করোনা আতঙ্ক গ্রাস করছে গোটা দেশকে। আর সেই সঙ্গে অর্থনীতি এবং শেয়ার বাজারকেও। কারণ, দ্বিতীয় ঢেউ ছড়াচ্ছে অনেক বেশি দ্রুত গতিতে। লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমিত এবং মৃত্যুর সংখ্যা। অথচ অক্সিজেনের জন্য হাহাকার এখন প্রায় দেশ জুড়ে। অমিল ওষুধ, অনেক জায়গায় প্রতিষেধকও। করোনা পরীক্ষা করাতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়ছেন বহু মানুষ। ঠাঁই নেই হাসপাতালে। সব মিলিয়ে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। জলের মতো টাকা খরচ করেও পরিষেবা অমিল। ভারতে দৈনিক সংক্রমণ ৩.৫ লক্ষ পেরিয়ে যাওয়ায় বেশ কয়েকটি দেশ ভারত থেকে যাত্রী বিমান নামার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সাপ্তাহিক লকডাউন শুরু হয়েছে মহারাষ্ট্র, দিল্লি-সহ বহু জায়গায়। ফলে অর্থনীতি ফের ধাক্কা খেতে বসেছে। একটু একটু করে বাড়তে থাকা চাহিদা আবার তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা গাড়ি এবং মেয়াদি ভোগ্যপণ্য-সহ বহু শিল্পে।
শুধু তা-ই নয়, অনেক কর্মী করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় বিঘ্নিত হচ্ছে উৎপাদন। অবস্থা সামাল দিতে দেশের বৃহত্তম বাইক নির্মাতা হিরো মোটোকর্প তাদের কারখানায় কয়েকদিনের জন্য উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। অনেক জায়গাতেই কাজ চলছে কম কর্মী নিয়ে। সব মিলিয়ে মার খাচ্ছে শিল্পোৎপাদন।
সঙ্কট আঁচ করে আতঙ্কে কাঁপছে শেয়ার বাজার। আগামী দিনে বাজার আরও পড়তে পারে, এই আশঙ্কায় বহু লগ্নিকারী হাতের শেয়ার বেচে লাভ তুলে নিচ্ছেন। গত সপ্তাহে চারটি লেনদেনের মধ্যে তিনটিতেই নেমেছে সেনসেক্স। মোট ৯৫৪ পয়েন্ট খুইয়ে সপ্তাহ শেষে তা থিতু হয় ৪৭,৮৭৮ অঙ্কে। সর্বকালীন উচ্চতা (৫২,১৫৪) থেকে ৪২৭৮ পয়েন্ট বা ৮.২০% পেছনে। সংক্রমণ এবং তার জেরে লকডাউনের আতঙ্ক যে ভাবে চেপে বসছে, তাতে আগামী দিনে সূচক আরও বেশ খানিকটা নামলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। সকলে শেয়ার বেচতে শুরু করলে বাজারে ধস নামার আশঙ্কাও থাকবে। তবে যতই ভয় থাক, এই পতনকে ভাল শেয়ার সংগ্রহের একটি সুযোগ হিসেবে দেখতে হবে। বাজারে পা রাখার কিংবা লগ্নি বাড়ানোর জন্য এমন সময়ের সদ্ব্যবহার করলে দীর্ঘ মেয়াদে ঠকবেন না কেউ।
স্টেট ব্যাঙ্কের গবেষণা শাখার একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এবং লকডাউনের জন্য ভারতের অর্থনীতির লোকসান হতে পারে ১.৫০ লক্ষ কোটি টাকা। যার ৮০ শতাংশই বর্তাবে মহারাষ্ট্র, রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশের উপরে। ফলে চলতি অর্থবর্ষে (২০২১-২২) নতুন করে ঘা খাবে পুরো দেশের জিডিপি। সমীক্ষা দলের আশঙ্কা, জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির হার তাদের আগে অনুমিত ১১% থেকে কমে হতে পারে ১০.৪%।
তবে পরিস্থিতি যতই জটিল হোক, হাতে ভাল শেয়ার ধরে রাখাই মনে হয় বুদ্ধিমানের কাজ হবে। গত বছর লকডাউনের মুখে বাজারের বড় পতন হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু পরের কয়েক মাসে তা পুষিয়ে ১৫ ফেব্রুয়ারি সেনসেক্স, নিফ্টি উঠেছিল সর্বকালীন উচ্চতায়। তুলনায় এ বার পরিস্থিতি বরং ভাল। কারণ—
•দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা হয়নি। যা হচ্ছে তা স্থানীয়।
•উৎপাদন চালু। চালু আছে রেল এবং রাস্তায় পরিবহণ।
•বহু মানুষ বাড়ি থেকে কাজ রপ্ত করে নিয়েছেন।
•অফিস চলছে ন্যূনতম কর্মী নিয়ে।
• ডিজিটাল লেনদেন, ই-কমার্স বেড়েছে কয়েকগুণ।
•১৮ বছরের বেশি বয়সিদের টিকা শুরু হতে চলায় কর্মীদের বড় অংশ প্রতিষেধক পাবেন এ বছরেই।
n ওষুধ, হাসপাতাল এবং আনুষঙ্গিক শিল্পের জন্য বছরটা ভাল। ভাল তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের জন্যেও। ইস্পাতের দাম বাড়ায় চাঙ্গা ইস্পাত শিল্প।
অর্থাৎ আশা করা যায়, দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রাথমিক ধাক্কা কোনও ক্রমে সামলে নিলে শিল্প-বাণিজ্য ফের গতি পাবে। যদিও এই সামলানোটা সরকারের কাছে মস্ত এক পরীক্ষা। একে তো রাজকোষ ঘাটতি মেটাতে চলতি বছরে কেন্দ্রকে বাজার থেকে ধার নিতে হবে ১২ লক্ষ কোটি টাকা। এর উপরে যদি নতুন করে আর্থিক ত্রাণ দিতে হয়, তবে তা জোগাড় করা যে বেশ কঠিন হয়ে পড়বে সন্দেহ নেই।
গত সপ্তাহে কয়েকটি বড় সংস্থা শেষ তিন মাসের ফলাফল ঘোষণা করেছে। নেসলে ইন্ডিয়ার লাভ বেড়েছে ১৪.৬%। ৭৪% বেড়ে সিমেন্ট উৎপাদনকারী এসিসি-র নিট মুনাফা পৌঁছেছে ৫৬২ কোটি টাকায়। এইচসিএল টেকনোলজির একত্রিত লাভ কমেছে ৬.১%। ১২২১ কোটি টাকা থেকে বেড়ে আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের নিট লাভ পৌঁছেছে ৪৪০৩ কোটি টাকায়। ফলে তিন মাসে এই বেসরকারি ব্যাঙ্কের শেয়ার পিছু আয় বেড়ে হয়েছে ৬.৩৭ টাকা।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy