—প্রতীকী চিত্র।
সপ্তাহান্তের সন্ধ্যায় রসনা বদলের ইচ্ছে হল অনিকেত এবং জবার। ঠিক হল রাতে পরোটা খাওয়া হবে। কিন্তু জোগাড়-যন্ত্রের সময়ে দেখা গেল, বাড়িতে তো সাদা তেল নেই! কে এখন তা আনতে বাজারে ছুটবে? তাই একটি নামকরা অনলাইন মুদিখানায় তেলের অর্ডার দিয়ে দেয় জবা। বাজার চলে এল ঠিক ১২ মিনিটের মাথায়!
বাড়ির বাইরে পা না রেখে চটজলদি মুদিখানার বাজার করার এই ছবি এখন শহরের বাড়িতে বাড়িতে। ফলে চাপ বাড়ছে পাড়ায় পাড়ায় ছড়িয়ে থাকা সাধারণ মুদি দোকানগুলির উপরে। ব্যবসা কমছে। ঝাঁপ বন্ধ করতে হচ্ছে অনেককে। প্রশ্নচিহ্ন পড়ে গিয়েছে রুজিরুটিতে। বাধ্য হয়ে ব্যবসাকে একটু অন্য ভাবে সাজানোর কথা ভাবতে হচ্ছে খুচরো ব্যবসায়ীদের একাংশকে। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এই প্রবণতায় অবাক হওয়ার কিছু নেই। ফোন করে বা হোয়াটসঅ্যাপে মাসের বাজারের অর্ডার দেওয়ার অভ্যাস অনেক আগেই করে ফেলেছেন শহর এবং শহরতলির মানুষেরা। সুইগির ইনস্টামার্ট বা জ়োম্যাটোর ব্লিঙ্কইটের মতো অ্যাপ নির্ভর বিপণিগুলি সেই সুযোগই কাজে লাগাচ্ছে।
অন্য একটি অংশের ব্যাখ্যা, অনলাইনে অর্ডার দিয়ে বাড়িতে বসে হাতে পণ্য পাওয়ার সুবিধা মানুষ পেতে শুরু করেন ফ্লিপকার্ট, অ্যামাজ়ন, মিনত্রার মতো নেট বাজারের মাধ্যমে। তবে তা বই, সাজ-পোশাক, বাড়ির বিভিন্ন পণ্য-সহ নির্দিষ্ট কিছু সামগ্রীর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। সময়েও লাগত কয়েক দিন। তার পরে অনলাইনে অর্ডার দিয়ে খাবার আনানোর ঝোঁক বাড়ল। মুদিখানার বাজার এই সব কিছুর তুলনায় অনেক বড়। ফলে বাজার বদল এবং সরবরাহের সময় কমানো, এই দু’টি পদক্ষেপ করার ছিল সংস্থাগুলির। অনলাইন মুদি দোকানগুলিকে হাতে ধরে সেই সুযোগ তৈরি করে দিল অতিমারি। সেই সময় থেকেই ঘরে বসে অর্ডার দিয়ে বাজারহাট করা এক লাফে অনেকটা বেড়ে গিয়েছে সারা দেশে। সেই সুযোগে ব্যবসার পরিসর বাড়িয়েছে সংস্থাগুলি।
ব্যবসায়ীদের সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল ফোরাম অব ট্রেডার্স অর্গানাইজ়েশন্সের জেনারেল সেক্রেটারি রবীন্দ্রনাথ কোলে জানান, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে ছোট এবং মাঝারি প্রায় ৫০ লক্ষ ব্যবসায়ী আছেন। যাঁরা দোকানে বসে জিনিস বিক্রি করেন। তাঁরা সকলেই অনলাইন বাজারের ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। একাংশ ঝাঁপ বন্ধ করে দিয়েছেন। অনেকে আগামী দিনে কী করে বিক্রিবাটা চালাবেন, তা নিয়ে চূড়ান্ত দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।’’ তিনি বলছেন, একমাত্র জুতো এবং তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে এখনও ততটা থাবা বসাতে পারেনি নেট বিপণি। কারণ সেখানে মাপের গোলমাল হওয়ার চিন্তা থাকে গ্রাহকের। বদলের নেওয়ার ঝক্কি পোহাতে হয় মাপ ভুল হলে। এই সমস্যার কী ভাবে মোকাবিলা করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করার জন্য রাজ্যের ব্যবসায়ীদের নিয়ে এক সম্মেলন ডাকা হয়েছে ফোরামের পক্ষ থেকে, জানান কোলে।
সুইগির ব্যবসায়িক কৌশল সংক্রান্ত নথির কথা উল্লেখ করে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স দাবি করেছে, মুদিপণ্যের ব্যবসার আয়তন যে খাবার সরবরাহের ব্যবসার চেয়ে বেশি, তা তারা চিহ্নিত করেছে আগেই। ২১-৩৫ বছর বয়সি পেশায় ব্যস্ত শহুরে নাগরিকদের থেকে সবচেয়ে বেশি ব্যবসা পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করছে তারা। যদিও তাদের ইনস্টামার্ট এখনও মুনাফার মুখ দেখেনি বলেই সূত্রের খবর। ব্লিঙ্কইট সম্প্রতি খরচ তুলতে পেরেছে।
তবে তারা যে অবস্থাতেই থাকুক, চাপে সাধারণ বিপণি। কলকাতার এক ব্যবসায়ী জানাচ্ছেন, ‘‘ব্যবসা কমেছে। সম্প্রতি আরও কিছুটা জায়গা নিয়ে এবং বাতানুকূল যন্ত্র বসিয়ে নতুন ভাবে দোকান সাজিয়েছি। বাড়িয়েছি পণ্য। ক্রেতাদের সুবিধার দিকটা না দেখলে মুশকিল।’’ গুজরাতের খুচরো ব্যবসায়ী হিরেন গান্ধী জানাচ্ছেন, নির্দিষ্ট একটা গণ্ডির মধ্যে পণ্য পৌঁছে দিচ্ছেন তাঁরা। অর্ডার নিচ্ছেন হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy