মুকেশ অম্বানী ও জেফ বেজোস।
ভারতের খুচরো ব্যবসার ভবিষ্যৎ এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। যার গতিপথ নিয়ন্ত্রণে যুযুধান বিশ্বের দুই ধনকুবের, মুকেশ অম্বানী ও জেফ বেজোস। আর সেই যুদ্ধের মূলে রয়েছে মুদিদ্রব্যের বাজারের নাগাল পাওয়া।
গত এক দশকে ভারতে খুচরো ব্যবসার চালচিত্র বদলে দিয়েছিলেন ‘রিটেল কিং’ হিসেবে পরিচিত ফিউচার গোষ্ঠীর কর্ণধার কিশোর বিয়ানি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ক্রমাগত ব্যবসা ছড়িয়ে আক্ষরিক অর্থে যেন খুচরো ব্যবসার দুনিয়ায় শেষ কথা হয়ে উঠেছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর ব্যবসায় করোনার ধাক্কা দেয় এতটাই যে, তার ক্রেতা খুঁজতে নামেন বিয়ানি। রিটেল বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে ভারতের বিপুল সম্ভাবনাময় ওই বাজারকে পাখির চোখ করে এগোনো মুকেশের রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ় দ্রুত প্রস্তাব দেয় ফিউচারের ব্যবসাকে হাতে নিতে। আর এত সহজে জমি ছাড়তে নারাজ বেজোসের অ্যামাজ়ন ফিউচার গোষ্ঠীর (এখানে অ্যামাজ়নেরও লগ্নি আছে) বিরুদ্ধে মামলা ঠোকে কার্যত রিলায়্যান্সকে থামাতে।
কিন্তু কেন সকলেরই নজর ফিউচারের খুচরো ব্যবসার দিকে?
হাড্ডাহাড্ডি • ফিউচার গোষ্ঠীর খুচরো, পাইকারি, গুদাম ও পণ্য পরিবহণ ব্যবসা ২৪,৭১৩ কোটি টাকায় কিনছে রিলায়্যান্স রিটেল ভেঞ্চার্স। •তাতে আপত্তি তুলে চুক্তিভঙ্গের অভিযোগে ফিউচারের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুরে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে যায় ফিউচার গোষ্ঠীতে লগ্নি করা অ্যামাজ়ন। • ফিউচারের দাবি, কোনও চুক্তিভঙ্গ হয়নি। • চূড়ান্ত রায় ঘোষণা না-হওয়া পর্যন্ত ওই সব ব্যবসা বিক্রি করা যাবে না, জানিয়েছিল সিঙ্গাপুরের আদালত। • সেবি, স্টক এক্সচেঞ্জ এবং প্রতিযোগিতা কমিশনের দ্বারস্থ হয়েছে অ্যামাজ়ন। • মামলা দিল্লি হাইকোর্টেও। • তবে ফিউচার-রিলায়্যান্সের অধিগ্রহণে সায় দিয়েছে প্রতিযোগিতা কমিশন।
বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, খুচরোর ব্যবসার মূল চাবিকাঠি লুকিয়ে আসলে দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় মুদিখানার পণ্যের ব্যবসায়। কিন্তু মুকেশ ও বেজোস, দু’জনের সংস্থাই সেই দৌড়ে এখনও পিছিয়ে। রেকন্স ফরেস্টার রিসার্চের গবেষক সতীশ মিনার কথায়, লড়াইটা তাই মুদি বাজার দখলেরই। জিয়ো-মার্টের মাধ্যমে রিলায়্যান্স সেখানে দখল বাড়াতে চাইছে। ওই পণ্য জোগানের শৃঙ্খল বাড়িয়ে অ্যামাজ়ন-ও চায় দীর্ঘমেয়াদে ব্যবসা করতে। আর সেই দৌড় জিততে দু’পক্ষেরই তুরুপের তাস হতে পারে ফিউচার গোষ্ঠী। কারণ ৪০০টি শহরে ফিউচারের ১৭০০টি বিপণির মধ্যে ১৩০০-টিতেই মুদিদ্রব্য বিক্রি হয়। সেখানে রিলায়্যান্সের ১১,০০০ খুচরো বিপণির মধ্যে তা বিক্রি করে ৮০০টি। পিছিয়ে অ্যামাজ়ন-ও।
কেন লড়াই • ভারত খুচরো ব্যবসার সম্ভাবনাময় বাজার। • বিশেষজ্ঞদের মতে, লড়াই সব থেকে বেশি মুদিদ্রব্যের বাজার দখল নিয়ে। • আগামী চার বছরে খুচরো বাজার বাড়ার পূর্বাভাস ৪৬%। বহর দাঁড়াবে বার্ষিক প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার কোটি ডলারে। যার মধ্যে মুদিদ্রব্যের বাজার প্রায় ৭৪ হাজার কোটির। • ফিউচারের বিপণন কেন্দ্রের মধ্যেও সিংহভাগ মুদিদ্রব্যের। • মুকেশ অম্বানী ই-কমার্স ও খুচরো ব্যবসায় ঝাঁপাতে চাইলেও পিছিয়ে মুদিদ্রব্যের বিক্রির দৌড়ে। • প্রায় একই অবস্থা অ্যামাজ়নেরও।
আইনি লড়াই জিততে রণকৌশল সাজাতে কসুর করছে না দুই সংস্থা। ভার দিয়েছে সেরা আইনজীবীদের একাংশকে। তবে যোগাযোগ করা হলেও এ নিয়ে মুখ খোলেনি সংস্থাগুলি। আপাতত সময়ই বলবে দেশের খুচরো বাজারের ভবিষ্যৎ কী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy