জেএনইউ-বিতর্কে সরকার রণং দেহি। বিরোধীরা এককাট্টা। আর দু’পক্ষের এই এক ইঞ্চিও জমি না-ছাড়ার হুঙ্কারে বাজেট অধিবেশন জলে যাওয়ার সিঁদুরে মেঘ দেখছে শেয়ার বাজার। সংসদে আগের দুই অধিবেশন ভেসে গিয়েছে ললিত মোদী আর অসহিষ্ণুতা বিতর্কে। অনেক বিশেষজ্ঞের আশঙ্কা, এ বারও সংসদ চলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে জেএনইউ-তে বাম ছাত্রনেতার গ্রেফতার হওয়া এবং হায়দরাবাদে দলিত পড়ুয়ার আত্মহত্যা।
এই আশঙ্কার ছাপ স্পষ্ট সম্প্রতি শেয়ার বাজারের অস্থিরতা থেকে। কারণ, দেশ ও বিশ্ব অর্থনীতির এই নড়বড়ে সময়ে বাজেট অধিবেশনে সংস্কারের বিভিন্ন বিল পাশের দিকে চাতক পাখির মতো চেয়ে তারা। তার মধ্যে দীর্ঘ দিন তীরে এসেও তরী না-ভেড়া পণ্য-পরিষেবা কর বিল যেমন রয়েছে, তেমনই আছে দেউলিয়া ঘোষণার পথ সহজ করতে নতুন বিল। রাজনৈতিক আখের গুছনোর লড়াই অর্থনীতির পক্ষে জরুরি পদক্ষেপকে ফের পিছনে ঠেলবে কি না, এখন সেটাই চিন্তা।
আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ও সারা বিশ্বের শেয়ার বাজার দীর্ঘ দিন টালমাটাল। প্রশ্ন উঠছে কেন্দ্রের তুলে ধরা আশাজনক বৃদ্ধির পূর্বাভাস (এই অর্থবর্ষে ৭.৬%) নিয়ে। অনেকে বলছেন, দেশের অর্থনীতির ‘অচ্ছে দিনের পরিসংখ্যানের’ সঙ্গে শিল্পোৎপাদন সূচক মিলছে না। বাজেট দরজায়, অথচ বোঝা যাচ্ছে না রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্মণরেখা অর্থমন্ত্রী মানতে পারবেন কি না। তার উপর ঘুম কেড়েছে অনুৎপাদক সম্পদের জেরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির মুনাফায় ধস। এই পরিস্থিতিতে বাজারকে ফের চাঙ্গা দেখতে সংসদে সংস্কারের জরুরি বিল পাশের দিকে তাকিয়ে সকলে। এখন রাজনীতির কাজিয়ায় যদি অধিবেশন চলাই দায় হয়, তবে ফের আটকে যেতে পারে সব বিল। সে ক্ষেত্রে চট করে চাঙ্গা হওয়া শক্ত হবে মুষড়ে থাকা বাজারেরও।
আগামী মঙ্গলবারই শুরু বাজেট অধিবেশন। তার আগে রাজনৈতিক ভাবে স্পর্শকাতর এই বিষয় নিয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না সংশ্লিষ্ট মহলের অধিকাংশই। তবে ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন ডিরেক্টর এস কে কৌশিক বলেন, ‘‘আমরা ঘরপোড়া গরু। তাই জেএনইউ-র ঘটনায় সিঁদুরে মেঘ দেখছি। এর জের বাজেট অধিবেশনে গড়াতে পারে। অনিশ্চিত হতে পারে সংস্কারের বিলগুলি পাশ হওয়া।’’
কৌশক-সহ অনেকেই বলছেন, বাজার বহু দিন ধরে সবচেয়ে আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে জিএসটি বিল পাশের দিকে। নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় দেশের অর্থনীতির দরজা খুলে দেওয়ার পরে যাকে সব থেকে বড় মাপের সংস্কার-পদক্ষেপ বলে মনে করেন অনেকে। আগের অধিবেশনে ওই বিল পাশের আশা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু উত্তপ্ত সংসদে তা হয়নি। এ বারও একই পরিণতি হলে অর্থনীতি ও বাজারে লগ্নিকারীদের মনোবল, দু’ই ধাক্কা খাবে, মত বিশেষজ্ঞদের। কৌশিকের কথায়, ‘‘পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে, তাতে বিল নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছি।’’
সংসদের চলা নির্ভর করবে মোদী সরকারের নমনীয়তা এবং সংস্কারের প্রশ্নে বিরোধীদের সহযোগিতার উপর। বিরোধীরা সংসদে কী ভূমিকা নেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে বলে জানান উপদেষ্টা সংস্থা কেপিএমজি-র পার্টনার অম্বরীশ দাশগুপ্ত। তবে তাঁর আশা, ‘‘বাজার যে সব সময়ে নিয়ম মেনে চলে, তা নয়।’’
আশাবাদী আইসিআইসিআই প্রুডেন্সিয়াল অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের পূর্বাঞ্চলীয় বিজনেস হেড অনিরুদ্ধ চৌধুরী। তাঁর কথায়, ‘‘রাজনীতির কাজিয়ায় বাজেট অধিবেশন উত্তাল হতে পারে। কিন্তু আমার আশা, অন্তত সংস্কারের বিল পাশ করায় বিরোধীরা দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy