ঝড়ে লন্ডভন্ড হওয়ার পর এখনও বিস্তীর্ণ এলাকার বিদ্যুৎ। —নিজস্ব চিত্র
ঘূর্ণিঝড় সরে যাওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পরেও অন্ধকারে ডুবে রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকা। পাম্প চালাতে না-পারায় জলের জন্য হাহাকার বাড়ছে। শুক্রবার দিনভর রোদের তাপ যত চড়ছে, ততই বাঁধ ভাঙছে ধৈর্যের। ক্ষোভে ফেটে পড়তে পড়তে মানুষ তুলোধনা করছেন সিইএসসি, রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা-কে। প্রশ্ন তুলছেন, লকডাউনের এই কঠিন সময়ে আর কতটা শোচনীয় অবস্থা হলে টনক নড়বে সব পক্ষের? কোথায় নালিশ করলে ফিরবে আলো, জল? শুক্রবার কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন বহু মানুষ। অধিকাংশের প্রশ্ন, এত দুর্ভোগ দেখেও বিদ্যুৎ ফেরাতে কেন গয়ংগচ্ছ মনোভাব নিয়েই চলছে সিইএসসি? কলকাতার শহরতলি ও বিভিন্ন জেলায় তোপের মুখে পড়েছে বন্টন সংস্থাও।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার বিদ্যুতের সমস্যা নিয়ে কথা বলেছেন সিইএসসি-র প্রধান কর্তা সঞ্জীব গোয়েন্কার সঙ্গে। বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ও সকালে বণ্টন সংস্থার আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলার পরে সিইএসসি-র কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ কলকাতার সার্বিক বিদ্যুৎ পরিস্থিতি জানতে ডেকে পাঠান সিইএসসি কর্তাদের। আজ শনিবার, ফের সংস্থাটির কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে প্রশাসন। বিদ্যুৎমন্ত্রীর দাবি, দ্রুত কলকাতার পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সূত্র বলছে, জেলাস্তরে বিদ্যুতের দাবিতে ক্ষোভ-বিক্ষোভ সরকারি কর্তাদের কিছুটা গা-সওয়া হলেও, খোদ কলকাতায় এ নিয়ে মানুষের এমন ক্ষোভের আঁচ বহুদিন প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের গায়ে এসে পড়েনি। যদিও সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎ কর্তাদের একাংশের দাবি, ঝড়ে কলকাতা-সহ জেলাগুলিতে গাছ পড়ে, লাইন ছিঁড়ে, বিদ্যুৎ খুঁটি উপড়ে অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে, তাতে কারও পক্ষেই দ্রুত পরিষেবা চালু করা সম্ভব নয়। শহর কলকাতার বড় রাস্তা, অলিতে-গলিতে যে কয়েক হাজার গাছ পড়ে, সেগুলি দ্রুত কেটে সরানোর এত লোক কোথায়! এ নিয়ে কার্যত টানাপড়েনও শুরু হয়েছে সিইএসসি ও কলকাতা পুরসভার মধ্যে। তবে গ্রাহকদের বক্তব্য, সেটা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের ভাবার বিষয়। আপৎকালীন দ্রুততায় পরিষেবায় দেওয়ার দায় তো প্রশাসনেরই!
শোভনদেব জানান, ‘‘বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার সব রকম চেষ্টা চলছে। সিইএসসি-কেও বলা হয়েছে, শহরের মধ্যে ঝড়ে ভেঙে পড়া গাছ কেটে সরানোর জন্য বাইরে থেকে লোকের ব্যবস্থা করতে। শুধু কলকাতা পুরসভার উপরে নির্ভর করে থাকলে চলবে না।’’ আর পুর প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘শহরের বড় রাস্তায় পড়ে থাকা গাছ কাটা ও সরানোর কাজ করবে এনডিআরএফ বাহিনী। সিইএসসি-কে বলা হয়েছে যেখানে অবস্থা স্বাভাবিক, সেখানে শুক্র ও শনিবারের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করতে।’’
সিইএসসি-র অবশ্য দাবি, ৯০% এলাকাতেই তারা বিদ্যুৎ পরিষেবা চালু করেছে। কিন্তু শহরের মধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় এখনও গাছ পড়ে থাকায় ১০% জায়গা বিদ্যুৎহীন। কলকাতা পুরসভার সঙ্গে মিলে কাজ চলছে। বণ্টন সংস্থার এক শীর্ষ কর্তা জানান, ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলিতে বিভিন্ন প্রকল্প এলাকা থেকে বিদ্যুৎ কর্মীদের কাজে লাগানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তবে শনিবার সকালের মধ্যে কলকাতার সর্বত্র যে বিদ্যুৎ ফেরানো সম্ভব হবে, এমন কথা হলফ করে বলতে পারেননি সিইএসসি-র কর্তারা। আর বণ্টন সংস্থার কর্তারা জানিয়েছেন, রাজ্যে ৫৫৩টি সাবস্টেশনের মধ্যে ২৩৫টি আমপানের রোষে ক্ষতির মুখে পড়েছিল। তার মধ্যে ১৪৯টি সারানো গিয়েছে। বিদ্যুৎ কর্মীদের নিয়ে ৯৭৬টি দল জেলাগুলিতে কাজ করছে। অসংখ্য খুঁটি এখনও বিভিন্ন জেলায় পড়ে। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হতে কয়েক দিন সময় লাগবেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy