প্রতীকী ছবি।
বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম ফের বাড়তে বাড়তে পৌঁছে গিয়েছে ব্যারেল পিছু ১২০ ডলারে। আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটছে দেশের পেট্রল-ডিজ়েল। আজ, শুক্রবার দেশে ফের বেড়েছে পরিবহণ জ্বালানি দু’টির দর। কলকাতায় আইওসি-র পাম্পে লিটার পিছু ৮৪ পয়সা বেড়ে পেট্রল হয়েছে ১০৭.১৮ টাকা। আর ডিজ়েল এই দফায় ফের ছাড়িয়ে গিয়েছে ৯২ টাকা। আগের দিনের থেকে ৮০ পয়সা বেড়ে পৌঁছেছে ৯২.২২ টাকায়।
মঙ্গলবার থেকে এই নিয়ে তিন দিনে পেট্রল বাড়ল মোট ২.৫১ টাকা আর ডিজ়েল ২.৪৩ টাকা। মাঝখানে শুধু বৃহস্পতিবার তা অপরিবর্তিত ছিল। সংশ্লিষ্ট মহলের আশঙ্কা, এমন চলতে থাকলে এই দফায় দামের নতুন রেকর্ড গড়বে দুই জ্বালানি। এর আগে গত বছর ৩ নভেম্বর সর্বকালীন উচ্চতার নজির গড়ে পেট্রল উঠে যায় ১১০.৪৯ টাকায়, ডিজ়েল ছুঁয়ে ফেলে ১০১.৫৬ টাকা। তার পরেই উৎপাদন শুল্ক কিছুটা কমায় কেন্দ্র। পেট্রলে লিটার পিছু ৫ টাকা আর ডিজ়েলে ১০ টাকা। কিন্তু বিরোধী-সহ সংশ্লিষ্ট মহলের অভিযোগ, দাম বৃদ্ধির নিরিখে শুল্ক ছাঁটাইয়ের অঙ্ক অতি সামান্য। বিশেষত বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম কম থাকার সময় যেহেতু অতিমারি সত্ত্বেও শুল্ক বাড়িয়ে রাজকোষ ভরেছে মোদী সরকার।
অভিযোগ
• ডিসেম্বরের গোড়ায় বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের (ব্রেন্ট ক্রুড) দাম ব্যারেলে প্রায় ১৫-১৬ ডলার কমে হয়েছিল ৬৮ ডলার। কিন্তু ভারতে পেট্রল-ডিজ়েল কমেনি।
• পরে নাগাড়ে বেড়ে ব্রেন্ট ফের ৮৪ ডলার পেরিয়ে যায়। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পরে ১৩৯ ডলার ছুঁয়ে উচ্চতার রেকর্ডও গড়ে ফেলে। তা সত্ত্বেও দেশে তেলের দাম ১৩৭ দিন স্থির ছিল।
• ২০২০ সালের মার্চে অতিমারি হানার সময় ব্রেন্ট যখন ২০ ডলারের নীচে নেমেছিল, তখন দেশে তেলে উৎপাদন শুল্ক বাড়িয়েছিল কেন্দ্র। এখন যখন তা ১২০ ডলার তখন শুল্ক কমানো হচ্ছে না।
• গত নভেম্বরে পেট্রলে লিটার পিছু ৫ টাকা, ডিজ়েলে ১০ টাকা শুল্ক কমে। শুল্ক এবং দাম বৃদ্ধির তুলনায় যা নগন্য।
বৃহস্পতিবার লোকসভায় এক প্রশ্নের উত্তরে তেলমন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী দেশে জ্বালানির দাম বৃদ্ধির জন্য প্রত্যাশিত ভাবেই আন্তর্জাতিক বাজারে অশোধিত তেলের দিকে আঙুল তুলেছেন। তবে একই সঙ্গে তাঁর আশ্বাস, জ্বালানির দামকে সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। যদিও শুল্ক কমানো প্রসঙ্গে কিছু বলেননি। সরকার কী ভাবে জ্বালানির দামকে সাধ্যের মধ্যে রাখতে চাইছে, তারও কোনও ইঙ্গিত দেননি।
এ দিন উপদেষ্টা সংস্থা মুডি’জ় ইনভেস্টর সার্ভিস এক রিপোর্টে বলেছে, বিশ্ব বাজারে বেশ কিছু দিন ধরে তেলের দাম বৃদ্ধি সত্ত্বেও দেশে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম অপরিবর্তিত রাখায় মোট ২২৫ কোটি ডলার (প্রায় ১৯ হাজার কোটি টাকা) লোকসান গুনতে হয়েছে আইওসি, বিপিসিএল এবং এইচপিসিএলের মতো ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণন সংস্থাগুলিকে। ৪ নভেম্বরের পর থেকে মোট ১৩৭ দিন অপরিবর্তিত ছিল সেগুলি। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, ঠিক এখানে দাঁড়িয়েই মোদী সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায়। কারণ, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক হামলার জেরে ব্রেন্ট ক্রুড যেখানে উঠেছে তাতে দাম বৃদ্ধি স্বাভাবিক ছিল। বরং সাধারণ মানুষকে সুরাহা দেওয়া যেত উৎপাদন শুল্ক কমিয়ে।
বিরোধীদের অভিযোগ, বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম যতই বাড়ুক, ভোটের মরসুম হলে মোদী সরকার জ্বালানির দাম বাড়তে দেয় না। আর তা মিটলেই পরিস্থিতি বদলে যায়। যেমন, এখন হচ্ছে। পেট্রল, ডিজ়েল, রান্নার গ্যাস, সিএনজি— সব বাড়ছে। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, যখন অশোধিত তেলের দাম কমে, তখন ভারতে সেই অনুপাতে সস্তা হয় না জ্বালানি। অথচ বিশ্ব বাজারে দাম লাফিয়ে বাড়লে তার ধাক্কা টের পান দেশবাসী। আবার অশোধিত তেল যতই চড়া হোক না কেন, তা বিন্দুমাত্র বোঝা যায় না দেশে নির্বাচনের মরসুম চললে। এমনকি তেল সংস্থাগুলি লোকসানে ডুবে গেলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy