ফাইল চিত্র।
গত সোমবার আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলাম করোনার দৈনিক সংক্রমণ ১.৫০ লক্ষ পার করায়। সাত দিন কাটার আগেই ২৪ ঘণ্টার সেই হিসেবটা নজিরবিহীন ভাবে ছাড়িয়েছে ২.৬০ লক্ষ। কোথায় গিয়ে তা থামবে, সেটাই চিন্তার। স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর কঙ্কালসার চেহারাটা এরই মধ্যে বেরিয়ে পড়েছে। হাসপাতাল, ডাক্তার, ওষুধ, অক্সিজেন— সবই অমিল। বহু জায়গায় অমিল প্রতিষেধকও। ফলে উদ্বেগ চেপে বসেছে দেশে। সেই সঙ্গে অর্থনীতিতেও। কারণ, ব্যবসায়িক কাজকর্ম ফের শ্লথ হয়ে পড়ায় নতুন অর্থবর্ষে আর্থিক কর্মকাণ্ড যে হারে এগোবে বলে ভাবা হচ্ছিল, তা সম্ভব না-ও হতে পারে। আশঙ্কায় ডুবে শেয়ার বাজারও। তার উপরে মূল্যবৃদ্ধি চড়ছে। অনিশ্চয়তা আরও বাড়বে আঁচ করে ধন্দে লগ্নিকারীরা। এপ্রিলে ভারত থেকে ৪৬০০ কোটি টাকার বেশি লগ্নি তুলেছে বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলি।
গত সপ্তাহের প্রথম দিনেই সেনসেক্স খুইয়েছিল ১৭০৮ পয়েন্ট। পরের তিন দিনে কিছুটা উঠলেও, ৪৮ হাজারের ঘর (৪৮৮৩২) পেরোতে পারেনি। যার প্রধান কারণ লকডাউন-আতঙ্ক। মহারাষ্ট্র-সহ বেশ কিছু রাজ্যে যখন স্থানীয় ভাবে আংশিক কিংবা পূর্ণ লকডাউন চলছে, তখন যে আর্থিক কাজকর্ম সুষ্ঠু ভাবে চলতে পারে না বলাই বাহুল্য। যেখানে লকডাউন নেই, সেখানেও কাজে যোগ দিতে ভয় পাচ্ছেন মানুষ। গণ-পরিবহণে যাতায়াত হয়ে পড়েছে চরম ঝুঁকিপূর্ণ।
তবে সংক্রমণেই সঙ্কট সীমাবদ্ধ থাকেনি। মার্চে পাইকারি বাজারে পণ্যের দাম বেড়েছে ৭.৯%, আট বছরে সর্বাধিক। পাইকারি দর এতটা বাড়লে খুচরো বাজারেও দাম বাড়বে। আশঙ্কা, আগামী দু’মাসে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার ছাড়াতে পারে দু’অঙ্কের মাত্রা। নাভিশ্বাস উঠেছে মধ্যবিত্তদের ঘরে। এক দিকে ভোজ্য তেল-সহ খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, চড়া তেল-গ্যাসের দাম এবং অন্য দিকে করোনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং সংক্রমিত হলে খরচবহুল চিকিৎসা— সব মিলিয়ে জেরবার তাঁরা। তার উপরে অনেক জায়গায় প্রতিষেধক অমিল হওয়ায় ধন্দে আমজনতা। বিশেষত যাঁদের একটি টিকা নেওয়া হয়ে গিয়েছে।
এর মধ্যেই ধুমধাম করে অনুষ্ঠিত হল টিকা উৎসব। অনেকের অভিযোগ, গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা দেশের জ্বলন্ত সমস্যাগুলি সমাধানের চেষ্টায় যত না ব্যস্ত, তার থেকে অনেক বেশি তৎপর পশ্চিমবঙ্গ-সহ পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোট নিয়ে। নাগরিকদের সুরাহা দেওয়ার থেকে অনেক বেশি সময় তাঁরা খরচ করছেন এই সব রাজ্য, বিশেষত বঙ্গের নির্বাচনে।
আশার দু’একটি কথা— ইতিমধ্যেই উন্নত ফলাফল উপহার দিয়েছে টিসিএস, ইনফোসিস এবং উইপ্রো। ৯০০০ কোটি টাকার শেয়ার ফেরানোর (বাই ব্যাক) সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইনফোসিস পর্ষদ। দেশে ইস্পাতের দর অনেকটা বাড়ায় চাঙ্গা ইস্পাত সংস্থাগুলি। চাঙ্গা অনেক ওষুধ সংস্থাও। গত অর্থবর্ষের শেষ তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের নিট মুনাফা ১৮.১৭% বেড়ে পৌঁছেছে ৮১৮৭ কোটি টাকায়। মোট আয় ২০০০ কোটিরও বেশি বেড়েছে।
রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক বাজার থেকে বন্ড কিনতে শুরু করার মুখে বন্ড ইল্ড কমলেও, তা সপ্তাহের শেষে ফের বেড়েছে। ১০ বছর মেয়াদি সরকারি বন্ড ইল্ড ৬ শতাংশে নেমেছিল গত সোমবার। সপ্তাহ শেষে তা হয়েছে ৬.০৮%। বন্ড বাজারও এত ওঠাপড়ায় অস্বস্তিতে লগ্নিকারীরা।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy