—ফাইল চিত্র।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন ও আইএমএফের শীর্ষ কর্তা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন খাদের ধারে পৌঁছে যাওয়া ভারতের অর্থনীতি নিয়ে। বৃদ্ধির পূর্বাভাস ছাঁটছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক, একের পর এক মূল্যায়ন সংস্থা। এমনকি রিজার্ভ ব্যাঙ্কও। অর্থনীতি চাঙ্গা করার লক্ষ্যে টানা পাঁচ বার সুদ কমিয়েছে যারা। এ বার সেই একই সুর শিল্প মহলের গলায়। যাদের একাংশ কেন্দ্রের কর্পোরেট কর ছাঁটার মতো একগুচ্ছ পদক্ষেপের পরে শীঘ্রই ছবিটা বদলাবে ভেবে আশায় বুক বেঁধেছিল। টানা পাঁচ বার সুদ কমার পরে ধারের খরচ কমবে ভেবে আশা করেছিল দ্রুত লগ্নি ফেরার। শিল্প ও অর্থনীতিবিদদের অনেকে এখনই অর্থনীতির রথের চাকা ঘোরার কোনও আশা দেখছেন না। বরং আশঙ্কা করছেন সেই সুদিন ফিরতে কয়েক বছর লাগতে পারে বলে। তাঁদের দাবি, সরকার অবিলম্বে আরও জোরালো কিছু পদক্ষেপ করুক। না হলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে আরও বেশি সময় গড়াবে।
তিহাড় জেলে বসে এ দিন কেন্দ্রের আর্থিক নীতির সমালোচনা করেছেন কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম। বলেছেন বর্তমান আর্থিক সঙ্কটের জন্য মূলত দায়ী তাদের জিএসটি চালুর নীতি।
সোমবার ভারত চেম্বারের প্রেসিডেন্ট সীতারাম শর্মার দাবি, বছর দু’তিন ধরেই এমন সঙ্কটজনক পরিস্থিতির ইঙ্গিত মিলছিল। কিন্তু তা মানতে চায়নি কেন্দ্র। একাংশের দাবি, মানলে, সঙ্কট এই জায়গায় আসতই না। সেই সঙ্গে শর্মা বলেন, ‘‘ভারতের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। অথচ সেই ক্ষেত্রে চাহিদা বাড়ানোয় জোর দেওয়াই হয়নি। ফলে গ্রামীণ অর্থনীতির হাত ধরে সঙ্কট ছড়িয়েছে সর্বত্র।’’
উদ্বেগ
• খুব তাড়াতাড়ি অর্থনীতির রথের চাকা ঘোরার আশা নেই।
• সরকার একের পর এক পদক্ষেপ করলেও, তাতে বাজারে চাহিদা ও বিক্রিবাটা বাড়ার সম্ভাবনা কম।
• চাহিদা না বাড়লে শিল্প মহল লগ্নি করবে কী করে?
• এখনও নতুন বেসরকারি লগ্নির দেখা নেই।
• অর্থনীতি চাঙ্গা করার জন্য টানা পাঁচ বার সুদ কমানোর পরেও খোদ রিজার্ভ ব্যাঙ্কই চলতি অর্থবর্ষে বৃদ্ধির হার ছেঁটেছে। তা হলে আর আস্থা বাড়বে কী করে?
• ধার দেওয়া নিয়ে সংশয়ী ব্যাঙ্কগুলিও। এনবিএফসিগুলির থেকে ঋণ পাওয়া যাচ্ছে না।
• কৃষির মতো ক্ষেত্রে উন্নতির অভাব গোটা আর্থিক ব্যবস্থার পক্ষে বড় ধাক্কা। কৃষকের হাতে অর্থ এলে গ্রামাঞ্চলে বিক্রিবাটা বাড়ে।
• সঠিক পদক্ষেপ করতে দেরি হয়েছে অনেকখানি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে তো!
অর্থনীতির গভীর অসুখের কথা মানতে না চাইলেও, হালে একগুচ্ছ পদক্ষেপ ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী। পদক্ষেপটি যে ইতিবাচক, তা মানছেন শর্মা ও মার্চেন্ট চেম্বারের প্রেসিডেন্ট বিশাল ঝাঝারিয়া। তবু তাঁদের আশঙ্কা, বিনিয়োগ ও বৃদ্ধির চাকা ঘুরতে লেগে যেতে পারে দু’তিন বছর। বিশালের মতে, অর্থনীতির হাল কত দ্রুত স্বাভাবিক হয়, সেটাই এখন গুরুত্বপূর্ণ। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট-কলকাতার অর্থনীতির অধ্যাপক পার্থ রায়ও বলছেন, ‘‘এই মুহূর্তে ভবিষ্যৎ চূড়ান্ত অনিশ্চিত।’’
ফিডব্যাক ইনফ্রার চেয়ারম্যান তথা বণিকসভা সিআইআইয়ের কর্তা বিনায়ক চট্টাপাধ্যায়ের যুক্তি, সুদিন ফেরাতে আরও জোরালো পরিকল্পনা জরুরি। বিশালের দাবি, এখনও সিমেন্ট-সহ কিছু পণ্যে জিএসটি-র হার অনেক বেশি। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে করের হার পুনর্গঠন দরকার। তাঁর মতে, ‘‘আগে যখন সমস্যার ইঙ্গিত মিলছিল তখন ব্যবস্থা নিলে হয়তো কম জোর দিলেও কাজ হত। কিন্তু এখন সরকারের তরফে বড়সড় কিছু পদক্ষেপ ছাড়া আর পথ নেই।’’
পরামর্শ
• বাজারে নগদের জোগান ও ঋণ বণ্টন বাড়াতে হবে।
• চাহিদা বাড়ানোর জন্য সরকারের তরফে
জোরালো কিছু পদক্ষেপ জরুরি। না হলে বৃদ্ধিকে ছ’বছরের তলানি থেকে টেনে তোলা মুশকিল।
• রাজকোষ ঘাটতি লক্ষ্যমাত্রা পেরলেও সরকারি খরচ বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই।
• রেল, সেতু, সড়কের মতো বিভিন্ন পরিকাঠামো প্রকল্পে বিপুল লগ্নির মাধ্যমে আর্থিক উন্নতির পরিকল্পনা করা উচিত। তাতে শিল্প যেমন উপকৃত হবে, তেমনই বাড়বে কর্মসংস্থান।
• পরিকাঠামো প্রকল্পে লগ্নির জন্য তৈরি হোক একটি জাতীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান।
এমনিতেই কেন্দ্রের বিভিন্ন পদক্ষেপে খরচ বাড়ায় এবং সেই সঙ্গে কর কমায় রাজকোষ ঘাটতি বেলাগাম হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে পার্থবাবুর মতো বিনায়কবাবুও মনে করেন, প্রয়োজনে ঘাটতির লক্ষ্য কিছুটা শিথিল হোক। কিন্তু সরকারের খরচ না করে উপায় নেই। আর তা করা হোক রাস্তা-সহ বিভিন্ন ধরনের পরিকাঠামো গড়তে। পার্থবাবু মনে করাচ্ছেন, বিশ্ব জোড়া মন্দার সময় দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের আমলেও রাজকোষ ঘাটতি বেড়েছিল। বিনায়কবাবুর যুক্তি, চাহিদার চেয়ে এখন লগ্নিতেই জোর দেওয়া উচিত। তবে কোনও নির্দিষ্ট শিল্পের চেয়ে পরিকাঠামোয় খরচের প্রভাব সুদূরপ্রসারী। তাঁর পরামর্শ, সরকারি সম্পত্তির একাংশ বিক্রিবাটা করে প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা তোলা যেতে পারে। তা দিয়ে তৈরি হতে পারে একটি জাতীয় পরিকাঠামো উন্নয়ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান। শেয়ার মূলধনের ন’গুণ ধার নেওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে বুলেট ট্রেনের ক্ষেত্রে যেমন কম সুদে জাপানি সংস্থার থেকে ভারত ঋণ নিয়েছে, ওই প্রতিষ্ঠানটিও সে ভাবে পড়শি বন্ধুদের থেকে ধার নিয়ে পরিকাঠামো গড়ুক। তাঁদের দাবি এতে শিল্পের সুবিধা হবে, খরচ কমবে। বাড়বে কর্মসংস্থান। বাড়বে চাহিদা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy