দিয়ে কাজ চালানো হতে পারে। সে ক্ষেত্রে তাঁর দাবি, ‘‘যে ক’দিন শ্রমিকেরা কাজ পাবেন না, সেই দিনগুলিকে ‘লে অফ’ (সাময়িক ভাবে বসানো) হিসাবে ঘোষণা করা হোক। সে ক্ষেত্রে ওই দিনগুলির জন্য আইনত মজুরির একটা অংশ পাওয়ার অধিকারী হবেন তাঁরা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy