নাছোড়: হাঁটু জলে আটকে পড়ে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা। বৃহস্পতিবার লেকটাউনে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
দক্ষিণ শহরতলির বাসিন্দা মধ্যবয়সি মহিলা বৃহস্পতিবার বিকেলে হন্যে হয়ে প্রতিবেশীদের মোবাইল ফোন চালু রয়েছে কি না খোঁজ করছিলেন। ঘূর্ণিঝড় আমপানের পরে ভিন্ রাজ্যে থাকা ছেলে-মেয়ের কাছে তাঁর ভাল থাকার খবরটুকু পৌঁছে দিতে চান। কিন্তু তাঁর মতো পড়শিদের ফোনেও যে সিগন্যাল নেই! শেষে ভিন্ রাজ্যে কর্মরত মেয়ের কলকাতার অফিসের সহকর্মী তাঁর খোঁজ নিতে হাজির হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি ফিরল।
ইন্টারনেট বিভ্রাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ভিডিয়ো বৈঠকে যোগ দিতে পারেননি পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পার্থ ঘোষ। জানালেন, ঝড়ে জেলায় বিদ্যুৎ, মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে।
বুধবার ধেয়ে আসা আমপানে এ ভাবেই বিপর্যস্ত হয়েছে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকার টেলিকম, বিশেষ করে মোবাইল পরিষেবা। দুর্ভোগের ছবি এতটুকু ফিকে হয়নি ঝড় সরে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টা পরেও। জরুরি দরকারে একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। হোঁচট খেয়েছে বাড়ি থেকে কাজের প্রক্রিয়া। এমনকি বসে গিয়েছে ল্যান্ডলাইনও।
মোবাইল সঙ্কট
• বৃহস্পতিবারও ব্যাহত টেলিকম, বিশেষত মোবাইল পরিষেবা।
• নেট সংযোগ দূরের কথা, কথাই বলা যায়নি অনেক ক্ষেত্রে। বহু জায়গায় উধাও ছিল সিগন্যাল।
• কলকাতায় টেলিকম সংস্থাগুলির মূল পরিকঠামো বিপর্যস্ত হওয়ায়, দক্ষিণবঙ্গ ও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গাতেও পরিষেবায় ধাক্কা লাগে।
• লকডাউনে বাড়ি থেকে কাজ করতে গিয়ে চরম নাকাল বহু কর্মী।
• বিদ্যুৎ সংযোগ না-থাকার নালিশ জানাতে পারেননি অনেকে।
• পানীয় জল বা ওষুধ আনানোর মতো জরুরি প্রয়োজনেও ভুগতে হয়েছে।
• আত্মীয়-পরিচিতের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় উদ্বেগ বাড়ে।
‘টার্ম সেল’* বলছে
• উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়ার প্রায় ১০% বিটিএস (মোবাইল সংযোগ সরবরাহের পরিকাঠামো বা টাওয়ার) অকেজো।
• কলকাতায় অকেজো বিটিএসের সংখ্যা
আরও বেশি।
• অন্য টেলিকম সংস্থার পরিকাঠামো ব্যবহারের (আইসিআর) ব্যবস্থা আজ-কালের মধ্যেই চালুর আশ্বাস দিয়েছে সংস্থাগুলি।
*কেন্দ্রীয় টেলিকম দফতরের অধীন সংস্থা
টেলি শিল্পের যুক্তি
• টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ও টাওয়ারগুলি বিদ্যুতে চলে।
• বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হলে ব্যাটারি চালু হয়।
• কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পরে ব্যাটারির চার্জ শেষ হয়।
• শহরে দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ বিভ্রাট তেমন হয় না বলে কিছু বড় এক্সচেঞ্জ ছাড়া ডিজেল জেনারেটর নেই।
• গ্রামীণ, মফফ্সল বা ছোট শহরে সাধারণত সেই ব্যবস্থা থাকে।
• আমপানের দাপটে বিস্তীর্ণ এলাকা দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
• বহু জায়গায় ব্যাটারিও বসে গিয়েছে এক সময়।
• রাস্তা বন্ধের জন্য ডিজেল সহজে পৌঁছনো যাচ্ছে না।
• কর্মীরা মেরামতির কাজে যেতে পারছেন না।
• কিছু টাওয়ার ভেঙেছে।
• তবুও যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে কাজ করে অনেক জায়গায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।
সমস্যার কথা মানলেও টেলিকম সংস্থাগুলির দাবি, সমস্যার মূল কারণ বিদ্যুৎ বিভ্রাট। টেলিকম এক্সচেঞ্জ বা টাওয়ার, সবই চলে বিদ্যুতে। ব্যাটারির বিকল্প বন্দোবস্ত থাকলেও, বহু জায়গায় দীর্ঘক্ষণ বিদ্যুৎ না-থাকায় ব্যাটারিও বসে যাচ্ছে। ডিজেল ব্যবস্থাও আট ঘণ্টার পর বন্ধ রাখতে হয়। দ্রুত সংযোগ চালু করতে বিদ্যুৎ সংস্থার সঙ্গে তারা যোগাযোগ রাখছে।
বিএসএনএল সূত্রে খবর, যেমন বারুইপুর এক্সচেঞ্জ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় তার উপর নির্ভরশীল ডায়মন্ডহারবার, কাকদ্বীপ, কুলপি-সহ সংলগ্ন এলাকার এক্সচেঞ্জও বসে গিয়েছে। কলকাতায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের প্রভাব ছড়িয়েছে রাজ্যের অন্য অংশের টেলি-পরিষেবাতেও।
টেলিকম দফতরের (ডট) অধীন টার্ম সেল কলকাতায় ২৪ ঘণ্টার জন্য কন্ট্রোল রুম খুলেছে। টার্ম সেল ও শিল্প সূত্রের খবর, দুর্যোগে একই সার্কলের মধ্যে অন্য সংস্থার পরিকাঠামো ব্যবহারে সায় দিয়েছে ডট। আজ-কালের মধ্যেই তা চালুর আশা। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে বিদ্যুৎ সংযোগ দ্রুত শুরু জরুরি, দাবি তাদের। নাকাল গ্রাহকের একটাই আর্জি, দ্রুত চালু হোক লকডাউনে যোগাযোগের একমাত্র ভরসা— ফোন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy