Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Budget 2020

আয়করের বিকল্প হার নয়, জরুরি ছিল ত্রাণ 

অর্থনীতিবিদদের অনেকের দাবি, এই ব‍্যবস্থা আদতে জটিলতা ও ধন্দ বাড়াবে।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত
শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:২৪
Share: Save:

মধ্যবিত্তের ঘাড় থেকে আয়করের বোঝা কমানো এবং তার হিসেব-নিকেশ সরল করার যুক্তিতে বাজেটে করের হারের নতুন বিকল্প আনার কথা ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। যেখানে কর কমছে ঠিকই, তবে সেই সুযোগ নেওয়ার জন্য করছাড়ের সুবিধা ছাড়ার শর্ত থাকছে। অর্থনীতিবিদদের অনেকের দাবি, এই ব‍্যবস্থা আদতে জটিলতা ও ধন্দ বাড়াবে। অথচ করের হার কমায় হাতে থাকা বাড়তি টাকা বাজারে কেনাকাটা বাড়াবেই, তা হলফ করে বলা যাবে না। উপরন্তু নতুন নিয়ম ভোগ ও সঞ্চয়ের ভারসাম্যও টলিয়ে দিতে পারে। করের হারে এই বিকল্প আনার বদলে বাজার চাঙ্গা করতে সরাসরি আমজনতার হাতে টাকা পৌঁছয়, এমন পরিকল্পনা জরুরি ছিল বলে মনে করছেন তাঁরা।

চাহিদা বাড়িয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সম্প্রতি কর্পোরেট কর ছেঁটেছে কেন্দ্র। তার পরেই উঠেছিল ব্যক্তিগত আয়কর কমানোর দাবি। সেই সওয়াল করতে গিয়ে অনেকে বলেন, নেতিয়ে পড়া বাজারে পণ্য-পরিষেবার চাহিদা বাড়াতে মধ্যবিত্তের পকেটে টাকা থাকা জরুরি। তখন বিক্রিবাটা বাড়লে লগ্নিও আসবে। বাজেটের পরে অর্থনীতিবিদদের একাংশ বলছেন, এ ভাবে করদাতাকে সেই বাড়তি টাকাই জোগাতে চেয়েছেন নির্মলা। তবে বাস্তবে এর কার্যকারিতা নিয়ে সংশয়ী আইআইএম কলকাতার অর্থনীতির অধ্যাপক পার্থ রায়। তাঁর মতে, নতুন নিয়ম বরং বেশ জটিল। কতটা লাভ হবে কিংবা আদৌ হবে কি না, তা অনিশ্চিত। দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্সের অর্থনীতির অধ্যাপক পরীক্ষিত ঘোষের মতো অনেকেরই মত, বাজার চাহিদা বাড়ানোর বদলে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াবে এই নিয়ম। দোলাচলও তৈরি হবে।

আইআইএম কলকাতার প্রাক্তন অধ্যাপক অনুপ সিন্‌হার বক্তব্য, কর ও সঞ্চয় কমিয়ে লোকের হাতে উদ্বৃত্ত টাকা রাখলে সরাসরি কেনাকাটার আগ্রহ অনেকটা বেড়ে যাবে— বিষয়টি এত সরল নয়। উল্টে এতে ভোগ ও সঞ্চয়ের ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে পারে। তিনি বলছেন, নতুন নিয়মে কর কম দিতে হওয়ায় একজন হয়তো বাড়তি টাকায় কেনাকাটা বাড়ালেন। তাতে চাহিদা কিছুটা বাড়বে। কিন্তু তিনি সে ভাবে হয়তো সঞ্চয় করলেন না বা কম জমালেন। আবার আর এক জন হয়তো উদ্বৃত্ত অর্থ খরচ না-করে ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখতে শুধু সঞ্চয়ই করলেন। তাঁর দাবি, এর ফলে কেনাকাটা বা সঞ্চয় কোনওটাই তেমন বাড়ল না। অথচ শর্ত না-বেঁধে করের হার কমলে হয়তো দু’জনেই বাধ্যতামূলক ভাবে করছাড়ের লক্ষ্যে সঞ্চয় বাড়াতেন আবার দু’জনেই বাড়তি টাকা চাহিদা মেটাতে কেনাকাটায় লাগাতেন। ফলে দু’টিই বাড়ত। তখন বাজারে দ্রুত চাহিদা বাড়লে বৃদ্ধির হারে হয়তো তার প্রতিফলন দেখা যেত।

পার্থবাবুর দাবি, নতুন নিয়মে সঞ্চয়ের অভ‍্যাসকে নিরুৎসাহিতও করা হচ্ছে। অথচ এতে চাহিদা বাড়বে, এমনটাও হলপ করে বলা যায় না। দু’টি নিয়ম একসঙ্গে চালু থাকা অনেকটা গন্তব্যের মাঝ পথে গিয়ে দিশা হারানোর মতো। তাঁদের সকলেরই দাবি, চাহিদা বাড়াতে সরাসরি পকেটে টাকা আসার ব্যবস্থা জরুরি ছিল। জোর দেওয়া দরকার ছিল আর্থিক ত্রাণ বা একশ দিনের কাজের মতো প্রকল্পে। প্রয়োজনে রাজকোষ ঘাটতি আরও শিথিলের সওয়ালও করেছেন তাঁরা। জিডিপির ৩.৩ শতাংশের বদলে বাজেটে সংশোধিত হয়ে যা হয়েছে ৩.৮%।

সম্প্রতি দেশের প্রাক্তন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কৌশিক বসু টুইটে বলেছিলেন, ২০০৮ সালের বিশ্ব জোড়া মন্দায় ভারতের বৃদ্ধি ধাক্কা খেয়েছিল। কিন্তু বাজেটে ঘোষিত আর্থিক ত্রাণ প্রকল্পের সাহায্যে পরের বছরই তা ৮.৫ শতাংশে ফেরে। পার্থবাবুর বক্তব‍্য, সেই সময়ে রাজকোষ ঘাটতি লক্ষ্যমাত্রার প্রায় দ্বিগুণ ছাপিয়ে গিয়েছিল। এ বারও সেই পথে হেঁটে সাহসী পদক্ষেপ জরুরি ছিল।

অন্য বিষয়গুলি:

Budget 2020 Union Budget 2020 Nirmala Sitharaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy