ছবি: সংগৃহীত।
কাঁপুনি ধরছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। আর্থিক বৃদ্ধির হার তলিয়ে যাচ্ছে নাগাড়ে। অথচ মাথা তুলছে মূল্যবৃদ্ধি। সোমবার সংশ্লিষ্ট সব মহলের কালঘাম ছুটিয়ে অর্থনীতির সেই কাঁপুনিটা নিমেষে বেড়ে গেল আরও কয়েক গুণ। সরকারি পরিসংখ্যানই জানাল, ডিসেম্বরে খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধি পৌঁছেছে ৭.৩৫ শতাংশে— গত সাড়ে পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। পাশাপাশি, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ৪ শতাংশের (+২%) সর্বোচ্চ সীমা পেরিয়ে এই হার ঢুকে পড়েছে বিপদসীমার বলয়ে।
শিল্প ও বিশেষজ্ঞ মহলের আক্ষেপ, চাহিদা বাড়িয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ঋণে সুদ কমা জরুরি। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধি এ ভাবে মাথা তুললে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সে পথে হাঁটবে কী করে! আর সুদ ছেঁটে খরচ কমানো না-গেলে এই কাহিল চাহিদার বাজারে কী করে পুঁজি ঢালবেন শিল্পোদ্যোগীরা? কী করে গতি আসবে কেনাকাটায়?
মূল্যবৃদ্ধি এত চড়া হলেও, গত ত্রৈমাসিকে আর্থিক বৃদ্ধি কিন্তু নেমেছে ৪.৫ শতাংশে। গোটা অর্থবর্ষেও তা ৫ শতাংশে আটকে থাকবে বলে সরকারেরই অনুমান। ফলে আগে যে প্রশ্নটা উঠতে শুরু করেছিল, সেটাই সোমবার চেপে বসেছে আরও। ভারত ‘স্ট্যাগফ্লেশন’-এ ঢুকছে না তো? ‘স্ট্যাগফ্লেশন’ হল এমন এক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি যখন, আর্থিক বৃদ্ধির হার কমবে, কিন্তু মূল্যবৃদ্ধি বাড়বে। যা বুঝিয়ে দেয়, অর্থনীতির উন্নয়ন থমকে গিয়েছে। শিল্পের কর্মকাণ্ড ঝিমিয়ে। চাহিদা নেই। বেকারত্ব বাড়ছে। অথচ জিনিসপত্রের দাম চড়া। ভারতীয় অর্থনীতির এই অবাঞ্ছিত পরিস্থিতিতে ঢুকে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলে এ দিন সাবধান করেছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
আরও পড়ুন: জিএসটি প্রতারণায় সবার আগে কলকাতা
এর আগে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ সতর্ক করেছিলেন এ নিয়ে। বলেছিলেন, অর্থনীতি এক বার ‘স্ট্যাগফ্লেশন’-এর জাঁতাকলে পড়লে, সেখান থেকে বেরোনো কঠিন। কারণ, তখন সুদ কমানো যায় না। ফলে লগ্নি টানা মুশকিল হয়। আবার সরকার খরচ বাড়ালে বেলাগাম হয় রাজকোষ ঘাটতি। মূল্যবৃদ্ধি চড়া হওয়ার ভয় থাকে। আরও ধাক্কা খায় বৃদ্ধি।
পরিসংখ্যান বলছে, মূলত আনাজ, ডাল, মাছ, মাংসের আকাশছোঁয়া দাম খুচরো মূল্যবৃদ্ধিকে ঠেলে তুলেছে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসির অর্থনীতিবিদ এন আর ভানুমূর্তি বলছেন, ‘‘স্ট্যাগফ্লেশনের লক্ষণ দেখা গেলেও, এখনই যে সেই বিপদ এসেছে, তা বলার সময় আসেনি। চড়া মূল্যবৃদ্ধি মূলত খাদ্যপণ্য, বিশেষত আনাজের দাম বাড়ার ফল। সেটা বাদ দিলে মূল্যবৃদ্ধি ৪ শতাংশের আশেপাশে। আশা করা যায়, জানুয়ারিতে আনাজ সস্তা হবে। তখন কমবে মূল্যবৃদ্ধিও।’’ তবে একই সঙ্গে তিনি বলেন, গোটা অর্থবর্ষে আর্থিক বৃদ্ধির হারের ৫% ছুঁতে হলে, শেষ দুই ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির গড় হার ৫ শতাংশের বেশি হতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy