প্রস্তাব: শুক্রবার সংসদে বাজেট বক্তৃতা অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের। পিটিআই
বাজেটের আগে জোর জল্পনা ছিল, বিবর্ণ অর্থনীতিতে রং ফেরাতে সরকারি ব্যয় বৃদ্ধির পথে হাঁটবেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। পিছপা হবেন না তার জন্য রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্য কিছুটা শিথিল করতেও। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, চলতি অর্থবর্ষে সেই লক্ষ্যকে আরও উঁচু তারে (জিডিপির ৩.৪% থেকে কমিয়ে ৩.৩%) বেঁধেছেন তিনি। এই ঘাটতি যেহেতু সরকারের ধার করার আয়না, তাই তা ছাঁটাইয়ের উদ্যোগ প্রশংসার। কিন্তু বাজেটে হিসেবের পাতা উল্টে জরুরি প্রকল্পে খরচ ছাঁটাই এবং হিসেবের কারসাজির গন্ধও পাচ্ছেন অনেকে। যেমন, বাজেট নথিতে দেখা যাচ্ছে, খরচে রাশ টানতে গিয়ে এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও প্রকল্পে টাকার টান পড়েছে, যেগুলির কাজ ঢাক-ঢোল পিটিয়ে প্রচার করে কেন্দ্র।
ভোট প্রচারে প্রায়ই সেনার বীরত্বকে টেনে এনেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফেব্রুয়ারিতে অন্তর্বর্তী বাজেটে প্রতিরক্ষায় প্রথম ৩ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দের পরে সংসদে লম্বা হাততালির স্মৃতি এখনও টাটকা। অথচ সেই নিরিখে এই বাজেটে প্রতিরক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে নামমাত্র। এত ডিজিটালের কথা বলেও ২০১৮-১৯ সালের তুলনায় বরাদ্দ কমেছে তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিকমে। অনেক জায়গায় দেখা যাচ্ছে, ২০১৮-১৯ সালের প্রাথমিক বরাদ্দের সাপেক্ষে সংশোধিত হিসেব বেশ খানিকটা কমেছে। ফলে তার তুলনায় কিছুটা বেশি দেখাচ্ছে চলতি অর্থবর্ষের বরাদ্দকে। কিন্তু আসলে তা ২০১৮-১৯ সালের থেকে বেড়েছে নামমাত্র। কিছু জায়গায় গিয়েছে কমেও! রয়েছে হিসেবের বাইরে রাখতে কিছু খরচ মেটানো ক্রমাগত পিছিয়ে দেওয়াও।
আইএসআই-কলকাতার অর্থনীতির অধ্যাপক অভিরূপ সরকারের প্রশ্ন, ‘‘কাজের সুযোগ তৈরির জন্য সরকার এত কথা বলছে। অথচ শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে নগণ্য। দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণে তা-ও না। এ ভাবে পৃথিবীর কোথাও কাজের সুযোগ তৈরি হয়েছে কি?’’
আবার ডিভিডেন্ড থেকে সম্ভাব্য আয় এ বার অনেক বেশি ধরেছে কেন্দ্র। শোনা যাচ্ছে, ওই বাবদ ৯০,০০০ কোটি টাকা আশা করা হচ্ছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে (আগের বার ছিল ৬৮,০০০ কোটি)। প্রশ্ন উঠছে, ঘাটতির ফাঁক ঢাকতে কি শীর্ষ ব্যাঙ্কের উপরে চাপ তৈরি করছে তারা?
এ ছাড়া, পেট্রল ও ডিজেলে ২ টাকা করে শুল্ক ও সেস বাড়িয়েছে কেন্দ্র। সেই খাতে বাড়তি ২৫,০০০ কোটি আসতে পারে। কিন্তু ঘাটতি পূরণের এই পদ্ধতি কতটা ঠিক, প্রশ্ন রয়েছে তা নিয়েও। ঠিক যে ভাবে প্রশ্ন উঠছে, রাজকোষ ভরতে ধনীদের উপরে নতুন সেস আখেরে কর ফাঁকির প্রবণতা বাড়াবে না তো!
২০১৮-১৯ সালে কর আদায়ের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২২.৭১ লক্ষ কোটি টাকা। সংশোধিত হিসেবেই তা কমে দাঁড়ায় ২২.৪৮ লক্ষ কোটি। প্রশ্ন উঠছে এ বার ২৪.৬১ লক্ষ কোটি কর আদায়ের লক্ষ্য পূরণ হবে কী ভাবে? বিশেষত যেখানে জিএসটি আদায়ের লক্ষ্যপূরণে প্রায়ই ব্যর্থ হচ্ছে কেন্দ্র।
শুধু তা-ই নয়। হিসেব দেখাচ্ছে, ২০১৮-১৯ সালের রাজকোষ ঘাটতির (৬.২৪ লক্ষ কোটি টাকা) থেকে ২০১৯-২০ সালের ঘাটতি (৭.০৩ লক্ষ কোটি) অনেকটাই বেশি। কিন্তু তা জিডিপির সাপেক্ষে কম (৩.৩%) দেখাচ্ছে এই এক বছরে বাজারের দামের ভিত্তিতে হিসেব করা জিডিপি ১২% বাড়বে ধরে নেওয়ায়। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, মূল্যবৃদ্ধির হারকে লক্ষ্যে (৪%) বেঁধে রাখা যাবে ধরে নিলে, ওই হিসেব মেলাতে প্রকৃত বৃদ্ধি হতে হবে কার্যত ৮ শতাংশের মতো। তা আদৌ সম্ভব হবে কি?
অভিরূপের মতে, যে দেশে সরকারের প্রতি ১০০ টাকা আয়ের মধ্যে প্রায় ২৪ টাকাই ঋণে সুদ মেটাতে চলে যায়, ঘাটতি কমানো ছাড়া তার উপায় নেই। কিন্তু সেই হিসেবে স্বচ্ছতা থাকা একান্ত জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy