সরকার না মানলেও অর্থনীতি যে বেশ ঝিমিয়ে, চতুর্দিকে তার লক্ষণ বেশ স্পষ্ট। রাজকোষের উপর চাপ বাড়িয়ে দফায় দফায় সরকারের তরফে নানা ত্রাণের ঘোষণা সত্ত্বেও পণ্য চাহিদা এখনও তেমন ভাবে বাড়তে দেখা যায়নি। সেপ্টেম্বরেও সার্বিক যাত্রী গাড়ি বিক্রি কমেছে ২৩.৬৯%। এই নিয়ে টানা ১১ মাস ধরে কমছে এর চাহিদা। অথচ গাড়ি শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অন্য বেশ কয়েকটি শিল্পের ভাগ্য। গাড়ি বিক্রি নাগাড়ে কমতে থাকায় ছাঁটাই শুরু হয়েছে সেই সব জায়গাগুলিতেও। এরই মধ্যে স্বেচ্ছাবসরের কথা ঘোষণা করেছে টয়োটা কির্লোস্কর। এই পরিস্থিতিতে শেয়ার বাজারে লগ্নিকারীদের প্রশ্ন একটাই, আর কত দিন অপেক্ষা করতে হবে কেন্দ্রীয় পদক্ষেপের সুফল দেখতে পাওয়ার জন্য?
অর্থনীতি চাঙ্গা করতে একের পর এক পদক্ষেপ করলেও, তার সঙ্কটের কথা মানতে নারাজ সরকার। তাদের দাবি, যেটুকু সমস্যা আছে, তা তাদের দেওয়া দাওয়াইয়ে উধাও হবে শীঘ্রই।
গাড়ির চাহিদা বাড়াতে শিল্পের তরফে জোরালো সওয়াল ছিল জিএসটি কমানোর জন্য, যা এখনও করা হয়নি। জিএসটি সংগ্রহ কিছুতেই সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারছে না। এর উপর গাড়ির জিএসটি কমলে সমস্যা আরও বাড়বে। তবে শুধু উঁচু হারে জিএসটি নয়, গাড়ি বিক্রি এতটা কমার অন্যান্য কারণের মধ্যে অন্যতম কয়েকটি হল—
• পেট্রলের চড়া দাম।
• বিমা ও রোড ট্যাক্স বাবদ খরচ বৃদ্ধি।
• গাড়ি রাখার জায়গা নিয়ে সমস্যা।
• ড্রাইভারের খরচ বৃদ্ধি।
• ইলেকট্রিক গাড়ির জন্য অপেক্ষা।
লক্ষ্য বহু দূর
*কর আদায়ের হিসেব কোটি টাকায়
*সেপ্টেম্বরের সংগ্রহ ১৯ মাসে সবচেয়ে কম
*কেন্দ্রের লক্ষ্য জিএসটি বাবদ মাসে ১ লক্ষ কোটি টাকা সংগ্রহ
অর্থনীতিতে চাহিদা ফেরানোর লক্ষ্যে দফায় দফায় সরকারের তরফে করা হয়েছে কয়েকটি ঘোষণা। আশাতীত ভাবে কর্পোরেট কর কমানোর ঘোষণায় ভর করে শেয়ার বাজার সাময়িক চাঙ্গা হলেও, তা ধরে রাখতে পারেনি। কর কমায় লাভজনক সংস্থাগুলির কর দেওয়ার পর মুনাফা (পিএটি) বাড়বে, কিন্তু এতে পণ্য চাহিদা বৃদ্ধির পথ সুগম হবে না। সাধারণ মানুষ নয়, এতে উপকৃত হতে পারেন মাত্র ২/৩ কোটি লগ্নিকারী। এ দিকে, অর্থনীতিতে গতি আনার লক্ষ্যে ফের সুদ কমিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এ বার রেপো রেট কমানো হয়েছে ২৫ বেসিস পয়েন্ট। এই নিয়ে টানা পাঁচ বার। মোট কমেছে ১৩৫ বেসিস পয়েন্ট। ফলে রেপো রেট (যে সুদে আরবিআই অন্য ব্যাঙ্কগুলিকে ঋণ দেয়) নেমে এসেছে ৫.১৫ শতাংশে। নজিরবিহীন ভাবে পরপর পাঁচ বার সুদ কমানো সত্ত্বেও অর্থনীতির পালে এখনও তেমন হাওয়া লাগেনি। উল্টে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬.৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৬.১ শতাংশে নামিয়েছে। বিভিন্ন মূল্যায়ন সংস্থা, বিশ্ব ব্যাঙ্ক— সকলে বৃদ্ধির পূর্বাভাস ছাঁটছে। অর্থনীতি নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছে আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার বা আইএমএফ-ও। ফলে শুধুমাত্র সুদ কমিয়ে যে বৃদ্ধির হার বাড়ানো যাবে না, তা এখন স্পষ্ট।
দুর্গাপুজো মেটার ঠিক পর পরই এবং প্রাক-দেওয়ালি পর্বে কেন্দ্রীয় কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের জন্য কেন্দ্রের উপহার ৫% অতিরিক্ত ডিএ বা মহার্ঘ ভাতা। ১ জুলাই থেকে মিলবে এই সুবিধা। এতে সরকারের খরচ হবে ১৬,০০০ কোটি টাকা। আশা, এই টাকা কর্মীদের হাতে এলে তা পণ্য চাহিদা বৃদ্ধির সহায়ক হতে পারে। পাশাপাশি বাড়বে রাজকোষের উপর চাপ।
সংস্থা গাড়ি বিক্রির সংখ্যা সেপ্টেম্বর, সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ২০১৯ • মারুতি সুজুকি ১,৫১,৫১২ ১,১০,৪৫৪ • হুন্ডাই ৪২,৪৭২ ৪০,৭০৫ • মহীন্দ্রা ১৯,৯৩১ ১৩,৯৬৭ • টয়োটা ১২,৫১২ ১০,২০৩ • হোন্ডা ১৪,৮৬৬ ৯,৩০১
*গত সেপ্টেম্বরে বেশির ভাগ সংস্থার প্রায় সব ধরনের গাড়ি বিক্রিই আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে। গাড়ি শিল্পে ধাক্কার উদাহরণ হিসেবে কয়েকটির পরিসংখ্যান তুলে ধরা হল
আরবিআই রেপো রেট কমানোয় ফের ঋণ ও জমায় সুদ ছাঁটাইয়ের কথা জানিয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক। ১ থেকে ২ বছর মেয়াদি জমায় সুদ কমানো হয়েছে ১০ বেসিস পয়েন্ট। ফলে সাধারণ গ্রাহকদের সুদ কমে হয়েছে ৬.৪% এবং প্রবীণ নাগরিকদের জন্য ৬.৯%। সেভিংস অ্যাকাউন্টে সুদ ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে, নামিয়ে আনা হয়েছে ৩.২৫ শতাংশে। সুদ কমতে থাকায় বেশ অসুবিধায় পড়বেন সুদনির্ভর অসংখ্য মানুষ। তবে সুখের কথা, এই দফায় (অক্টোবর-ডিসেম্বর) সুদ কমেনি ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পে। প্রবীণ নাগরিকেরা এখনও এখানে সুদ পেতে পারেন ৮.৬% হারে, সুরক্ষিত সরকারি প্রকল্পগুলির মধ্যে যা সর্বোচ্চ।
সেনসেক্স ৩৮,০০০ অঙ্কের উপরে থাকলেও তা শেয়ার বাজারের প্রকৃত স্বাস্থ্যের ইঙ্গিত দেয় না। রোজই তার অস্থিরতা চোখে পড়ে। ঋণ খেলাপি বহু সংস্থার শেয়ার দর নেমেছে কমবেশি ৯০%। এ সব শেয়ারে লগ্নিকারীদের লোকসানের পরিমাণ বিরাট। এই সব কারণে ইকুইটির প্রতি আস্থা কমছে সাধারণ মানুষের। তা সত্ত্বেও বাজার কিছুটা শক্তি ধরে রেখেছে মিউচুয়াল ফান্ড থেকে আসা লগ্নির জন্য। এই অস্থির বাজারেও সিআইপি পথে বিনিয়োগ বেড়েছে সেপ্টেম্বরে।
শুরু হয়েছে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক তথা ২০১৯-২০ অর্থবর্ষের প্রথম ষান্মাসিক ফল প্রকাশ। তিন মাসে টিসিএসের নিট মুনাফা ১.৮% বেড়ে পৌঁছেছে ৮,০৪২ কোটি টাকায়। শেয়ার পিছু অন্তর্বর্তী ডিভিডেন্ড ৫ টাকা এবং বিশেষ ডিভিডেন্ড ৪০ টাকা ঘোষণা করেছে। তা সত্ত্বেও টিসিএস শেয়ারের দাম কমেছে বাজারে। অন্য দিকে লাভ কমলেও বাকি ৬ মাসের পূর্বাভাসকে কেন্দ্র করে কদর বেড়েছে ইনফোসিস শেয়ারের। নিট লাভ ৪,১১০ কোটি টাকা থেকে কমে হয়েছে
৪,০৩৭ কোটি টাকা।
আগামী কয়েক সপ্তাহ ধরে চলবে ফলাফল প্রকাশের পালা এবং তার বেশ ভাল প্রভাব লক্ষ করা যাবে শেয়ার বাজারে।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy