বহু দিন ধরেই দেশীয় শিল্পের অভিযোগ যে, কম দামের কিছু ইস্পাত পণ্য পাঠিয়ে তাদের মেরুদণ্ড ভাঙার চেষ্টা চালাচ্ছে চিন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া, ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়ার বিভিন্ন সংস্থা। সেই আগ্রাসী বাণিজ্য ঠেকাতে এ বার আরও কড়া পদক্ষেপ করার পথে কেন্দ্র। মঙ্গলবার তারা জানিয়েছে, ওই সমস্ত দেশ থেকে হট রোলড জাতীয় ইস্পাত পণ্য আমদানির উপর সাময়িক ভাবে শাস্তিমূলক শুল্ক বসানোর সুপারিশ করেছে এ সংক্রান্ত ডিরেক্টরেট জেনারেল (ডিজিএডি)। যার পরিমাণ দাঁড়াতে পারে টন প্রতি ৫৫৭ ডলার (প্রায় ৩৭,৬৭৫ টাকা পর্যন্ত) পর্যন্ত। কারণ এ বিষয়ে তদন্তে প্রাথমিক ভাবে তারা দেখেছে, পণ্যগুলি সাধারণ বাজার দরের তুলনায় অনেক কম দামে বিকোচ্ছে ভারতে। করের খুঁটিনাটি সম্পর্কে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করলেই কার্যকর হয়ে যাবে ওই শুল্ক।
বস্তুত, বিদেশ থেকে ভারতের বাজারে ঢোকা বিভিন্ন হট রোলড জাতীয় ইস্পাত পণ্যে শাস্তি-শুল্ক বসানোর আর্জি বেশ কিছু দিন ধরেই জানিয়ে আসছে সেল, জেএসডব্লিউ স্টিল, টাটা স্টিল ও এসার স্টিল। সকলেরই অভিযোগ, ওই ছয় দেশের বিভিন্ন সংস্থা দেশীয় উৎপাদনকারীদের তুলনায় অনেক সস্তায় পণ্য বেচছে ভারতে। যে দাম উৎপাদনের খরচের থেকেও কম (ডাম্পিং)। ফলে প্রতিযোগিতায় এঁটে উঠতে খাবি খাচ্ছে দেশীয় ইস্পাত শিল্প। ক্রমশ তলানিতে ঠেকছে লাভের অঙ্ক। বিশেষজ্ঞদের দাবি, একে বিশ্বে জুড়ে ইস্পাতের চাহিদা আশঙ্কাজনক ভাবে কমেছে। তার উপর বাজার ছেয়ে যাওয়া সস্তার পণ্যের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হলে ভবিষ্যতে ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই কঠিন হবে। যেমনটা সম্প্রতি দেখা গিয়েছে ব্রিটেনে টাটা স্টিলের ব্যবসার ক্ষেত্রে।
প্রসঙ্গত, অস্বাভাবিক কম দামে ওই ইস্পাত পণ্য রফতানির জন্য ওই দেশগুলিকে গত এপ্রিলেই নোটিস পাঠিয়েছিল কেন্দ্র। যেখানে বলা হয়, ডাম্পিং-এর জন্য তারা যেন নিজের নিজের দেশের ইস্পাত সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।
এমনিতে সারা বিশ্বেই এখন ইস্পাত শিল্পের অবস্থা শোচনীয়। চাহিদা তলানিতে। অথচ উপচে পড়ছে জোগান। ফলে গত বছর দুয়েক ধরেই দাম নেমেছে হুড়মুড়িয়ে। এই পরিস্থিতিতে ভারত-সহ সারা দুনিয়ায় ইস্পাত বাজার ছেয়ে গিয়েছে বিশেষ করে চিনা সংস্থাগুলির সস্তা পণ্যে। ফলে ঘাড়ে চেপে থাকা ধারের বিপুল বোঝা কমাতে প্রাণ ওষ্ঠাগত ঘরোয়া ইস্পাত শিল্পের।
সোমবারই কেন্দ্রীয় ইস্পাতমন্ত্রী বীরেন্দ্র সিংহ লোকসভায় জানিয়েছিলেন, এ দেশে ব্যাঙ্কগুলির কাছে প্রায় ৩ লক্ষ কোটি টাকা ধার বাকি ফেলেছে দেশের ইস্পাত শিল্প। যা অনেকখানি বাড়িয়ে দিয়েছে অনুৎপাদক সম্পদের পরিমাণ। এর দায় ঘাড়ে নিয়ে লোকসানে জেরবার বিশেষত দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি। ফলে সার্বিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। আরও শ্লথ হচ্ছে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়া।
এই পরিস্থিতি যুঝতে কেন্দ্র যে বিভিন্ন পদক্ষেপ করছে, লোকসভাতেই তা স্পষ্ট জানান সিংহ। দেশীয় ইস্পাতমহলের দাবি, অবস্থা বদলাবে এই শাস্তি-শুল্ক লাগু হলেও। অনৈতিক প্রতিযোগিতা থেকে রেহাই পেয়ে মুনাফা বাড়ানোর সুযোগ পাবে তারা। সুবিধা হবে ধার শোধ করতেও।
উল্লেখ্য, দেশীয় সংস্থাগুলিকে কিছুটা স্বস্তি দিতে ফেব্রুয়ারিতে ১৭৩টি ইস্পাত পণ্য আমদানির ন্যূনতম মূল্য বাঁধার কথাও ঘোষণা করে দিল্লি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy