প্রতীকী ছবি।
জ্বালানি আমদানির খরচ কমাতে এবং পরিবেশের সুরক্ষার জন্য প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়াতে চাইছে কেন্দ্র। জোর দেওয়া হচ্ছে যানবাহনে দূষণমুক্ত জ্বালানি (সিএনজি) এবং বাড়িতে রান্নার জন্য পাইপবাহিত গ্যাস (পিএনজি) সরবরাহে। কিন্তু অভিযোগ, বর্ধিত চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গত অন্তত এক বছর ধরে দেশে উৎপাদিত প্রাকৃতিক গ্যাসের জোগান বাড়ানো হচ্ছে না সরবরাহকারী সংস্থাগুলিকে। তার ফলে চাহিদা ও জোগানের ঘাটতি মেটাতে অনেক ক্ষেত্রে তাদের সেই আমদানিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের উপরেই নির্ভর করতে হচ্ছে। তাতে বাড়ছে গ্যাসের দাম আরও মাথা তোলার আশঙ্কা। কেন্দ্রের অবশ্য বক্তব্য, গত ছ’মাসের চাহিদার পরিসংখ্যান হাতে পেলেই এপ্রিল-সেপ্টেম্বরের জোগানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যদিও সেই পদক্ষেপে এত দেরি কেন, সে বিষয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
ভারতে উৎপাদিত জ্বালানির প্রায় ৮৫% আমদানি করতে হয়। তাতে যেমন বিদেশি মুদ্রার ভান্ডারে চাপ বাড়ে, তেমনই বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধি পেলে দেশেও বাড়ে পেট্রল-ডিজ়েল-সহ বিভিন্ন জ্বালানির দাম। এই অবস্থায় ২০১৪ সালে কেন্দ্রে মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পরে দেশে উৎপাদিত প্রাকৃতিক গ্যাসের জোগান বাজারে বাড়ানোর ব্যাপারে উদ্যোগী হয়। ২০১৮ সালে সিদ্ধান্ত হয়, সারা দেশকে ২০০টি ভৌগোলিক অঞ্চলে ভাগ করে প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানো হবে। যে গ্যাস পরিবেশবান্ধব তো বটেই, খরচও জীবাশ্ম জ্বালানির তুলনায় অনেক কম। নিলামের মাধ্যমে ওই সমস্ত অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন সংস্থাকে। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি জায়গায় গ্যাস সরবরাহ শুরুও হয়ে গিয়েছে।
সম্প্রতি সিএনজি এবং পিএনজির দাম অনেকটাই বাড়িয়েছে কেন্দ্র। দিল্লি, মুম্বইয়ের পাশাপাশি, এর প্রভাব পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি জায়গাতেও। সিএনজিতে ভর্তুকির দাবিতে সোমবার দিল্লিতে ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অটো, ট্যাক্সি এবং অ্যাপ ক্যাব চালকদের সংগঠনগুলি। অন্য দিকে, পিএনজির দাম কেন্দ্র প্রায় দ্বিগুণ বাড়ানোয় বণ্টন সংস্থাগুলিও দাম বাড়াচ্ছে। এই অবস্থায় সূত্রের খবর, সম্প্রতি প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা বাড়লেও, দেশীয় গ্যাস ক্ষেত্রগুলি থেকে বণ্টনকারী সংস্থাগুলির জন্য সরবরাহ বাড়ানোর ব্যাপারে গত এক বছর ধরে উদ্যোগী হয়নি কেন্দ্র।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বছরে দু’বার প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদার পরিসংখ্যান পরিমাপ হওয়ার কথা। সেই অনুসারে গ্যাস সরবরাহ করার কথা সংস্থাগুলিকে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত গত বছরের মার্চের চাহিদার ভিত্তিতেই তা করা হচ্ছে। অথচ এই এক বছরের মধ্যে গ্যাসের চাহিদা বেড়েছে। তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সরবরাহ করতে গিয়ে গ্যাসের একাংশ আমদানিও করতে হচ্ছে সংস্থাগুলিকে। তাতে খরচ অনেকটাই যাচ্ছে বেড়ে। তার বিরূপ প্রভাব পড়ছে গ্যাসের খুচরো দামে। ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, এ ভাবে চলতে থাকলে ক্রেতাদের পকেটে চাপ তো পড়বেই, সেই সঙ্গে প্রাকৃতিক গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর প্রধান উদ্দেশ্যই ব্যর্থ হবে। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, গ্যাস সরবরাহকারী সংস্থাগুলির দাবি খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে। তবে সে ক্ষেত্রে ছাঁটতে হতে পারে সার এবং বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের গ্যাস সরবরাহ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy