ছবি: এএফপি।
মুদ্রার দাম কমিয়েই অর্থনীতির হাল ফেরাতে মরিয়া চিন। আর, তার জেরে দুশ্চিন্তা ছড়িয়েছে ভারতীয় শিল্পমহলে, বিশ্ব জুড়ে পতনের গ্রাসে শেয়ার বাজার। এক ধাক্কায় ডলারে ভারতীয় টাকা পড়েছে ৫৯ পয়সা।
ভারতীয় শিল্পমহল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রককে পরিস্থিতির উপর কড়া নজর রাখতে বলেছে। কেন্দ্রীয় উৎপাদন ও আমদানি শুল্ক পর্ষদ বুধবারই লোহা ও ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, নিকেল, তামা, দস্তার মতো বেশ কিছু ধাতুর আমদানি শুল্ক ২.৫ শতাংশ বাড়িয়েও দিয়েছে। লক্ষ্য চিনা আমদানি কমিয়ে দেশি শিল্পকে কিছুটা স্বস্তি দেওয়া। কেন্দ্রের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যম অবশ্য মন্তব্য করেন, ‘‘সন্দেহ নেই, নিজের ঢিমে তালে চলা অর্থনীতিতে প্রাণ ফেরানোর তাগিদেই এই পথ বেছে নিয়েছে চিন।’’
এই নিয়ে পরপর দু’দিন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মুদ্রার তুলনায় দাম কমার জেরে বুধবার চিনা ইউয়ানের দাম নেমে এসেছে গত চার বছরে সবচেয়ে নীচে। দাম পড়েছে ৪%। প্রতি ইউয়ানের দর নেমে এসেছে ৬.৪৫১০ ডলারে, যা ২০১১ সালের অগস্টের পর সবচেয়ে কম। মুদ্রার কম দামের হাত ধরে বিশ্ব জুড়ে সস্তার পণ্য বেচে রফতানির বাজারে আরও বেশি জায়গা করে নেওয়াই লক্ষ্য চিনের, যার জেরে আর্থিক বৃদ্ধির হারকেও টেনে তুলতে চায় তারা।
তবে চিনা শীর্ষ ব্যাঙ্ক পিপ্লস ব্যাঙ্ক অব চায়না-র এই পদক্ষেপে বিশ্ব জুড়ে মুদ্রার দাম কমানোর লড়াই শুরু হতে পারে বলেই আশঙ্কা করছে ভারতীয় শিল্পমহল। তার প্রভাবে ভারতের অর্থনীতির যাতে ক্ষতি না-হয়, সেই কারণেই আরবিআই ও কেন্দ্রকে সজাগ থাকতে আর্জি জানিয়েছেন বণিকসভা অ্যাসোচ্যামের সেক্রেটারি জেনারেল ডি এস রাওয়াত। চিন বেআইনি পথে হাঁটছে বলেও অভিযোগ উঠেছে শিল্পমহলে। তবে চিনা শীর্ষ ব্যাঙ্কের দাবি, মুদ্রার একটানা অবমূল্যায়নের কোনও আশঙ্কা নেই। এমনকী এক বিবৃতিতে ইউয়ানের দাম কমানোকে ‘স্বাভাবিক’ তকমাও দিয়েছে তারা।
ভারতীয় শিল্পমহল অবশ্য ইউয়ানের অবমূল্যায়ন নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কিত। তাদের মতে, চিনের এই পদক্ষেপ দেশের অর্থনীতিতে তিন দিক থেকে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। এগুলি হল:
• টাকার দামে ওঠা-পড়া বেড়ে যাবে বহুগুণ
• প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে ভারতীয় রফতানি
• সস্তার চিনা পণ্য ঢুকলে দেশেও মার খাবে শিল্প
ইউয়ানের দাম কমায় বিশেষ ভাবে বিরূপ প্রভাব পড়বে ভারত থেকে বস্ত্র ও ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য রফতানিতে, এমন আশঙ্কাই করছে বিভিন্ন বণিকসভা। ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য রফতানিকারীদের সংগঠন ইইপিসি বলেছে, এখনই মন্দার সঙ্গে যুঝতে নাজেহাল তারা। চিনা পণ্যের রমরমা আরও বাড়লে ভারতের রফতানিতে বড় রকমের ধাক্কা আসতে পারে। রফতানি মার খাওয়ার সম্ভাবনার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন ভারতের অর্থ সচিব রাজীব মহর্ষি-ও।
পাশাপাশি, ভারতে চিনা পণ্যের আমদানি আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, চিনা পণ্য আগের থেকে আরও সস্তা দরে পাওয়া যাবে। ফলে দেশের মধ্যেও বাজার হারাবে ভারতীয় পণ্য। ভারতের ইস্পাত শিল্প বিশেষ করে সমস্যায় পড়়বে বলে মনে করছে টাটা স্টিল। সংস্থার গ্রুপ এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর (ফিনান্স ও কর্পোরেট) কৌশিক চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ইউয়ানের দাম কমায় আমদানির চাপ বাড়তেই পারে। কেন্দ্র আমদানি শুল্ক ২.৫% বাড়ালেও, তার সুবিধা মিলবে না।’’ এ দিন কলকাতায় এক সাংবাদিক বৈঠকে শ্যাম স্টিলের চেয়ারম্যান শ্যামসুন্দর বেরিওয়াল বলেন যে, চিন থেকে ভারতে ইস্পাত আমদানির উপর রাশ টানার উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই চিনা ইস্পাতজাত পণ্যের উপর ৭.৫% হারে অতিরিক্ত শাস্তিমূলক আমদানি শুল্ক চাপিয়েছে। কিন্তু চিন দফায় দফায় নিজেদের মুদ্রার মূল্য হ্রাস করার ফলে ওই অতিরিক্ত শুল্কের কার্যকারিতাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কারণ, মূল পণ্যেরই দাম কমে য়াওয়ার ফলে ওই শুল্ক যোগ করেও চিনের ইস্পাতজাত পণ্যের দাম ভারতীয় পণ্যের থেকে কম। বেরিওয়াল বলেন, ‘‘চিনের মুদ্রার মূল্য হ্রাসের ফলে ভারতে আগের থেকে আরও বেশি করে ইস্পাতজাত পণ্য আমদানি হবে বলেই আমার আশঙ্কা। শুধু ইস্পাতই নয়, চিন থেকে আমদানি করা অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রেও একই প্রভাব পড়বে।’’
এ দিকে, বিশ্ব জুড়েই বুধবার পতন হয়েছে শেয়ার বাজারে, যার ঢেউ এসে পড়ে ভারতে। এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা সর্ত্রই শেয়ার সূচকের মুখ ছিল নীচের দিকে। মুম্বই বাজারের সূচক সেনসেক্স এ দিন এক ধাক্কায় পড়ে যায় প্রায় ৩৫৪ পয়েন্ট। বাজার বন্ধের সময়ে সূচক ছিল ২৭,৫১২.২৬ অঙ্কে, যা গত দু’সপ্তাহে সবচেয়ে কম। ডলারে ভারতীয় টাকা ৫৯ পয়সা পড়ায় দিনের শেষে প্রতি ডলারের দাম দাঁড়ায় ৬৪.৭৮ টাকা।
স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া-র চেয়ারপার্সন অরুন্ধতী ভট্টাচার্য এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘ইউয়ানের দাম কমাটা ভারতের পক্ষে ক্ষতিকারক। তবে এই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার ক্ষমতা আমাদের অর্থনীতির আছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy