ডলারের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। টাকা প্রায় নিয়মিত গড়ছে তলানি ছোঁয়ার নতুন নজির। —প্রতীকী চিত্র।
শুধু শেয়ারের দাম নয়, ডলারের সাপেক্ষে টাকার দামের হুড়মুড়িয়ে নেমে আসাও এখন বড় মাথাব্যথার কারণ। ১৯৪৭ সালে যে ডলার ছিল মাত্র ৪.১৬ টাকা, তা-ই গত শুক্রবার এক লাফে ২১ পয়সা বেড়ে থেমেছিল ৮৫.৪৮ টাকায়। ভারতীয় মুদ্রা এত নীচে কোনও দিন নামেনি। এটা বেশ কিছু দিন ধরেই চলছে। ডলারের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। টাকা প্রায় নিয়মিত গড়ছে তলানি ছোঁয়ার নতুন নজির। অনেকে ভাবতে পারেন, ‘ডলারের দাম বাড়লে আমাদের কী। দৈনন্দিন জীবনে তো ডলারের ব্যবহারই নেই। তা হলে এ নিয়ে আমরা মাথা ঘামাব কেন?’
না, ব্যাপারটা এত সহজ নয়। বস্তুত, ডলারের ওঠাপড়ার সঙ্গে আমাদের অর্থনীতি তো বটেই, এমনকি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাও বিশেষ ভাবে সম্পর্কযুক্ত। বিশ্ব বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ডলার এখনও অত্যন্ত শক্তিশালী মুদ্রা। বৈদেশিক বাণিজ্যের সিংহভাগ সারা হয় এর মাধ্যমে। তাই টাকাকে নীচে ঠেলে ডলারের দাম বাড়লে তার বড় প্রভাব অগ্রাহ্য করা সম্ভব নয়। এতে আমদানি খাতে খরচ ফুলেফেঁপে ওঠে। রফতানির তুলনায় ভারতের আমদানি সব সময়েই বেশি। ফলে দেশকে সর্বদা বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি নিয়ে চলতে হয়। ভারতকে যে সব পণ্য আমদানি করতে হয় তার মধ্যে প্রথম সারিতে আছে, জ্বালানি তেল, বৈদ্যুতিক যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ, কম্পিউটার ও তার যন্ত্রপাতি, সোনা, হিরে, দামি রত্ন, প্ল্যাটিনাম ইত্যাদি, বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ, ভোজ্য তেল ও চর্বি, প্লাস্টিক, লোহা ও ইস্পাত, চিকিৎসা সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি, বিমান এবং তার যন্ত্রাংশ। ডলারের দাম বাড়লে এই সব পণ্যেরও দাম বাড়ে, যার মূল্য চোকাতে হয় মানুষকে।
কেন্দ্রকেও বিদেশি দেনা মেটাতে হয় ডলারে। তাই এর দাম বাড়লে তাদের খরচ বাড়ে। এ ক্ষেত্রেও চাপ বাড়ে আমজনতার উপর। চিন্তা বাড়ে আমদানি নির্ভর শিল্পেরও। কারণ, কাঁচামালের খরচ চড়ে। ফলে মাথা তোলে তাদের উৎপাদিত পণ্যের দাম। এই বাড়তি দামের অনেকটাই চোকাতে হয় মানুষকে। ডলারের দাম বাড়লে আমদানি করা ওষুধের দাম বাড়ে। বিদেশে পড়তে যাওয়ার খরচ বাড়ে, যাঁরা বিদেশি মুদ্রায় ঋণ নিয়েছেন বা যাঁদের বাবা-মাকে দেশ থেকে ডলার কিনে পাঠাতে হয়। বিদেশে যাওয়া পর্যটকদের খরচও বেড়ে যায়, যা এই শিল্পের জন্য ভাল নয়। বিদেশি মুদ্রায় ঋণ নেওয়া সংস্থাগুলিকে সুদ-আসল বাবদ বেশি টাকা চোকাতে হয়। অর্থাৎ ডলারের দাম বাড়ার ধাক্কা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে অনেকের গায়েই লাগে।
অন্য দিকে ডলারের চড়া দামে সুদিন দেখতে পায় রফতানি প্রধান শিল্প। এক দিকে, ডলার ভাঙিয়ে টাকায় আয় বাড়ে তাদের। অন্য দিকে বিদেশে বেড়ে যায় তাদের পণ্যের চাহিদা। কারণ অপেক্ষাকৃত কম ডলারে বেশি পণ্য কিনতে পারে দেশগুলি।
অতি অল্প সময়ে ডলারের দাম স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি চড়লে ভারসাম্য আনতে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ককে মাঠে নামতে হয়। এমন সময়ে তারা যে সব পদক্ষেপ করে তার অন্যতম, দেশের
বিদেশি মুদ্রা ভান্ডার থেকে ডলার বিক্রি। এ ভাবে বাজারে ডলারের জোগান বাড়িয়ে তার দামের উপর নিয়ন্ত্রণ আনার চেষ্টা করা হয়। এতে অবাধ পতনের হাত থেকে বাঁচে টাকা। তবে এই প্রক্রিয়া বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার কমাতে পারে। ঠিক যেমনটা হচ্ছে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে। ২০ ডিসেম্বর শেষ হওয়া সপ্তাহে ৮৪৮ কোটি ডলার কমে ওই ভান্ডার নেমেছে ৬৪,৪৩৯ কোটি ডলারে। তার আগের সপ্তাহে হারিয়েছিল ১৯৯ কোটি ডলার।
ডলারের দাম বাড়ে মূলত দু’টি কারণে। এক, রফতানির তুলনায় আমদানি বাবদ খরচ বৃদ্ধি। দুই, ভারতে শেয়ার এবং বন্ড বিক্রি করে বিদেশি লগ্নিকারীদের পুঁজি অন্যত্র সরানো। এতে ধস নামে শেয়ার বাজারেও। সম্প্রতি যা দেখা গিয়েছে।
ডলারের দাম মাঝেমধ্যে কমেও। তবে তা অল্প সময়ের জন্যে। বড় মেয়াদে সোনা, সেনসেক্স ও ডলার প্রধানত ঊর্ধ্বমুখী থাকে। সেই উত্থানের গতি এখন অস্বাভাবিক বলে ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। উদ্বিগ্ন সকলে। এগুলির মধ্যে যেন একটা সাদৃশ্যও চোখে পড়ছে। এই যেমন, মাস তিনেক আগে সেনসেক্স উঠেছিল ৮৫ হাজারে। ডলার ৮৫ টাকা ছাড়িয়েছে মাত্র ক’দিন আগে। অন্য দিকে অক্টোবরের শেষে ১০ গ্রাম পাকা সোনার (২৪ ক্যারাট) দাম ছাড়িয়েছিল ৮০,০০০ টাকা।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy