সঞ্জয় মলহোত্র। —ফাইল চিত্র।
প্রশ্ন: ভোটের আগে, পরে বাজেটে আয়করে ছাড় মিলবে বলে মানুষ আশা করেছিলেন। যে টুকু সুরাহা মিলল, তা কি যথেষ্ট?
উত্তর: অবশ্যই। আয়করে যথেষ্ট সুরাহা দেওয়া হয়েছে। মনে রাখতে হবে, গত বছরের বাজেটে নতুন আয়কর ব্যবস্থায় (নিউ ট্যাক্স রেজিমে) ৩৭,৫০০ টাকা আয়কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। এ বছর বাজেটে ১৭,৫০০ টাকা। দুই মিলিয়ে দু’বছরে চাকুরিজীবীদের মাথা পিছু প্রায় ৫০ হাজার টাকা আয়করে ছাড় মিলেছে।
প্রশ্ন: যে টুকু সুরাহা, তা নতুন আয়কর ব্যবস্থায়। পুরনো আয়কর ব্যবস্থা (ওল্ড ট্যাক্স রেজিম) থেকে কি সবাইকে সরিয়ে আনতে চাইছেন?
উত্তর: সরকারের ঘোষিত নীতিই হল, নানা রকম কর ছাড়ের ব্যবস্থা থেকে সরে আসা। তাই পুরনো আয়কর ব্যবস্থায় কোনও সুরাহা দেওয়া হচ্ছে না। আমাদের চেষ্টা, আমাদের আশা, সবাই নতুন আয়কর ব্যবস্থায় যোগ দেবেন।
প্রশ্ন: এখনও পর্যন্ত সাড়া কেমন?
উত্তর: এখন আয়কর রিটার্ন ফাইল চলছে। ৩১ জুলাই যার শেষ দিন। প্রায় ৪.৫ কোটি আয়করদাতার মধ্যে ৭০ শতাংশ মানুষ নতুন আয়কর ব্যবস্থায় সরে এসেছেন।
প্রশ্ন: বাজেটের পরে অভিযোগ উঠেছে, মধ্যবিত্ত কিছুই পেল না। মানছেন?
উত্তর: বাজেটে যে কর্মসংস্থানে জোর দেওয়া হয়েছে, পরিকাঠামোয় খরচ হচ্ছে, তার সুবিধাও মধ্যবিত্ত পাবে। সরাসরি না হলেও পরোক্ষ ভাবে। অর্থনীতির হাল ভাল হলে, আর্থিক বৃদ্ধি হলে, মানুষের আয় বাড়বে। আমদানি শুল্কে রদবদলে ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন। সরাসরি আয়কর থেকে ছাড় মিলছেই। তবে শুধু আয়করে কতখানি ছাড় মিলল, তা না দেখে তার সঙ্গে সরকার কোথায় টাকা খরচ করছে, সেটাও মানুষের দেখা দরকার।
প্রশ্ন: অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মানুষের হাতে আরও নগদ টাকা তুলে দিলে বাজারে কেনাকাটা বাড়ত, তার ফলে লগ্নি আসত, রুটিরুজি তৈরি হত।
উত্তর: পরিকাঠামোয় বিপুল অর্থ খরচ হচ্ছে। সেখানে এক টাকা খরচ করলে অর্থনীতিতে অনেক গুণ প্রভাব পড়ে। সেখান থেকেই লগ্নি, রুটিরুজির সুযোগ তৈরি হবে।
প্রশ্ন: দেশে ধনী-গরিবের অসাম্য বেড়েছে বলে একাধিক রিপোর্ট জানিয়েছে। বাজেটে এর সমাধান কোথায়?
উত্তর: অনেক ভাবেই এই সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা হয়েছে। আমাদের কর ব্যবস্থা প্রগতিশীল বা প্রোগ্রেসিভ। আয় বাড়লে আয়করের হারও বাড়ে। ধনীদের থেকে বেশি হারে কর আদায় হয়। তার সঙ্গে পিএম-কিসান থেকে আবাস যোজনা, বিনা মূল্যে রেশনের মতো নানা কল্যাণকর প্রকল্প চলছে।
প্রশ্ন: এই আর্থিক অসাম্যের সমাধান করতে অনেকেই ধনীদের উপরে আরও কর চাপানোর দাবি তুলছেন। সেই সুযোগ রয়েছে?
উত্তর: ধনীদের উপরে যথেষ্ট কর চাপানো রয়েছে। যাঁদের আয় ২ কোটি টাকার উপরে, তাঁদের ৩৯ শতাংশ হারে আয়কর দিতে হয়। আগের মতো ৯৮ শতাংশ কর চাপিয়ে লাভ নেই। তাতে কর ফাঁকি বাড়ে। রাজস্ব আয় কমে।
প্রশ্ন: ধনী-গরিবের অসাম্য কমাতে জি-২০ গোষ্ঠীভুক্ত কিছু দেশ ধনীদের উপরে সম্পদ কর বসানোর প্রস্তাব আনছে। সরকারের কী মত?
উত্তর: এ দেশে সম্পদ কর আগে ছিল। তুলে দেওয়া হয়েছে। সফল হয়নি। খুব কম দেশে সম্পদ কর, উত্তরাধিকার রয়েছে। আমরা এমন কোনও প্রস্তাব করছি না।
প্রশ্ন: বিরোধীদের অভিযোগ, এই সরকার কর্পোরেট-বন্ধু। তাই কর্পোরেট করের হার আয়করের হারের থেকে কম। সরকার কর্পোরেট সংস্থার থেকে আমজনতার থেকে আদায় করা আয়কর থেকে বেশি আয় করে। এই অভিযোগ সত্যি?
উত্তর: এটা শুধু ভারতে নয়। অনেক দেশেই কর্পোরেট করের হার আয়করের হারের থেকে কম। কিন্তু কর্পোরেট সংস্থার উপরে শুধু ২৫% হারে কর চাপানো হচ্ছে, তা নয়। তার সঙ্গে শিল্পপতিদের ডিভিডেন্ডের উপরে ৩৯% হারে আয়কর দিতে হয়। শেয়ার বেচাকেনায় ১২.৫% হারে মূলধনী লাভকর দিতে হয়। তবে কর্পোরেট কর আয়করের মতো প্রগতিশীল নয়। কর্পোরেট সংস্থার আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে করের হার বাড়ে না। ব্যক্তিগত আয়করের ক্ষেত্রে আয় বাড়লে করের হার বেড়ে যায়। কারও বেতন ১০% বাড়লে এমন হতেই পারে, তাঁর উপরে করের বোঝা অনেক বেশি বেড়ে গেল। সেই কারণেই সরকারের মোট কর বাবদ আয়ের মধ্যে ৫৭ শতাংশ ব্যক্তিগত আয়কর থেকে আসে। বাকিটা কর্পোরেট কর থেকে।
প্রশ্ন: আয়কর আইনের আপাদমস্তক পর্যালোচনা হবে বলে বাজেটে ঘোষণা হয়েছে। এতে আমজনতার কী লাভ হবে?
উত্তর: আয়কর আইন সরল হলে আয়কর জমা দেওয়া সহজ হবে। আয়কর সংক্রান্ত আইনি বিবাদ কমবে। আগেও এই চেষ্টা হয়েছে। অনেকখানি সরলীকরণ হয়েছে। এখন আয়কর রিটার্ন অনলাইনে ফাইল হয়ে যায়। আরও সুযোগ রয়েছে উন্নতির।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy